সাতক্ষীরায় সংস্কৃতিকর্মীদের দেয়া প্রধানমন্ত্রীর সম্মানী ভাতার টাকা রোজবাবু ও রত্নার পকেটে
সাতক্ষীরা জেলায় কর্মহীন দুঃস্থ্য সংস্কৃতিকর্মীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সম্মানী ভাতা ভোগীদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আবু আফফান রোজবাবু ও সাধারণ সম্পাদক শামীমা পারভীন রত্নার বিরুদ্ধে।
সোমবার দুপুরে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে কয়েকজন সংস্কৃতিকর্মী এমন অভিযোগ করেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ জেলার সাংস্কৃতিককর্মীরাও।
জানা যায়, গত বছরের জুন মাসে করোনায় কর্মহীন হয়ে পড়া শিল্পী, কবি-সাহিত্যিক ও সংস্কৃতিসেবীদের তালিকা প্রেরণের নির্দেশ দেয় সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নির্দেশনা অনুযায়ী ৩১৪ জনের তালিকা শিল্পাকলা একাডেমীর মহাপরিচালকের কাছে পাঠায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী। পরে ওই তালিকা অনুমোদিত হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী গত ২৫ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলা শিল্পকলা একাডেমী হতে ওই ৩১৪ জনের হাতে অনুদানের চেক বিতরণ শুরু করা হয়। তবে ওই তালিকায় স্থান পায়নি প্রকৃত শতাধিক সাংস্কৃতিক কর্মী। এমনকি যারা অসহায় শিল্পী হিসেবে ভাতা পাচ্ছেন তাদেরকেও বাদ দেওয়া হয়েছে ওই তালিকা থেকে। অভিযোগ উঠেছে টাকা উত্তোলনের পর সাতক্ষীরা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের কয়েকজন নেতাকে ২০০০ টাকা করে দেবেন এমন শর্তে অনেকের নাম ওই তালিকায় উঠানো হয়েছে। এমনকি টাকা উত্তোলনের পর জনপ্রতি ভাতা ভোগীদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে সাতক্ষীরা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ও সম্পাদককে ২০০০ টাকা নিতে দেখা যায়।
আরও জানা যায়, সাতক্ষীরায় সাংস্কৃতিক সংগঠনের সংখ্যা প্রায় ৬০টির অধিক। সংস্কৃতিকর্মীর সংখ্যা রয়েছে প্রায় শতাধিক, যারা সরকারি-বেসরকারি নানা অনুষ্ঠান করে জীবিকানির্বাহ করেন। অথচ এদেরকে বাদ দিয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে ৩৪৪ জনের তালিকা পাঠানো হলেও তাদের মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে পরে তালিকা পাঠানো হয়েছে ২০০ জনের। সেখান থেকে ইতিপূর্বে সহায়তা দেয়া হয়েছিল মাত্র ১০০ জনকে বলে জনশ্রুতি আছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জেলা কালচারাল অফিসার (অতি: দায়িত্ব) সুজিত কুমার সাহা জানান, এখানে শুধুমাত্র কর্মহীনদের তালিকায় নাম এসেছে। তাদেরকে জেলা শিল্পকলা একাডেমীতে ডেকে ভাতার চেক দেওয়া হচ্ছে। শুনেছি চেক উত্তোলনের পরে ওই স্থানে যেয়ে সাতক্ষীরা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আবু আফফান রোজবাবু ও সাধারণ সম্পাদক শামীমা পারভীন রত্নার কাছে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে দিয়ে আসছে সংস্কৃতিকর্মীরা। ওই বিষয় তাদের নিজস্ব। কিন্তু যেখানে বসে চেক বিতরণ হচ্ছে। সেই একই স্থানে বসে তারা ভাতাভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিতে পারেনা। এটি অন্যায়।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সম্মানী ভাতার টাকা নেওয়ার বিষয়ে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সদস্য সচিব মুশফিকুর রহমান মিল্টন জানান, ঘটনাটি আমার সামনে ঘটেছে। তাদেরকে নিষেধ করে বলেছিলাম আপনারা এখানে বসে ভাতাভোগীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েন না। তাহলে আমাদের দুর্নাম হবে। অথচ তারা না শুনে একই কাজ করছেন। এর দায় তো আমাদের না।
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি আবু আফফান রোজবাবু ও সাধারণ সম্পাদক শামীমা পারভীন রত্না জানান, টাকা নেওয়ার বিষয়টি সত্য। কিন্তু আমরা টাকা কেন নিচ্ছি তা বাইরে ভিন্নভাবে প্রচার করা হচ্ছে। যারা ভাতাভোগী। তাদেরকে বলেছি আমরা। তারা স্বেচ্ছায় আমাদের কাছে ২ থেকে ৫ হাজার টাকা দিয়ে যাচ্ছে। ওই টাকা আমরা তাদেরকে দিবো যাদের নাম (চৈতালী মুর্খাজি, শিল্পী আশীষ, শোভন, অমিত গান সহ) প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সম্মানী ভাতার তালিকায় ওঠেনি। আমরা যখন তাদের সহায়তা দেবো তখন আপনাদের ডাকবো।
এ সম্পর্কে ভাতাভোগী অনিক (ছদ্দনাম) জানান, গত বছরও অনুদান পেয়েছিলাম। এবারও তালিকায় আমার নাম ছিল। ওই চেক উত্তোলন করার পূর্বে ২ হাজার টাকা দেওয়া কথা বলেছিল। সেই মোতাবেক টাকা উত্তোলনের পরে রত্না আপার হাতে ২ হাজার টাকা দিয়েছি। ওই টাকা না দিলে আগামীতে কোনো সহায়তা আসলে তো পাবো না। শুধু আমি দেয়নি। আমার মতো প্রায় শত শত সাহিত্যিকর্মী তাদের হাতে টাকা তুলে দিয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তালিকায় নাম না ওঠা এক ব্যক্তি জানান, আমার মতো আরও কয়েকজন নিয়মিত আছে যারা সব সময় সাহিত্য সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করেন। মহামারি করোনায় এখন তাদের মতো আমিও কর্মহীন। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সম্মানী আমরা পায়নি। বিষয়টি শুনে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কর্মকর্তার সাথে যোগোযোগ করেছিলাম। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন তোমাদের বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে। আমরা পরে দেখবো। অথচ ৩ দিন পেরিয়ে গেলেও আমাদের জন্য কিছুই করেননি।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানান, অধিকাংশ শিল্পীর জীবনই কাটছে অর্থনৈতিক দুর্দশায়। তাদের কথা ভেবে অসচ্ছল শিল্পীদের জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সম্মানী ভাতা প্রদান করছেন। অথচ অসচ্ছল সাংস্কৃতিক কর্মীদের কাছ থেকে রোজবাবু ও রত্না জনপ্রতি টাকা নিচ্ছেন। যা সম্পূর্ণ অন্যায়। তাদের এই ঘৃণ্য কর্মকান্ডের তদন্তপূর্বক প্রয়োজনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের আশু হস্তক্ষেপ করেন তারা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)