কলারোয়ায় ভগ্নিপতির ছোড়া পেট্রোল-আগুনে ঘুমন্ত শ্যালকসহ অগ্নিদগ্ধ-৩, আটক-১
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় রাতের আধারে ঘরের মধ্যে ভগ্নিপতির দেয়া পেট্রোলের আগুনে দগ্ধ হয়েছেন শ্যালক, তার স্ত্রী ও শিশু কন্যা। তাদের মধ্যে শ্যালক কাদের হোসেনের অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার চন্দনপুর ইউনিয়নের ৩নং নম্বর ওয়ার্ড চন্দনপুর গ্রামের ফুটবল মাঠের পাশে নুরু গাজীর বাড়িতে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ‘রবিবার (২৮ মে) ভোররাত আনুমানিক সাড়ে ৩টার দিকে ওই গ্রামের আহাদ আলীর পুত্র কাদের হোসেনের ঘরের দরজায় বাইরে তালাবদ্ধ করে জানালা দিয়ে কে বা কারা পেট্রোল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘুমন্ত অবস্থায় তাৎক্ষনিক আগুনে দগ্ধ হয়ে দরজা বাইরে থেকে তালাবদ্ধ থাকায় তারা ঘর থেকে বের হতে পারেনি। সেসময় আগুনে পুড়ে গুরুতর আহত হন কাদের হোসেন (২৭), তার স্ত্রী শারমিন (২৪) ও কন্যা ফাতেমা (৭)। তাদের চিৎকারে আশপাশের ঘুমন্ত প্রতিবেশিরা উঠে এসে জানালার রড ও তালা ভেঙ্গে তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় ক্লিনিকে ও পরে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আশংকাজনক অবস্থায় কাদের হোসেনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শেখ হাসিনা বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে।’
তিনি আরো জানান, ‘আহত কাদেরের সঙ্গে তার বোনের স্বামী বেনাপোলের সবুজ হোসেনের কয়েকদিন ধরে ঝামেলা চলছিলো। এমনকি মোবাইল ফোনে কাদেরকে হুমকি-ধামকিও দেয় সবুজ। বিষয়টি কাদের অতিসম্প্রতি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকেও অবহিত করেছিলেন। আজকালের মধ্যে একটি শালিস-বৈঠকের কথা ছিলো। ভুক্তভোগি পরিবার ও প্রতিবেশিরা ধারণা করছেন ভগ্নিপতি সবুজ হোসেন দরজায় তালা মেরে জানালা দিয়ে পেট্রোল ছুড়ে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে।’
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ডালিম হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনায় অভিযুক্ত সবুজের সহযোগি কাঁদপুর গ্রামের মান্নান বিহারীর পুত্র সোহাগ হোসেন (২০)কে পুলিশ আটক করেছে। সোহাগ ও সবুজ পরষ্পর বন্ধু। তারা এসময় মামাতো-ফুফাতো ভাইরাভাই ছিলো।’
আটক সোহাগের বরাত দিয়ে স্থানীয়রা জানান, ‘শনিবার সন্ধ্যায় সোহাগকে সাথে নিয়ে চান্দুড়িয়া বাজার থেকে পেট্রোল ও তালা কিনেছিলো অভিযুক্ত ভগ্নিপতি সবুজ।’
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘সংবাদ পেয়ে সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। আহত কাদেরের বোন সুফিয়া বাদী হয়ে মামলা করেছেন। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সোহাগকে আটক করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত সবুজকে আটকের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে, কাদেরের হোসেনের বোন জানান, ‘তার স্বামী সবুজ তাকে নির্যাতন করে। এজন্য সে স্বামীর ঘর করতে চান না। এসব নিয়ে তাদের ঝামেলা চলছিলো।’
স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, ‘বউ শ্বশুর বাড়িতে আসতে না চাওয়ায় গভীর রাতে ঘরে পেট্রোল ঢেলে তালা দিয়ে আগুন ধরিয়ে পালিয়েছে স্বামী সবুজ।
স্ত্রী সুফিয়া খাতুন স্বামীর বাড়িতে আসতে রাজি হয়নি অন্যদিকে স্ত্রীর বড় ভাই কাদের গাজী ফোনে বোনকে আর শ্বশুর বাড়ি পাঠাবে না বলায় গভীর রাতে শশুর বাড়ি গিয়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে ঘরে নতুন তালা মেরে পালিয়েছে সবুজ হোসেন (৩২) নামের ওই যুবক। এ ঘটনায় সবুজ হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের বড় ভাই কাদের গাজী, তার স্ত্রী শারমিন সুলতানা ও তাদের ৭ বছর বয়সী মেয়ে ফাতেমা খাতুনের শরীরের প্রায় ৬৫ শতাংশ পুড়ে গেছে। অভিযুক্ত ভগ্নিপতি সবুজ হোসেন যশোরের শার্শা উপজেলার নারায়ণপুর পোড়াবাড়ি এলাকার আব্দুল বারীর ছেলে। সে পেশায় আফিল জুট মিলের শ্রমিক। এ ঘটনায় সবুজ হোসেনকে রাতে চন্দনপুরে আশ্রয় দানকারী আব্দুল মান্নান বিহারী ছেলে সোহাগ হোসেনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে থানা হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে কলারোয়া থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুস্তাফিজুর রহমান।’
প্রত্যক্ষদর্শী প্রতিবেশী ওহাব ফারুক সেন্টুর স্ত্রী খাদিজা খাতুন বলেন, ‘সবুজ হোসান ও তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের প্রায় দেড় বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। সন্তান হওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত তাদের ভিতরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ হতো। সবুজ হোসেন তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালালো। একপর্যায়ে সবুজের সাথে সংসার করতে না চাওয়ায় সবুজ হোসেন এমন জঘন্য কাজ করেছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয়রা বলেন, ‘সবুজ হোসেন রাতে কাঁদপুর গ্রামে আব্দুল মান্নান বিহারীর ছেলে সোহাগ হোসেন নামের এক ভ্যান চালকের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল। সোহাগ হোসেন ও সবুজ হোসেন দু’জনে আগে আফিল জুট মিলে একসাথে কাজ করতো। সেই সুবাদে তাদের সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল।’
চন্দনপুরের স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এমন নৃশংস অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। ৩জন মানুষ রাতে টিন ও কাঠ দিয়ে বানানো ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। সেই ঘরে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে ওই সবুজ হোসেন। ঘরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। বাচ্চাসহ তারা রাত ৩টার দিকে চিৎকার করছিলো তখন এলাকার মানুষজন ছুটে গিয়ে তালা ভাঙতে পারছিলো না। অনেক চেষ্টার পর তাদেরকে উদ্ধার করে শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হওয়ায় ঢাকা হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। তবে তাদের ৩জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। তাদের হাত পায়ের চামড়া খুলে খুলে পড়েছে ঘটনাস্থলে।’
সবুজ হোসেন ও নৃশংস কর্মকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি ও প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করেছে স্থানীয়রা।
ছবিতে..
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)