মণিরামপুরে চাল পাওয়া অনিশ্চিত ১০ হাজার কার্ডধারীর
অনলাইন তালিকা প্রস্তুত না হওয়ায় যশোরের মণিরামপুরে চলতি সেপ্টেম্বর মাসের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১৫ টাকা কেজির ১০ হাজার কার্ডধারীর ৩০ কেজি করে চাল পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা খাদ্য দপ্তরের সমন্বয়হীনতার কারণে দুস্থ এসব কার্ডধারীরা চাল পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। তবে এ ব্যাপারে বিভিন্ন ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক পরস্পরকে দায়ী করছেন।
ইউপি চেয়ারম্যানদের দাবি- আমরা তালিকা সংশোধন করে খাদ্য দপ্তরে জমা দিয়েছি। তারা তালিকা অনলাইনে আপলোড না দেওয়ায় কার্ড তৈরি হচ্ছে না। ফলে উপকারভোগীরা চাল তুলতে পারছেন না।
আর খাদ্য দপ্তরের দাবি- উপজেলা মাসিক সভার সিদ্ধান্ত মেনে চেয়ারম্যানরা তালিকা প্রস্তুত না করে ঢালাওভাবে কার্ড পরিবর্তন করায় যাচাইবাছাই ছাড়া তালিকা আপলোড করা সম্ভব হচ্ছে না।
উপজেলা খাদ্য দপ্তরের তথ্যমতে- উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ২৩ হাজার ৪১৯জন উপকারভোগী রয়েছেন। খাদ্য অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মৃত, সচ্ছল ও প্রবাসী কার্ডধারীদের নাম বাদ দিয়ে নতুন নাম যুক্ত করে জুন থেকে তালিকা অনলাইন করার কাজ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে ১৯ হাজারের বেশি কার্ড অনলাইনে আপলোড করা হয়েছে। তবে উপজেলা খাদ্য দপ্তরের তথ্যের সাথে বাস্তবের মিল পাওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে অন্য ইউনিয়নে তালিকা অনলাইনের কাজ চলমান থাকলেও কাশিমনগর, শ্যামকুড় ও দুর্বাডাঙা ইউনিয়নের সংশোধীত কোনো তালিকা উপজেলা কমিটি অনুমোদন দেয়নি। ফলে এ তিন ইউনিয়নের ৪ হাজার ৩৭২ জন উপকারভোগীর কেউ সেপ্টেম্বর মাসের চাল তুলতে পারছেন না।
এছাড়া হরিদাসকাটি ইউনিয়নের কিছু তালিকা অনলাইন হওয়ায় পরিবেশকরা বিতরণের জন্য চাল তুললেও ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর কবীর লিটনের অসহযোগীতার কারণে চাল বিতরণ এখনো শুরু হয়নি বলে অভিযোগ পরিবেশকদের। ফলে ওই ইউনিয়নের ১ হাজার ৩৩৬ জনের কেউ চাল তুলতে পারেননি।
এদিকে সংশোধীত তালিকা আপলোডের কাজ শেষের দিতে হলেও রোহিতা, ভোজগাতী ও মণিরামপুর সদর ইউনিয়ের কোন কার্ডধারী এ মাসের চাল পাননি বলে জানা গেছে।
এছাড়া বাকি ইউনিয়নগুলোতে মোট কার্ডের অর্ধেক লোক চাল পেয়েছেন। বাদ পড়া নামের স্থানে নতুন নাম যুক্ত করে তালিকা অনলাইন না হওয়ায় এসব ইউনিয়নের অর্ধেক লোক চাল তুলতে পারছেন না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে- সরকারি নির্দেশনায় মৃত, সচ্ছল ও প্রবাসীদের নাম বাদ দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু মণিরামপুর উপজেলা কমিটির সভায় তালিকার ১০ শতাংশ সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। অনেক চেয়ারম্যান সভার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে বিরোধীদের হিসেব কষে নিজেদের মতো তালিকা সংশোধন করে খাদ্য দপ্তরে জমা দিয়েছেন। এ কারণে অনেক দুস্থ লোক রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছেন। ফলে রোহিতা ও কাশিমনগর ইউনিয়নের বাদ পড়া কার্ডধারীরা ইউএনও দপ্তরের সামনে অবস্থান নিয়ে লিখিত আবেদন দিয়েছেন।
হরিদাসকাটি ইউনিয়নের পাঁচবাড়িয়া এলাকার পরিবেশক সবুজ বিশ্বাস বলেন- আমি ৪৪৬ জনের চাল বিতরণ করি। খাদ্য দপ্তরের নির্দেশ মতে ২২৩ জনের চাল উত্তোলন করেছি চলতি মাসের ৫ তারিখ। চাল ঘরে পড়ে আছে। পরিষদ থেকে কার্ড না ছাড়ায় চাল দিতে পারছিনা। একই কথা বলেছেন ওই ইউনিয়নের পরিবেশক শাহীন হোসেন ও মানিক মোল্যা।
হরিদাসকাটি ইউপির চেয়ারম্যান আলমগীর কবীর লিটন বলেন- কার্ড যেটা তৈরি হচ্ছে উপকারভোগীরা নিচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে চাল দেওয়া যাবে। তালিকা অনলাইন না হওয়ার ব্যাপারে
দুর্বাডাঙা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাজহারুল আনোয়ার বলেন- অর্ধেক কার্ড পরিবর্তণ করে দু’মাস আগে খাদ্য দপ্তরে জমা দিয়েছি। দপ্তর তালিকা গ্রহণ না করায় সেভাবে পড়ে আছে। আমার এখানে রাজনৈতিক সমস্যা আছে।
কাশিমনগর ইউপির চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান বলেন- কিছু তালিকা অনলাইন হয়েছে। খাদ্য দপ্তর অনুমতি দেচ্ছে না। তাছাড়া ৪ মেম্বর আগের তালিকা পাল্টাতে চাচ্ছে না। এজন্য সমস্যা হচ্ছে।
খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির উপজেলা কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন- উপজেলা কমিটির সভায় ১০ শতাংশ তালিকা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। দুর্বাডাঙার চেয়ারম্যান তা না মেনে ১ হাজার ৩৯২ কার্ডের মধ্যে ৯৯২ কার্ড পরিবর্তন করে তালিকা দিয়েছেন। শ্যামকুড় ও কাশিমনগর ইউনিয়নের তালিকা সংশোধন ঢালাও ভাবে হয়েছে। এ জন্য তিন ইউনিয়নের তালিকা অনুমোদন দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় সেপ্টেম্বর মাসের চাল বিতরণ বন্ধ আছে। এ তিন ইউনিয়নের ব্যাপারে বিভিন্ন দপ্তরে লেখালেখি করছি। এখনো কোন সিদ্ধান্ত আসেনি।
ইন্দ্রোজিৎ সাহা বলেন- জুলাই মাসে তালিকা অনলাইনের কাজ শুরু হয়েছে। নানা কারণে অল্প সময়ে তালিকা পরিবর্তন করে অনলাইন সম্ভব হয়নি। সদর দপ্তরের নির্দেশনা অনুযায়ী সেপ্টেম্বর মাসে ৫০ শতাংশ কার্ডধারীকে চাল দেওয়া হচ্ছে। তালিকা পূর্ণ করে আগামী মাসের চালের সাথে চলতি মাসেরটা সমন্বয় করা হবে। ইন্দ্রোজিৎ সাহা আরো বলেন- অনেক পরিবেশক চাল তুলেছেন। যে কজন বাকি আছেন তারা চালের টাকা জমা দিয়েছেন। চলতি সপ্তাহে তারা চাল বিতরণ করবেন।
* ৩ ইউনিয়নে অনলাইন তালিকা হয়নি।
* চাল যায়নি ভোজগাতী ও মণিরামপুর সদরে।
* হরিদাসকাটি ও রোহিতায় চাল গুদামে পড়ে আছে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)