শত বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী


বর্তমান সরকার ক্ষমতাকে ভোগের বস্তু হিসেবে নেয়নি মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেছেন, ‘বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে। এই এগিয়ে চলার পথেও অনেক বাধা আমাদের অতিক্রম করতে হয়েছে। শত বাধা অতিক্রম করে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আমাদের সামনে আরও এগিয়ে যেতে হবে।’
বুধবার (২৪ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে আনা ১৪৭ বিধির প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার (২৪ নভেম্বর) সংসদে নিজেই প্রস্তাবটি তোলেন। দুই দিনব্যাপী আলোচনা করে বৃহস্পতিবার (২৫ নভেম্বর) প্রস্তাবটি সর্বসন্মতক্রমে গ্রহণ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে কীভাবে দেখতে চাই, সেই প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও আমরা করে রেখেছি। জলবায়ু পরিবর্তন থেকে বাংলাদেশ ও আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন বেঁচে থাকতে পারে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে এই ব-দ্বীপটা সুন্দরভাবে গড়ে তোলার জন্য ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ আমরা গ্রহণ করে, তা বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। এই ব-দ্বীপ অঞ্চলে যারা বাস করে, তারা যেন সুন্দর জীবন পায়। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন উন্নত জীবন পায়। তাদের যেন আর কষ্ট করতে না হয়।
স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, আমরা প্রতীক্ষায় ছিলাম কখন আমাদের পিতা ঘরে আসবেন। কিন্তু আমরা বাবাকে পাই পরে। জনগণ পায় আগে। তার কাছে জনগণই ছিল সবচেয়ে বড়।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আকাঙ্ক্ষা ছিল দেশটাকে গড়ে তুলবেন। বাংলাদেশকে সাজাবেন যেন প্রতিটি মানুষ সুবিধা পান। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। দেশের উন্নয়নে তিনি স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে কাজ করতে শুরু করেন। একটি প্রদেশ থেকে দেশে উন্নীত করার যতো আইন, নিয়ম নীতিমালা সবই তিনি করে দিয়ে যান।’
শেখ হাসিনা বলেন, আমি দীর্ঘদিন দেশ চালাচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে যখন কোনো কাজ করতে যাই, দেখতে পাই প্রতিটি কাজের ভিত্তি জাতির পিতা তৈরি করে দিয়ে গেছেন। আমার কাছে বিস্ময় মনে হয়, এতো অল্প সময়ে কীভাবে এতো কাজ করে গেলেন তিনি। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
সরকারপ্রধান বলেন, দুর্ভাগ্য হলো যখন তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলছিলেন, তখন কিছু লোক মনে হয় যেন একটি অস্থিরতায় ভুগছিলেন। এসময় নানান ধরনের কথা, নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের হত্যা করা… পাকিস্তানি বাহিনী সারেন্ডার করেছিল ঠিকই। কিন্তু তারা তাদের কিছু দালাল যুদ্ধাপরাধীদের রেখে যায়। তারা আমাদেরই মুক্তিযুদ্ধের অংশকে হাতিয়ে নিয়ে দেশের ভেতরে অরাজকতা সৃষ্টির চেষ্টা চালায়। এত অল্প সময়ে বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রাটা তাদের সহ্য হয়নি। দেশ স্বাধীন হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবে, তা পাকিস্তানিদের দোসররা মানতে পারেনি।
বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় নানা ষড়যন্ত্রের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, একটি চক্র যে চক্রান্ত করছে, তা মোকাবিলা করেই জাতির পিতা দেশকে গড়ে তুলছিলেন। দেশ যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়, কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয়। তার জন্য তিনি দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচি দেন। ধনী দরিদ্রের বৈষম্য দূর করতে ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করেন। স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করেন। আজ যে সম্মানজনক অবস্থানে আমরা আসতে পেরেছি, জাতির পিতা বেঁচে থাকলে সেই জায়গায় আমরা স্বাধীনতার ১০ বছরে পৌঁছে যেতে পারতাম।’
তিনি বলেন, যারা স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে যাক তা চায়নি, তারা এটা সহ্য করতে পারেনি। তারা নানা ধরনের অপপ্রচার করেও যখন জনগণের সহায়তা পেল না, তখনই পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে তাকে হত্যা করা হয়। তাকে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশে বার বার ক্যু, মুক্তিযোদ্ধা, সাধারণ মানুষকে হত্যা, সংবিধান ক্ষতবিক্ষত করা হয়। এর ফলাফল বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আমাদের ভিক্ষুকের জাতিতে পরিণত করা হয়েছিল।
১৯৯৬ ও ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাগ্রহণের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর আমরা জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ পাই। আমরা চেয়েছি, দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। রাস্তাঘাটসহ প্রতিটি সেক্টরের উন্নতি হবে। জনগণ আমাদের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রেখে বার বার ভোট দিয়ে সরকার গঠনের সুযোগ দিয়েছে। যার কারণে আজ আমরা উন্নয়নের মহাসড়কে। ১২ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।
করোনা মহামারি মোকাবিলায় সরকারের পদক্ষেপ তুলে ধরে তিনি বলেন, কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পেয়েছে। ভ্যাকসিনের কোনো অভাব হবে না। অনেক উন্নত দেশ বিনা পয়সায় ভ্যাকসিনও দেয় না। টেস্টও করে না। আমরা কিন্তু বিনা পয়সায় টেস্ট করাচ্ছি, ভ্যাকসিন দিচ্ছি। ধনী-দরিদ্র থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরা, সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছে। সবাই পাবে। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে আমরা ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসবো।
সরকারপ্রধান বলেন, আমরা ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ মনে করেছি। জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের সুযাগ মনে করি। আমরা দারিদ্র্যের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। করোনা মহামারি না থাকলে এটাকে আমরা ১৭ ভাগে নামিয়ে আনতে পারতাম। করোনার কারণে কিছুটা হলেও ব্যাহত হয়েছে। তারপরও উন্নয়নের চাকা কিন্তু আমাদের থেমে থাকেনি। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে আমরা দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশ। ৪১টি অর্থনৈতিক শক্তিশালী দেশের মধ্যে বাংলাদেশ একটি। আমরা এভাবে আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারের রূপকল্প অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। পরিকল্পিতভাবে আমরা সব কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারছি বলে এগিয়ে যাচ্ছে। জনগণ ভোট দিয়েছে বলে আমরা সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পারছি। রজতজয়ন্তী উদযাপনের সময়ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
