কলারোয়ায় নির্বাচন পরবর্তী অশান্তি, ধাক্কা-ধাক্কি, আ.লীগ নেতাসহ ৪ পুলিশ আক্রান্ত!
সাতক্ষীরার কলারোয়ায় উপজেলা নির্বাচন পরবর্তী অশান্তি দেখা দিয়েছে। এতে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য উঠে এসেছে। অপ্রীতিকর ঘটনায় ৪ পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছে বলে পুলিশ বলছে। আর ভারতীয় তামিল ছবির আদলে উপজেলা আওয়ামী লীগের এক শীর্ষ নেতাও পুলিশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে দলীয় নেতৃবৃন্দ বলছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে থানা চত্বরে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, এদিন কলারোয়ার যুগিখালী ইউনিয়নে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী আমিনুল ইসলাম লাল্টুর পক্ষে ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসানের নেতৃত্বাধীন কর্মীসমর্থকরা একটি বিজয় মিছিল বের করে। মিছিলের সামনে পরাজিত প্রার্থীর সমর্থক ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অজিয়ার রহমানসহ কয়েকজন পড়লে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি, বাকবিতন্ডা, ধাক্কা-ধাক্কি ও অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে সাবেক চেয়ারম্যান অজিয়ার রহমান থানায় রবিউল হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন।
ওই অভিযোগের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার রাতে থানা চত্বরে শালিসি বৈঠকে উভয় পক্ষ উপস্থিত হয়। সেসময় ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল হাসানকে আটকে রাখা হয়েছে বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তখন তার সমর্থকরা সেখানে অবস্থান নেন। এর বিপরীতে সাবেক চেয়ারম্যান অজিয়ার রহমানসহ তার পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী মজনু উপস্থিত ছিলেন। উভয় পক্ষের মধ্যে চরম বাকবিতন্ডার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে ওসি রফিকুল ইসলাম, সেকেন্ড অফিসার নুর ইসলামসহ পুলিশ এবং উভয় পক্ষ তর্কাতর্কিতে উত্তেজিত হয়ে পড়েন বলে জানা যায়।
সেসময় উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক আহবায়ক সাজিদুর রহমান খান চৌধুরী মজনুর সাথে থানার সেকেন্ড অফিসার নুর ইসলামের সাথে চরম বাকবিতন্ডা হলে ধাক্কা-ধাক্কিতে মজনু চৌধুরী শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হন বলে তারা জানান।
তারা আরো জানান, সেসময় অনেকটা ভারতীয় তামিল ছবির আদলে পুলিশের একজন এএসআই ও তিন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হলে তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তারা হলেন, এএসআই আসলাম, কনস্টেবল মিলন, ফয়সাল ও মিজান।
এ ঘটনায় মজনু চৌধুরীকে বেশ কিছু সময় থানায় অবস্থান করলেও পরবর্তীতে থানা থেকে চলে যেতে দেখা যায়।
যুগিখালী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টুর পক্ষে তারা একটি বিজয় মিছিল বের করেছিলেন। তবে এতে বাঁধা দেন ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান অজিয়ার চেয়ারম্যান, মিজান সরদার ও বাবু হোসেন। এটা নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়। একপর্যায়ে দু’পক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে ধাক্কা-ধাক্কিও হয়। পরবর্তীতে অজিয়ার রহমান থানায় তাদের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
তিনি আরো বলেন, তাকে আটক করা হয়েছে বলে গুজব ছড়ানো হয়েছে। যেটা মিথ্যা ও বানোয়াট।
সাবেক চেয়ারম্যান অজিয়ার চেয়ারম্যান জানান, প্রতিপক্ষের মিছিল থেকে তাদের উপর আক্রমণ করা হয়। এজন্য থানায় অভিযোগ দেয়া হয়।
এবিষয়ে থানার ওসি রফিকুল ইসলামের নাম্বার বিজি থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর আসাদুজ্জামান চার পুলিশ সদস্য আহত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
এদিকে, বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম লাল্টু মাইকিংয়ের মাধ্যমে শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
অপরদিকে, রাতে পরাজিত প্রার্থী এসএম আলতাফ হোসেন লাল্টু জানান, তাকে থানায় অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে বলে কয়েকটি ফেসবুক পেজে গুজব ছড়ানো হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।
এদিকে, এর একদিন আগে ২৯ মে কলারোয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আমিনুল ইসলাম লাল্টু বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিন গভীর রাতে উপজেলা রির্টানিং অফিস থেকে বেসরকারিভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
কলারোয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু ৪৭ হাজার ৮৪ ভোট পেয়ে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আনারস প্রতীক নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আলতাফ হোসেন লাল্টু পেয়েছেন ৪২ হাজার ৭৪১ ভোট।
এছাড়া চেয়ারম্যান পদে মোটরসাইকেল প্রতীকের আনারুল ইসলাম পেয়েছেন ৭৯৪ ভোট।
এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪৬ হাজার ৪৯৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন শেখ ইমরান হোসেন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫০ হাজার ৬১৮ ভোট নির্বাচিত হয়েছেন সেলিনা আনোয়ার ময়না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)