যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম নতুন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন


তুমুল লড়াই আর অনেক তিক্ততার পর ব্যাটলগ্রাউন্ড রাজ্য পেনসিলভেইনিয়ায় জয়ের মধ্য দিয়ে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন।
তার রানিং মেট কমলা হ্যারিস প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন।
এর মধ্য দিয়ে বহু আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দেওয়া রিপাবলিকান দলের নেতা ডনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসনের অবসান হল। যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় তিন দশকের মধ্যে তিনিই প্রথম দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে ব্যর্থ হলেন। তার আগে ১৯৯২ সালে জর্জ এইচ ডব্লিউ বুশ এই পরীক্ষায় হেরে গিয়েছিলেন।
সাধারণত ভোটের রাতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন সেই খবর প্রকাশ হলেও এবার করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে তা অনেক দীর্ঘায়িত হয়। গত ৩ নভেম্বর ভোটগ্রহণের পর এই চার দিন ধরে চলে গণনা, সেই সঙ্গে শ্বাসরুদ্ধকর অপেক্ষা-উত্তেজনা।
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে অনুষ্ঠিত এই নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক আগাম ভোট পড়ায় কয়েকটি রাজ্যে গণনা শেষ হতে কয়েক দিন সময় লেগে যায়।
প্রথম দিকে ভোট গণনা শেষ হওয়া রাজ্যগুলোতে দুই প্রার্থীই প্রত্যাশা অনুযায়ী জয় পেয়ে যান। সে কারণে প্রেসিডেন্ট কে হচ্ছেন সেই প্রশ্নের জবাব পেতে তাকিয়ে থাকতে হয় ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে বিবেচিত কয়েকটি রাজ্যের ভোটের ফলের দিকে।
এই কয়দিন পেনসিলভেইনিয়ার সঙ্গে জর্জিয়া, অ্যারিজোনা, নেভাডা, নর্থ ক্যারোলাইনা ও আলাস্কায় ভোট গণনার দিকে নজর থাকে সারা বিশ্বের।
এর মধ্যে প্রথম দিকে পেনসিলভেইনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলাইনা ও আলাস্কায় ট্রাম্প এগিয়ে থাকলেও পোস্টাল ব্যালট গণনা শুরুর পর শুক্রবার পাল্টাতে থাকে চিত্র। পেনসিলভেইনিয়া ও জর্জিয়ায় ট্রাম্পকে টপকে এগিয়ে যান বাইডেন।
শুক্রবারই জর্জিয়ায় ৯৯ শতাংশ ভোট গণনা শেষ হলেও দুই প্রার্থীর ব্যবধান খুব সামান্য হওয়ায় সেখানকার নিয়ম অনুযায়ী ভোট পুনঃগণনায় চলে যায়।
এদিকে আগাম ভোটের ওপর ভর করে নির্বাচনী ফল বাইডেনের দিকে ঝুঁকতে থাকায় ভোট গণনা বন্ধের দাবি জানান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কোনো প্রমাণ ছাড়াই ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলেন তিনি। পেনসিলভেইনিয়ায় ভোট গণনা বন্ধের দাবি নিয়ে আদালতেও গিয়েছিলেন তার অনুসারীরা।
এ নিয়ে দুনিয়াজুড়ে আলোচনার মধ্যে শনিবার পেনসিলভেইনিয়ায় ট্রাম্পের চেয়ে ভোটের ব্যবধান বাড়িয়ে বাইডেন জয়ী হওয়ায় ২০টি ইলেকটোরাল ভোট চলে আসে তার পক্ষে। আর এতেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টির বেশি ইলেকটোরাল ভোট হয়ে যায় আগে থেকে ২৫৩টি ভোট নিশ্চিত করা বাইডেনের। এখন তার ইলেকটোরাল ভোটের সংখ্যা ২৭৩টি।
৭৭ বছর বয়সী জো বাইডেন এর আগে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ডেলাওয়ারের সবচেয়ে বেশি সময়ের সেনেটরও তিনি।
নির্বাচনী প্রচারে বাইডেন সব সময় বলেছেন, ‘জাতির আত্মা’ এখন সংকটে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শাসনামলের ‘ক্ষত’ সারাতে কাজ করবেন তিনি।
নির্বাচনে জয়ের খবরে এক টুইটে বাইডেন বলেন, “আমেরিকা, মহান এই রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে বেছে নেওয়ায় আমি সম্মানিত।”
দল-মত নির্বিশেষে সবার জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টুইটে তিনি লিখেছেন, “আমাদের সামনের যে কাজ রয়েছে, তা কঠিন হবে। তবে এই প্রতিশ্রুতি আমি আপনাদের দিচ্ছি, আপনি আমাকে ভোট দিন বা না দিন, আমি হব সব আমেরিকানের প্রেসিডেন্ট।
“আমার ওপর যে আস্থা আপনারা রেখেছেন, তার প্রতিদান আমি দেব।”
অপরদিকে ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলা ট্রাম্প তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বাইডেনের বিরুদ্ধে ‘তড়িঘড়ি করে ভুয়া বিজয়ী সাজার’ অভিযোগ করেছেন।
“নির্বাচন শেষ হতে এখনও অনেক বাকি,” বলেছেন তিনি।
বাইডেনের জয়ের খবর যখন প্রকাশ হচ্ছিল, সে সময় ভার্জিনিয়ার স্টার্লিংয়ে গলফ কোর্সে ছিলেন ট্রাম্প। সকালে হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যান তিনি।
পেনসিলভেইনিয়ার ফিলাডেলফিয়ায় সংবাদ সম্মেলনে করে সোমবার ভোটের ফলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই শুরু করার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্পের আইনজীবীরা। ফিলাডেলফিয়ার ‘মৃত ব্যক্তিরাও’ এবার ভোট দিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা।
এদিকে নির্বাচনে জয়ের খবরে জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানাতে শুরু করেছেন বিভিন্ন দেশের নেতারা।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো এক টুইটে বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, তাদের সঙ্গে কাজ করার জন্য ‘সত্যিকারে মুখিয়ে আছেন’ তিনি।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও বাইডেন ও কমলা হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেছেন। তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশের এই নেতাদের সঙ্গে আগামীতে একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন তিনি।
পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তা, নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী এরনা সোলবার্জ, জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেইকো মাস, স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্ট্রুজেন, যুক্তরাজ্যের বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা কিয়ের স্টারমার, ভারতের বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীসহ বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং রাজনৈতিক দলের নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে টুইট করে বাইডেন ও হ্যারিসকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার ও বারাক ওবামা নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানিয়েছেন।
এক বিবৃতিতে ওবামা বলেছেন, “আমার কাছে আমাদের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং আমাদের পরবর্তী ফার্স্ট লেডি জিল বাইডেনকে অভিনন্দন জানানোর চেয়ে গর্বের কিছু আর হতে পারে না।”
জো বাইডেনের জয়কে ‘গত চার বছরের অন্ধকার, বিভক্তি ও বিদ্বেষ’ থেকে আমেরিকার জেগে ওঠা হিসেবে বর্ণনা করেছেন নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রু কুমো।
যুক্তরাষ্ট্রের এবারের নির্বাচনকে দেখা হয়েছে দেশটির ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনগুলোর একটি হিসেবে। ১৮৬০ সালের গৃহযুদ্ধ এবং ১৯৩০ এর দশকের মহামন্দার সময়ের মতো এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন অনেকে।
অভিবাসন, বর্ণবাদসহ বিভিন্ন বিষয়ে ট্রাম্পের নীতি নিয়ে বিস্তর সমালোচনা, ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের ভাষ্যমতে, নারী, আফ্রিকান আমেরিকান, কলেজ ডিগ্রিধারী শ্বেতাঙ্গ ভোটার ও শহরের বাসিন্দাদের ভোট এগিয়ে দিয়েছে জো বাইডেনকে। পপুলার ভোটে ট্রাম্পের চেয়ে ৪০ লাখের বেশি ভোট পেয়েছেন তিনি।
বাইডেনের জয়ের খবরে ওয়াশিংটন ডিসি, নিউ ইয়র্কসহ বিভিন্ন শহরে সমর্থকরা রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করেছেন।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
