কলারোয়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তার রোগী ধরার ফাঁদ
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কলারোয়া হাসপাতালকে তার মালিকানাধীন ক্লিনিকের রোগী ধরার ফাঁদে পরিণত করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাহবুবর রহমান সাণ্টুর বাড়ি উপজেলার সোনাবাড়িয়া গ্রামে। কলারোয়া হাসপাতালের সামনে তার মালিকানাধীন ”আরোগ্য সদন” নামে প্রাইভেট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগায়ে নিজস্ব ক্লিনিকে নিয়ে ব্যক্তিগত ব্যবসা প্রসারে তিনি সর্বদা ব্যাস্ত থাকেন।
হাসপাতালে ভর্তি রোগীর চিকিৎসার দায়িত্ব আবাসিক মেডিকেল অফিসারের। সেই আবাসিক মেডিকেল অফিসার উপস্থিত থাকার পরেও ডাঃ মাহবুবুর রহমান রাউন্ডের পরে এসে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা লিখে রিপোর্টের জন্য তার ক্লিনিকে যেতে পরামর্শ দেন। হাসপাতাল ল্যাবে পরীক্ষার সুযোগ রয়েছে-এমন রোগীর পরীক্ষার জন্যও আরোগ্য সদনে পাঠানো হয়।
এছাড়া ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে অহেতুক পরীক্ষা করতে পাঠানো হয় বলে হাসপাতালের একটি সুত্র জানায়। গত ৩ আগষ্ট হাসপাতালে ভর্তি রোগী ঝাপাঘাট গ্রামের মৃত জমাত আলীর স্ত্রী সাবিনা খাতুনের কয়েকটি টেষ্ট লিখে দিয়ে পরীক্ষার জন্য তার ডায়গনস্টিক সেন্টারে যেতে বলা হয়। এভাবে শতশত রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা তার ক্লিনিকে ভাগায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
এছাড়া হাসপাতালে আগত বহু গরীব অসহায় রোগীকে হাসপাতাল থেকে ভাগায়ে তার ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। কলারোয়া হাসপাতালে সিজারিয়ান অপারেশনের অত্যাধুনিক সুযোগ সুবিধা, ডাক্তার, নার্স সবই রয়েছে। কিন্তু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ প্রাইভেট ক্লিনিকের সংগে সম্পৃক্ত ডাক্তারদের অপতৎপরতায় ৯০ শতাংশ গর্ভবতী মায়েরা প্রাইভেট ক্লিনিকে সিজারিয়ান অপারেশন করান বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়।
এভাবে কলারোয়া হাসপাতাল স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার রোগী ধরার ফাঁদে পরিণত হয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায় হাসপাতালে কোন অপারেশানের রোগী না থাকলেও স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানে অনেক রোগী আছে।
এছাড়া করোনাকালীন সময়ে স্বেচ্ছাসেবী ও আপ্যায়ন বাবদ ৯ লাখ টাকা বরাদ্ধ আসে। এসময় স্বেচ্ছাসেবী হিসাবে ৬ জন আনসার সদস্য রুটিন মাফিক ডিউটি করলেও কাগজ কলমে ৯ জনের ডিউটি দেখানো হয়। প্রত্যেক আনসারের জন্য ৫৮ হাজার ২’শ টাকা উত্তোলন দেখানো হলেও তাদের হাতে ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে আনসার সদস্য মুরারীকাটি গ্রামের মৃত আ: রহমানের ছেলে মোহাম্মাদ আলী জানান।
প্রতি বছরে হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতা বাবদ ৩ লক্ষ টাকা বরাদ্দ থাকলেও গত ২ মাস যাবৎ কোন পরিচ্ছন্নতার কাজই করা হয়নি বলে জানা যায়। হাসপাতালের একমাত্র এম্বুলেন্সটি জরুরী রোগী পরিবহনের চেয়ে কর্মকর্তা নিজের ঘোরাফেরার কাজে বেশী ব্যবহৃত করেন বলে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়।
এদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অফিসে হাজিরা দিয়ে কখনো ফেসবুক নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। কখনো বের হয়ে নিজস্ব ক্লিনিকে রোগী নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিধি লংঘন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়াই হাসপাতালের অবকাঠামোগত পরিবর্তনের কাজ চলছে সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়।
এই কর্মকর্তা যোগদানের পর থেকে অসৌজন্যমুলক আচারনের কারনে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের সকল কর্মীরা স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকান্ড থেকে বিরত আছেন বলে জানা যায়।
এদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তার ব্যক্তিগত ক্লিনিকে রোগী পাঠানোর বিষয়টি এড়িয়ে যেয়ে সঠিক ভাবে আনসার সদস্যের টাকা প্রদান ও অবকাঠামো পরিবর্তন হচ্ছে বলে জানান।
এব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা: মনজুরুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, এর পূর্বেও আমার নিকট অনেক অভিেেযাগ এসেছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)