সুন্দর জীবন-যাপনে যে হাদিসের উপর আমল জরুরি
একজন ঈমানদারের জন্য দ্বীনি জীবন-যপনে ইলমে হাদিসের অনুসরণ ও অনুকরণের বিকল্প নেই।
ইমাম আবু দাউদ রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মুসলিম উম্মাহর জন্য এমনই ৪টি হাদিসের উপর আমল করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি নিজ গ্রন্থ সুনানে আবু দাউদেও তা সংকলন করেছেন। হাদিসের অন্যান্য গ্রন্থেও তা সন্নিবেশিত হয়েছে। তিনি এ ৪টি হাদিসকে দ্বীনদারির জন্য যথেষ্ট বলে উল্লেখ করেছেন। তাহলো-
নিয়তের বিশুদ্ধতা
জীবনের প্রতিটি কাজ ও ইবাদতের জন্য নিয়তের বিশুদ্ধতা খুবই জরুরি। যার নিয়ত বিশুদ্ধ হবে, তার সব আমলই হবে গ্রহণযোগ্য। হাদিসে এসেছে-
হজরত আলকামাহ ইবনু ওয়াক্কাস আল লাইসি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, আমি ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে মিম্বারের উপর দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি- (হজরত ওমর বলেন) আমি আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে বলতে শুনেছি-
‘কাজ (এর প্রাপ্য হবে) নিয়ত অনুযায়ী। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে। তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের অথবা কোনো নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে- তবে তার হিজরত সে জন্যই বিবেচিত হবে, যে জন্য, সে হিজরত করেছে।’ (বুখারি,মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ)
অনর্থক কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা
জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অনেক মূল্যবান। সময়ের প্রতি গুরুত্বারোপ করা ইসলামের অন্যতম দাবি। তাই অনর্থ বিষয় তথা কথা বা কাজ নিয়ে ব্যস্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুসহ অনেক সাহাবি বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, কোনো ব্যক্তির জন্য ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অর্থহীন কথা ও কাজ থেকে বিরত থাকা।’ (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
অন্যের জন্য কল্যাণ কামনা করা
মানুষ নিজের জন্য যা কল্যাণ মনে করেন, ঠিক তা নিজের মতো করে অন্যের জন্যও তা কল্যাণ মনে করা হাদিসের অন্যতম শিক্ষা। হাদিসের এ আমলে অর্জিত হবে সঠিক দ্বীনদারি। হাদিসে এসেছে-
হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তোমাদের কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না সে তার ভাইয়ের জন্য তা পছন্দ করে যা সে নিজের জন্য পছন্দ করেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)
কলবকে পাপাচার থেকে হেফাজত রাখা
মানুষের ইবাদত কবুলের অন্যতম শর্ত হলো- পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখা। হালাল ও হারাম মেনে জীবন পরিচালনা করা। আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলার ব্যাপারে যথাযথ সতর্ক তখা। নিজের কলবকে যে কোনো পাপাচার থেকে হেফাজত রাখা। হাদিসে এসেছে-
হজরত নুমান ইবনে বশির বর্ণনা করেন, আমি আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, ‘হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর এ দুইয়ের মাঝে রয়েছে বহু সন্দেহজনক বিষয়- যা অনেকেই জানে না। যে ব্যক্তি সেই সন্দেহজনক বিষয় হতে বেঁচে থাকবে, সে তার দ্বীন ও মর্যাদা রক্ষা করতে পারবে। আর যে সন্দেহজনক বিষয়সমূহে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তার উদাহরণ ওই রাখালের মতো, যে তার পশুগুলো বাদশাহ’র সংরক্ষিত চারণভূমির পাশে চরিয়ে বেড়ায়। (রাখাল এ আশংকায় থাকে যে) অচিরেই সেগুলো সেখানে (ওই সংরক্ষিত চারণ ভূমিতে) ঢুকে পড়ার আশংকায় রয়েছে।
– জেনে রাখ! প্রত্যেক বাদশারই একটি সংরক্ষিত এলাকা রয়েছে। আরও জেনে রাখ যে, আল্লাহর জমিনে তাঁর সংরক্ষিত এলাকা হলো তাঁর নিষিদ্ধ কাজসমূহ।
– জেনে রাখ! শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীরই তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখ, সে গোশতের টুকরোটি হল ক্বলব (অন্তর)।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে আহমদ)
উল্লেখিত হাদিসগুলোর যথাযথ আমলেই দ্বীনদারি ও ইবাদত-বন্দেগিতে সক্ষম হবে। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণময় জীবন লাভে ধন্য হবে মুমিন।
সুতরাং মুমিন মুসলমানের উচিত, হাদিসগুলোর উপর যথাযথ আমল করা এবং দ্বীনদারির সঙ্গে জীবন যাপন করা।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দ্বীনদারির সঙ্গে জীবন যাপনে হাদিসগুলোর উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)