নড়াইলের মধুমতীতে ৬ লেনের সেতুর কাজ শেষ পর্যায়ে, পদ্মা সেতুতে সরাসরি ৬ জেলা
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা পয়েন্টে মধুমতী নদীতে নির্মাণাধীন সেতুর কাজ এখন শেষ পর্যায়ে। দৃষ্টিনন্দন এ সেতু হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম ছয় লেনের। পদ্মা সেতুর সঙ্গে চালু করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলছে এ সেতুর শেষ পর্যায়ের কাজ।
এ সেতুর পূর্ব পারে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলা ও পশ্চিম পারেখ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা।
এ সেতু চালু হলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দুর্ভোগ লাঘব হবে।
বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ ডিসেম্বর নড়াইলের নির্বাচনী জনসভায় এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তরের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু হচ্ছে। জাপানের টেককেন করপোরেশন ও ওয়াইবিসি এবং বাংলাদেশের আবদুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।
সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামা বলেন, সেতুর সার্বিক কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৬৫ শতাংশ। সংযোগ সড়কের কাজ শেষের পথে। মূল সেতুর দুটি স্প্যান বসানোর কাজ বাকি আছে। এ দুটি বসানো হলে গাড়ি চালানো যাবে। সওজের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ৩০ জুন থেকে এ সেতুতে গাড়ি চালানোর লক্ষ্যে কাজ চলছে। কারণ, জুনেই পদ্মা সেতু চালু হবে।
এ সেতুর কাজে দীর্ঘদিন ধরে উপপ্রকল্প ব্যবস্থাপক ছিলেন সওজের প্রকৌশলী সৈয়দ গিয়াস উদ্দিন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু চার লেনের। আর মধুমতীর সেতু দেশের প্রথম ছয় লেনের। এটি দেশের সবচেয়ে বড় নেলসন লোস আর্চ টাইপের (ধনুকের মতো বাঁকা) সেতু। পদ্মা সেতুর পাইল ক্যাপ পানির ওপর পর্যন্ত। কিন্তু এ সেতুর পাইল ক্যাপ পানির নিচের মাটির ভেতরে। তাই নৌযান চলাচল সমস্যা হবে না, পলি জমবে না।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর পূর্ব পারের সংযোগ সড়কের কার্পেটিং শুরু হয়েছে এবং পশ্চিম পারে পাথর-বালুর ঢালাইয়ের কাজ চলছে। সংযোগ সড়কের ১৩টি কালভার্টের মধ্যে ১২টির কাজ শেষ হয়েছে। আটটি আন্ডারপাসের কাজ শেষ হয়েছে। কাশিয়ানী পাশে ডিজিটাল টোল প্লাজা নির্মাণের কাজ চলছে। সেতুর মাঝখানে বসানো হয়েছে ১৫০ মিটার দীর্ঘ নেলসন লোস আর্চ টাইপের স্টিলের স্প্যান। স্প্যানটি তৈরি হয়েছে ভিয়েতনামে। ওই স্প্যানের উভয় পাশের অন্য স্প্যানগুলো পিসি গার্ডারের (কংক্রিট)। মোট ১৩টি স্প্যানের মধ্যে পিসি গার্ডারের দুটি স্প্যানের কাজ বাকি আছে।
প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির ও দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১০ মিটার। উভয় পাশে সংযোগ সড়ক হবে ৪ দশমিক ২৭৩ কিলোমিটার, যার প্রস্থ ৩০ দশমিক ৫০ মিটার। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় হবে ৯৫৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি হয়। ওই সালের ৫ সেপ্টেম্বর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। তখন থেকে ৩৬ মাস ছিল মেয়াদকাল।
সেতুর প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, প্রথমে সেতুর নকশা ছিল চার লেনের, পরে তা করা হয়েছে ছয় লেনের। সংযোগ সড়কের ভূমি অধিগ্রহণে দেরি হয়েছে। করোনার জন্য প্রায় ছয় মাস কাজ বন্ধ ছিল। এসব কারণে নির্ধারিত মেয়াদে কাজ শেষ হয়নি। মূল প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানোগ হয়েছে।
সওজ ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ সেতু চালু হলে নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল স্থলবন্দর ও খুলনা থেকে ঢাকায় যাতায়াতকারী পরিবহন মাগুরা-ফরিদপুর হয়ে যাতায়াতের পরিবর্তে কালনা হয়ে যাতায়াত করতে পারবে। এতে বেনাপোল ও যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব ১১৩ কিলোমিটার, খুলনা-ঢাকার দূরত্ব ১২১ কিলোমিটার এবং নড়াইল-ঢাকার দূরত্ব ১৮১ কিলোমিটার কমবে।
তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবহনসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, পদ্মা সেতু ও কালনা সেতু চালু হলে কালনা থেকে যশোর পর্যন্ত সড়কে পরিবহনের চাপ বাড়বে। এতে পুরোনো কম প্রশস্ত সড়কে দুর্ঘটনা বাড়তে পারে।
সওজ নড়াইলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, সড়কের আপাতত চাপ সামলাতে কালনা থেকে যশোর পর্যন্ত বর্তমান সড়কটি আরও ছয় ফুট পিচঢালাই করে চওড়া করা হবে। এক মাসের মধ্যে এর টেন্ডার হবে। এক বছরের মধ্যে এর কাজ শেষ হবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)