গ্রিন টি : শরীর সতেজ ও উৎফুল্ল রাখে
পৃথিবীতে যত পানীয় আছে, এর মধ্যে পানির পরই চায়ের স্থান। গ্রিক দেবী থিয়ারের নাম অনুসারে এর নাম হয় ‘টি’। চা মূলত : ক্যাসেলিয়া সিনেনসিল উদ্ভিদের পাতা। চায়ের উৎপত্তিস্থল চীন দেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে। চা গাছ থেকে পাতা সংগ্রহ করতে যথেষ্ট নৈপুণ্য ও দক্ষতা অর্জন করতে হয়। জানা যায়, ১৬৫০ খৃষ্টাব্দে চীনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। এর অনেক পরে ষোড়শ শতাব্দীতে পর্তুগিজ বণিকদের পরিচয় ঘটে চায়ের সঙ্গে। এরপর সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটেনে চা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। ইংরেজদের হাত ধরে ভারতীয় উপমহাদেশে চা প্রবেশ করলেও বর্তমানে পৃথিবীর প্রধান উৎপাদনকারী দেশ হিসাবে ভারত স্বীকৃতি লাভ করেছে। আমাদের দেশে সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম, পঞ্চগড় চা চাষে বেশ সাফল্য দেখিয়ে যাচ্ছে। টি বা চা হয় তিন ধরনের। গ্রিন টি, উলং টি ও ব্ল্যাক টি। ইদানীং বাংলাদেশে গ্রিন টি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শহর ছাড়াও গ্রাম-গঞ্জের মানুষ এর কদর বুঝতে শিখেছে। এর কারণ হলো, গ্রিন টি’র বহুবিধ পুষ্টিগুণ। সতেজ সবুজ পাতা রোদে শুকিয়ে তাওয়ায় সেঁকে গ্রিন টি তৈরি করা হয়। এর রং হয় হালকা হলদে সবুজ। এর ভেতর পলিফেনল ফ্লাভোনয়েড নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান। এতে ভিটামিন সি ও ভিটামিন ই পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। যা চা তৈরির পরও অক্ষুণ্ন থাকে। ফলে দেহের ওপর এর গুণাগুণ বেশ কার্যকর হতে দেখা যায়।
গ্রিন টি শরীরকে সারা দিন সতেজ ও উৎফুল্ল রাখে। এটি ক্যানসাররোধী ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। সারা দিনে চার কাপ পরিমাণ গ্রিন টি পান করলে হৃদরোগে মৃত্যু ঝুঁকি কমে ৬৮ শতাংশ। নিয়মিত গ্রিন টি পান করলে শরীরের মেদ কোষে গ্লুকোজ ঢুকতে পারে না। ফলে ডায়াবেটিস যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকে, তেমনি ওজন কমতেও সহায়তা করে। আবার গ্রিন টি পানে কোলেস্টরলের মাত্রা কম থাকতেও দেখা যায়। নিয়মিত গ্রিন টি সেবনকারীদের দন্তক্ষয় রোগ হওয়ার প্রবণতা অনেক কমে যায়। এটা দেহের হজম ক্রিয়াকে বাড়িয়ে অতিরিক্ত মেদ কমাতে সাহায্য করে। এই চায়ের সঙ্গে দুধ মেশানো উচিত নয়। এতে এর স্বাদ নষ্ট হয়। এক কাপ কফির তুলনায় এক কাপ গ্রিন টি বেশ স্বাস্থ্যকর। এতে ক্যাফেইন কম থাকে বলেই শরীর সতেজ থাকে। এর শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ধমনিতে ক্ষতিকর উপাদান জমা হওয়ায় গতি কমিয়ে দেয়। সুতরাং অন্য পানীয়ের তুলনায় গ্রিন টি অনেক বেশি স্বাস্থ্যকর।
নিয়মিত দই খান
দই সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। বিশেষ করে খাবারের শেষ পাতে দু’চামচ দই শরীরকে রাখে সতেজ সুস্থ। দইয়ের ল্যাক্টোব্যাসিলাস ভালো ব্যাকটেরিয়াকে উদ্দীপ্ত করে। দুধের প্রোটিনের তুলনায় দইয়ের প্রোটিন সহজপ্রাচ্য। তাই শিশু থেকে বৃদ্ধ এটি সব বয়সেই উপযোগী। দইয়ের ল্যাক্টোব্যাসিলাস ব্যাকটেরিয়াকে উদ্দীপ্ত করে বলেই পেট পরিষ্কার থাকে। এর ক্যালসিয়াম কোলনের কোষগুলোর অস্বাভাবিক বৃদ্ধি রোধ করে এবং অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়া নিঃসরণ করে। কোলাইটিস রোগে এটি ওষুধ হিসাবে কাজ করে। এর ব্যাকটেরিয়া শরীরে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স শোষণে সাহায্য করে এবং এটি ভিটামিন বি-১২-এর ঘাটতি পূরণ করে। যারা আমিষভোজী তারা আমিষের মাধ্যমে এ ভিটামিন প্রাপ্ত হন। কিন্তু যারা নিরামিষভোজী তারা দইয়ের মাধ্যমেই ভিটামিন বি-১২ পেতে পারেন। দইয়ের মধ্যে যে প্রোটিন আছে তা প্রাণিজ প্রোটিন এবং তা প্রথম শ্রেণির প্রোটিন। এতে আছে অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো অ্যাসিড। যে কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক খেলে খাদ্য তালিকায় দই রাখা উচিত। দুধ খাওয়ার এক ঘণ্টা পর মাত্র ৩২ শতাংশ হজম হয় আর দইয়ের ক্ষেত্রে প্রায় ৯০ শতাংশ হজম হয়। দই রক্তের কোলেস্টরেল কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, পেপসিন ও রেনিন নিঃসরণ করে দই পেটের গ্যাস কমায়। ডায়রিয়া ও কোষ্ঠবদ্ধতার সমস্যা দূর করে। ইনসমনিয়া সারাতেও দই উপকারী। সালাদ ও স্যান্ডউইচে মেয়নিজের পরিবর্তে দই ব্যবহার করতে পারেন। শরীর সুস্থ রাখার জন্য খেতে পারেন দইয়ের ঘোল, লাচ্ছি ও রায়তা। প্রতিদিন খাদ্য তালিকায় দই রাখলে জন্ডিস ও হেপাটাইটিস প্রতিরোধ করা যায়। প্রতি ১০০ গ্রাম দইয়ে আছে ক্যালসিয়াম ১৫০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন এ ১০২ আইইউ, প্রোটিন ৩ গ্রাম, চর্বি ৪ গ্রাম, ক্যালরি ৬০। শরীর সুস্থ রাখতে খাদ্য তালিকায় দই থাকলে ক্যালসিয়াম ও প্রোটিনের ঘাটতি সহজেই দূর করা সম্ভব। দুধ হজম না হলে দই খেতে পারেন। রমজানে ইফতারিতে প্রতিদিনই রায়তা রাখুন। তাহলে ভাজা খাবার খেয়েও সুস্থ থাকবেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)