আশাশুনি থানা যেন পাখিদের অভয় আশ্রম


মহাবিশ্বে যা কিছু সৃষ্টি হয়েছে সবই স্রষ্টার সৃষ্টি। সমস্ত জীবজগৎ তিনিই সৃষ্টি করেছেন পরম যত্নে নিয়ে, যেমন পরম ভালোবাসায় তিনি সৃষ্টি করেছেন মানুষকে। তাঁর মহাশক্তির অন্ততঃ কিঞ্চিৎ ক্ষুদ্রাংশ শক্তি জীবজগতের তাঁর সৃষ্ট প্রত্যেক জীবের মধ্যেই বিরাজমান। অর্থাৎ জীবজগতের সবকিছুর মধ্যেই তাঁর শক্তির এবং তাঁর অস্তিত্বের উপস্থিতি রয়েছে। কাজেই প্রত্যেক জীবের প্রতি দয়া পদর্শন করা আমাদের প্রত্যেকেরই পরম কর্তব্য। কেননা জীবসেবা করলেই প্রকারান্তরে স্রষ্টার সেবা করা হয়। প্রত্যেক জীবের প্রতি যত্নবান হলে এবং তাদের ভালোবাসলে, তবেই সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করা হয়।
এ জন্যেই স্বমী বিবেকানন্দ বলেছেন- “জীবে প্রেম করে যেই জন / সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।”
স্বামী বিবেকানন্দের সেই উক্তির সাদৃশ্য দেখা যায় সাতক্ষীরার আশাশুনি থানা চত্বর ও বাজার সড়ক দিয়ে হাঁটার কিছু মুহূর্তে। থানার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে হাজারো পাখির কলকাকলি যেকোনো পথচারীর মনোযোগ আকর্ষণ করবে। সূর্য ওঠার আগে থেকে শুরু হওয়া এই পাখির কিচিরমিচির তা সন্ধ্যায় আরো বেড়ে যায়।
থানার আশপাশে দাঁড়িয়েই একটু উপরে তাকালেই চোখে পড়বে থানা চত্বরে ভিতর বেড়ে ওঠা অনেকগুলো মেহগনি গাছ ও তাল গাছ জুড়ে বসেছে হাজারো বক ও পানকৌড়ি পাখির মেলা।
প্রথম দেখায় মনে হবে সাদা কাশফুল যেন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরো গাছ জুড়ে। এ ছাড়া আশপাশের আরো কয়েকটি গাছের ডালে রয়েছে বক ও পানকৌড়ি পাখি যাহা খূবই দৃষ্টিনন্দন এবং যেটা দেখে মানুষের মাঝে মুগ্ধতা ছড়ায়। প্রতিবছর এই মৌসুম এলেই এই থানায় বসে এমনি বক ও পানকৌড়ি পাখির মেলা।
কিন্তু এই বছর আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ গোলাম কবির এর সতর্ক নজরদারী আর তার ভালোবাসায় হাজার হাজারেরও বেশী বক পাখি দীর্ঘ সময় ধরে টিকে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বক ও পানকৌড়ির এমন বর্ণাঢ্য উপস্থিতি।
প্রতি বছর চৈত্র মাসের দিকে ঝাঁক বেঁধে পাখিরা এসে অবস্থান নেয় কিছুদিন পর আবার চলেও যায় (ওসি) গোলাম কবির যোগদান করার পর যেমন বেশি দেখা গেছে পাখির ঝাঁক। তেমনি বেশিদিন ধরে অবস্থান করতেও দেখা গেছে তাদের।
ভরা জোসনা রাতে গাছের দিকে তাকালে মনে হয় গাছ জুড়ে যেন থোকা থোকা সাদা কাশফুল ফুটে আছে। এমন সৌন্দর্য দেখে বুক ভরে যায়, পাখি শিকারের কথা কারোর মনেও আসে না। অনেক সময় এসব পাখিরা থানার অফিসার দের কাছাকাছি চলে আসে মনে হয় যেন ওরা তাদের কত চেনা।
এ ব্যাপারে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের সচেতন মহলের বক্তব্য (ওসি) গোলাম কবির যোগদানের পর থেকে আশাশুনি উপজেলার যেমন রেখেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার নজরদারি ঠিক তেমন ভাবে তীক্ষ্ণ নজরদারিতে রেখেছেন এই বক ও পানকৌড়ি পাখিগুলোকে। আর কোনোভাবেই যেন পাখি শিকার করা না হয় সে ব্যাপারেও থানার অফিসার বৃন্দ সবাই সজাগ।
দেখা গেছে সারাদিন এই গাছগুলোতে শুধু পাখির ছানারাই অবস্থান করে। আর দিনের মাঝে মাঝে মা পাখিরা মাছ শিকার করে ঠোঁটে করে তার ছানাদের খাওয়াতে আসে। মূলত সন্ধ্যার সময় পাখিদের আনাগোনা বেড়ে যায়। তখন পাখিদের কিচিরমিচির শব্দে আরো বেশি মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো থানা এলাকা। সাদা বক ও পানকৌড়ির উপস্থিতিতে গাছের পাতা প্রায় চোখেই পড়ে না।
আশাশুনি থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মাদ গোলাম কবির জানান, আমি থানায় যোগদান করার পরে দেখেছি অল্প কিছু বক ও পানকৌড়ি থানা চত্বরের ভিতরে হেমগনিগাছে এসে বাসা বাঁধতে। এবং ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটিয়ে বাড়তে থাকে বক ও পানকৌড়ির সংখ্যা। এখন হাজারেরও বেশি পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, মাঝে মধ্যে ছোট ছোট বাচ্চাগুলো গাছ থেকে নিচে পড়ে যায় তখন সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাগুলোকে পুনরায় আবার গাছের বাসায় উঠিয়ে দেওয়া হয়। উপজেলার মানুষের যেমন নিজেই পাহারা দিয়ে রেখেছি ঠিক তেমন পাখিগুলোকেও নজরদারিতে রাখছি যেন তাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয়।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
