‘ওরে বাটপার’: এপারে সাহেদ, ওপারে দেবাঞ্জন!
গত বছর দেশব্যাপী একটা কথা চাউর হয়েছিলো- ‘ওরে বাটপার’।
মনে আছে সেই সাহেদ করিমের কথা? রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম। বাংলাদেশে যখন করোনাভাইরাসে প্রকোপ শুরু হয়, তখন নিজের কুকীর্তির জন্য প্রায় সবার কাছে পরিচিত পান এই সাহেদ। করোনার নমুনা পরীক্ষা না করেই ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে রাতারাতি সংবাদের শিরোনামে চলে আসেন সাহেদ।
শুধু তা-ই নয়, প্রতারণার সকল শাখায় ছিল বিচরণ সাহেদের।
তাকে উদ্দেশ্য করেই মূলত চাউর হয়েছিলো ‘ওরে বাটপার’।
সবশেষ বোরকা পরে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টাও করেছিলেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন ‘মহাপ্রতারক’ সাহেদ করিম।
এবার সাহেদের মতো আরেক প্রতারকের সন্ধান মিললো ওপার বাংলায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গে। বর্তমানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা ভারতে সবার কাছে পরিচিত মুখ। তার নাম দেবাঞ্জন দেব। তিনি সাহেদের মতো প্রতারণায় ‘পিএইচডি’।
ভুয়া আইএএস পরিচয় থেকে জাল টিকা কাণ্ড- ইত্যাদি বিষয়ে এই মুহূর্তে ভারতজুড়ে খবরের শিরোনামে দেবাঞ্জন।
পুলিশ- প্রশাসনের নাকের ডগায় বছরের পর বছর সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে একের পর এক প্রতারণার ফাঁদ পেতেছিলেন দেবাঞ্জন। একে একে সামনে আসছে সেই সেসব কুকীর্তি। যাকে ঘিরে তোলপাড় পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা ভারত।
প্রতারণার মহাযজ্ঞ ঠিকঠাকই চলছিল দেবাঞ্জনের। বিপত্তি বাঁধল তৃণমূলের সংসদ সদস্য অভিনেত্রী মিমি চক্রবর্তীকে টিকা দিয়ে।
হাতেনাতে ধরা যাকে বলে। করোনা প্রতিষেধকের বদলে মূত্রে সংক্রমণের অ্যান্টিবায়োটিক পুশ করা হয় মিমির শরীরে।
এরপরই প্রকাশ্যে আসে তার কুকীর্তি।
ঘটনা জানাজানি হতেই দেবাঞ্জনকে কবজা করে পুলিশ।
কলকাতার ধূর্ত দেবাঞ্জন দেবও ছিলেন একজন বর্ণচোরা।
কলকাতা পুলিশের তদন্ত বলছে, নিজেকে একজন আইএএস কর্মকর্তা ও কলকাতা পৌর করপোরেশনের যুগ্ম কমিশনার হিসেবে পরিচয় দিতেন তিনি। সেই প্রভাবেই চালাতেন ভুয়া টিকাদান কেন্দ্র। সরকারি স্টিকার লাগানো গাড়ি হাঁকাতেন। সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষীও পুষতেন প্রতারক দেবাঞ্জন।
এহেন কোনো প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি নেই যার সঙ্গে যুক্ত নন তিনি। কলকাতা পৌর করপোরেশনের বিশেষ কমিশনার তাপস চৌধুরীর সই জাল করে তিনটি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন দেবাঞ্জন। এ সময় তিনি পৌর করপোরেশনের কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।
করোনা মহামারীতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পিপিই, করোনা পরীক্ষার কিট, পাল্স অক্সিমিটার, মাস্ক, স্যানিটাইজার বরাদ্দ নিয়েছিলেন দেবাঞ্জন। এগুলো কোথায়, কাদের দিয়েছিলেন সেই হদিস নেই।
তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূলের বিধায়ক লাভলি মৈত্রও।
অভিযোগে বলেছেন, ভুয়া টিকা দিয়ে বহু মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন দেবাঞ্জন।
ভয়াবহ আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও গলায় ঝুলছে দেবাঞ্জনের। কোটি টাকা আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে কলকাতার কসবা থানায় অভিযোগ করেছেন দুই ব্যবসায়ী। এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ৯০ লাখ টাকা, আরেক ব্যবসায়ীর সঙ্গে ২৬ লাখ টাকার প্রতারণার অভিযোগ জমা পড়েছে।
এছাড়া দেবাঞ্জনের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির ভুয়া নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন অবসরপ্রাপ্ত এক বিএসএফ অফিসার।
অভিযোগ, দেশটির স্বরাষ্ট্র ও পার্বত্যবিষয়ক দফতরের নামে বিজ্ঞপ্তি দেন দেবাঞ্জন।
নিজের নিরাপত্তায় ওই অবসরপ্রাপ্ত বিএসএফ অফিসারকে নিয়োগ করেন। নবান্নের প্যাড জাল করে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেন দেবাঞ্জন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)