করোনায় ইন্সপেক্টর রাজীবের অকাল প্রয়াণ
‘আমি বাকরুদ্ধ, কেন কাঁদছি? রাজিব আমার কে হয়?’ : আবেগঘন ওসি মুনীর
১৬ এপ্রিল ২০২১ রোজ শুক্রবার সকাল ৯টায় সহকর্মী এসআই ইসরাফিলের মোবাইলে ঘুম ভাঙ্গে। ওপাশে হাউমাউ করে কাঁদছে ইসরাফিল- “স্যার রাজিব স্যার আর নেই।”
একটু পরেই কলারোয়া থানা জামে মসজিদের সম্মানিত পেশ ইমাম এবং খতিব জনাব আসাদুজ্জামান ফারুকীর ফোন—একই সংবাদ।
আমি বাকরুদ্ধ, আমার চোখের কোণে অশ্রু। আমি কাঁদছি। আমি কেন কাঁদছি? রাজিব আমার কে হয়?
চাকরি জীবনের একটা পর্যায়ে এসে একটু নিরিবিলি পোস্টিং হিসেবে বেছে নিয়েছিলাম পিটিসি খুলনা কে। বছর দেড়েক সেখানে থাকার পর ২৬ মে ২০১৯ তারিখ দুপুরের পর ডিআইজি খুলনা রেঞ্জ ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন স্যারের একটা টেলিফোনে আমার নিরিবিলি জীবনের অবসান ঘটে। আকস্মিক এবং ভীষণ অপ্রত্যাশিতভাবে আমার পোস্টিং হয় সাতক্ষীরা জেলায়। কিছুটা উদ্বিগ্ন এবং বিষন্ন অবস্থায় ২৮মে ২০১৯ তারিখে রাত্রি তে যোগদান করি কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ হিসেবে।
২৮মে রাতে সাতক্ষীরা শহর থেকে কলারোয়ায় যাওয়ার পথে আকস্মিকভাবেই আমাকে বহন করা গাড়িটি দুর্ঘটনায় পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে চারিদিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে। অল্প সময়ের মধ্যে উদ্বিগ্ন ইন্সপেক্টর তদন্ত রাজিব হোসেন এর নেতৃত্বে কলারোয়া থানার একদল অফিসার দুর্ঘটনাস্থলে ছুটে এসে আমার পাশে দাঁড়ায়। ওদের আন্তরিকতা এবং দায়িত্বশীলতা আমাকে স্বস্তি এবং নির্ভরতা দেয়। সেই আমার সাথে রাজিবের প্রথম দেখা।
ভিন্নধর্মী সেবামুখী পুলিশি ব্যবস্থা আমরা চালু করেছিলাম তার অন্যতম সহযোদ্ধা রাজীব
রাজীবের চলে যাওয়ার সংবাদ পাওয়ার পর সারাটা দিন আমার কেটেছে ভীষণ বিমর্ষ অবস্থায়। আমার পরিবারের সদস্যদেরও একই অবস্থা। সুদীর্ঘ কর্মজীবনের দীর্ঘ পথচলায় বহু সহকর্মীর মধ্যে সদাহাস্যোজ্জ্বল রাজীবকে ভোলা যাবে না কখনো। কলারোয়া থানা সাতক্ষীরাতে আমাদের কর্মকালে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গনের নির্দেশনা বাস্তবায়নে আমাদের যে প্রয়াস তার অন্যতম সহযোগী রাজিব। পরিবর্তনের যে বার্তা নিয়ে আমি কলারোয়াতে গিয়েছিলাম তা প্রতিপালনে সবার আগে এগিয়ে এসেছিল রাজিব। সকল অফিসার ফোর্সের মনোজগৎ কে বদলে দিয়ে যে ভিন্নধর্মী সেবামুখী পুলিশি ব্যবস্থা আমরা চালু করেছিলাম তার অন্যতম সহযোদ্ধা রাজীব। ভঙ্গুর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য যে সততা এবং মানসিক দৃঢ়তা প্রয়োজন তার সবকিছুই রাজিব এর মধ্যে আমি পেয়েছি।
অনেকে কেঁদেছে। দোয়া করেছে বহু মানুষ
কলারোয়া থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা উন্নয়নের পাশাপাশি সামাজিক বহু কাজে আমার সহযোদ্ধা রাজীব এর ছিল সক্রিয় পদচারণা। সদালাপী সজ্জন সদাহাস্যোজ্জ্বল রাজিব বহুভাবে ঋণী করেছে আমাকে। ওর মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর বহু মানুষ কলারোয়া থেকে ফোন করে আমাকে সমবেদনা জানিয়েছেন। অনেকে কেঁদেছে। দোয়া করেছে বহু মানুষ।
পরিবারের সাথে থাকার জন্য বদলি হয়ে রাজিব মাদারীপুর যায়। সেখান থেকে ফরিদপুর ডিএসবি ছিল ওর শেষ কর্মস্থল। গত মাসে সপরিবারে এসেছিল কক্সবাজার বেড়াতে। ভাবি বাচ্চাদের সাথে আমার অফিস কক্ষে কেটেছে কিছুটা সময়। সেসব আজ স্মৃতি। কক্সবাজার থেকে ফিরে যাওয়ার পরেও কথা হয়েছে একবার।
সদাহাস্যোজ্জ্বল রাজীবকে ভোলা যাবে না কখনো
অত্যন্ত দক্ষ কর্মঠ এবং চৌকস একজন কর্মকর্তা ছিলেন আমাদের রাজিব। রাজীবের অকাল প্রয়াণে বাংলাদেশ পুলিশ হারাল তার এক মেধাবী কর্মকর্তাকে। আমরা হারালাম আমাদের এক প্রিয় যোগ্য সহকর্মীকে। সন্তানেরা হারালো তাদের প্রিয় বাবাকে। সদাহাস্যোজ্জ্বল রাজীবকে ভোলা যাবে না কখনো।
বিষন্নতায় ভরা মন নিয়ে স্রষ্টার কাছে আমাদের প্রার্থনা–হে আমাদের রব বিচার দিনের মালিক ছোট ভাই রাজিব হোসেন কে আপনি মাফ করে দিন। ওর মাসুম তিনটি বাচ্চা সহ পরিবারটিকে আপনি হেফাজত করুন আপনার রহমতের ছায়া দিয়ে। আপনিতো রহমানুর রহিম আল্লাহ।
লেখকঃ
শেখ মুনীর-উল-গীয়াস,
অফিসার ইনচার্জ (ওসি), কক্সবাজার সদর মডেল থানা।
সাবেক অফিসার ইনচার্জ (ওসি), কলারোয়া থানা, সাতক্ষীরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)