অস্থির পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনে কাজ করছে ভারত-বাংলাদেশ: মোদি


ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, অস্থির পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনে কাজ করছে ভারত-বাংলাদেশ।
শনিবার (২৭ মার্চ) গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে মতুয়াদের উদ্দেশে দেয়া এক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
বক্তব্যের শুরুতেই মোদি বলেন, ২০১৫ সালে যখন আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হই তখনই আমার ইচ্ছা ছিল এই ওড়াকান্দি আসার। আজ আমার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। ভারতে থাকা মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজন যেমনটা অনুভব করে, আমি আজ তেমনটাই অনুভব করছি। আমি আজ এই পুণ্যভূমির চরণ স্পর্শ করেছি।
তিনি বলেন, একভাবে এই স্থান ভারত ও বাংলাদেশের আত্মিক সম্পর্কের তীর্থক্ষেত্র। আমাদের সম্পর্ক মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক, মনের সঙ্গে মনের সম্পর্ক।
মোদি বলেন, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয় দেশই নিজেদের বিকাশ নিজেদের প্রগতির চেয়ে সমগ্র বিশ্বের উন্নতি দেখতে চায়। উভয় দেশই পৃথিবীতে অস্থিরতা, সন্ত্রাস ও অশান্তির পরিবর্তে স্থিতিশীলতা, প্রেম এবং শান্তি চায়।
মোদি বলেন, আমি বাংলাদেশে ১৩০ কোটি ভারতীয় জনতার ভালবাসা নিয়ে এসেছি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পূর্ণ হওয়ায় সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। গতকাল ঢাকার প্যারেড গ্রাউন্ডে সংস্কৃতি অনুষ্ঠান দেখেছি। যা আমাকে মুগ্ধ করেছে।
তিনি বলেন, এখানে আসার আগে আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিক্ষেত্রে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব আর তার ওপর দেশের লোকেদের বিশ্বাস ও ভালোবাসা সত্যিই অতুলনীয়।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার পর ওড়াকান্দিতে পৌঁছান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এ সময় তাকে উলুধ্বনি, শঙ্খ ও ডঙ্কা-কাঁসা বাজিয়ে বরণ করে নেন ঠাকুরবাড়ির মতুয়ারা। এরপর ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রাণপুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের মন্দিরে পূজা দেন।
এর আগে তিনি টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানান। এ সময় নরেন্দ্র মোদিকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও বরণ করে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা। এদিন বেলা সাড়ে ১১টার দিকে টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছান মোদি।
এরও আগে এদিন সকালে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার ঈশ্বরীপুর গ্রামের যশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে পূজা-প্রার্থনা করেন নরেন্দ্র মোদি। এরপর গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
মোদির আগমন কেন্দ্র করে উৎসবের আমেজে ভাসছেন কাশিয়ানি এলাকার বাসিন্দারা। সামাজিক বৈষম্য আর শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু ২১০ বছর আগে। ধর্মগুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের নেতৃত্বে একই ছাতার নিচে আশ্রয় নেন পিছিয়ে পড়া সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। শুরু হয় মতুয়া মতাদর্শের।
মতুয়া অর্থ মতোয়ারা হওয়া। হরি নামে যারা মেতে থাকেন তারাই মতুয়া। ১৮১১ সালে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ওড়াকান্দিতে জন্ম নেন সম্প্রদায়টির প্রতিষ্ঠাতা হরিচাঁদ ঠাকুর। বিশ্বের কয়েক কোটি মতুয়ার এই তীর্থভূমিতে পা রাখেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগমনকে কেন্দ্র করে সব জায়গায় চলছে উৎসবের আমেজ।
স্থানীয় মতুয়ারা বলছেন, একটা সময় পিছিয়ে থাকলেও এখন শিক্ষা ও জ্ঞানের জগতে তাদের সমান পদচারণা। নরেন্দ্র মোদির আগমণ তাদের আরো বেশি উৎসাহিত-অনুপ্রাণিত করবে।
সফরের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর ওড়াকান্দির ঠাকুরবাড়ির মতুয়া মন্দির পরিদর্শন ও প্রার্থনা করবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এরপর মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি।
গোপালগঞ্জ সফর শেষে দুপুরে ঢাকায় ফিরবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বিকেলে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনা করবেন। তার আগে দুই প্রধানমন্ত্রী একান্তে আলোচনা করবেন। সবশেষে নরেন্দ্র মোদি বঙ্গভবনে যাবেন। সন্ধ্যায় সেখানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ঢাকা ছেড়ে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
