কলারোয়ায় শতবার ছাত্রীদেরকে যৌন হয়রানি করলেও ব্যবস্থা হয়নি শিক্ষকের বিরুদ্ধে
শতবার মাদ্রাসা ছাত্রীদের যৌন হয়রানির ও কয়েকবার অনৈতিক অবস্থা ধরাপড়ার ঘটনায় সাতক্ষীরার কলারোয়ার এক মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে কয়েক দফায় তদন্ত হয়েছে। তবে মাদ্রাসা প্রধানের প্রতিবেদন না পাওয়ায় কোন ব্যবস্থা হয়নি। সোমবার ( ২১ নভেম্বর) সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও অভিভাবকরা।
অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ভুট্টো কলারোয়া উপজেলার কুছুডাঙ্গা এলাহি বক্স দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (শরীরচর্চা)। তিনি একই এলাকার চাঁদ আলী মোড়লের ছেলে।
জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে কুশোডাঙ্গা আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে চাকুরী শুরু করেন রফিকুল ইসলাম ভুট্টো। সেখানে ছাত্রীর সঙ্গে কু-সম্পর্কে জড়ালে ১৯৯৮ সালে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন । পরে চাপে পড়ে ওই ছাত্রীকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর ২০০০ সালে তার খালাত ভাই ও কুশডাঙ্গা এলাহিবক্স দাখিল মাদ্রাসার সভাপতি আব্দুল আহাদ সরদার সহযোগিতায় মাদ্রাসায় চাকরি শুরু করেন ভুট্টো।
স্থানীয়রা জানান, চাকরির শুরু থেকেই শুধুমাত্র ছাত্রীদের প্রাইভেট পড়ান ভুট্টো। শরীরচর্চার শিক্ষক হলেও ইংরেজি, অংক এবং বিজ্ঞানসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পড়ান তিনি। প্রাইভেট পড়তে গেলেই তার পছন্দমত উঠতি বয়সী ছাত্রীদের পরীক্ষায় ভালো নম্বর দেওয়ার লোভ দেখিয়ে খারাপ সম্পর্কে জড়াতে বাধ্য করত সে।
কচু ডাঙ্গা এলাইবক্স দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যুৎসাহী সদস্য জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমি পাঁচ বছর ধরে কুশোডাঙ্গা এলহীবক্স দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। মাদ্রাসার শরীরচর্চার শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ভুট্টোর বিরুদ্ধে চাকরির শুরু থেকে এ পর্যন্ত শতবার শীলতাহানের অভিযোগ করেছে অভিভাবকরা ও ছাত্রীরা । এছাড়া অশ্লীল কাজে লিপ্ত থাকা অবস্থায় সাতবার ধরাও পড়ে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে এক ছাত্রীর সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করে তাকে অবৈধ গর্ভপাত ঘটায়। এ ঘটনার পর আমি সহ ম্যানেজিং কমিটির সদস্যরা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করি। জেলা প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদ মহোদয়কে বিষয়টি তদন্তের নির্দেশনা দেয়। তিনি তদন্ত শেষে ১৯ সালের নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখে প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনে তার অপকর্মগুলো উঠে আসে । প্রতিবেদনে তিনি অভিযুক্ত রফিকুল ইসলামকে মাদ্রাসা থেকে অপসারণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট সুপারিশও করেন।
এদিকে, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু সাঈদের সুপারিশের ভিত্তিতে চলতি বছরের ১৮ মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাদ্রাসা শাখা ৪ এর সিনিয়র সহকারী সচিব শাহনাজ মিথুন মুন্নী স্বাক্ষরিত এক পত্রে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়। পরে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনার পরিদর্শক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন পুনরায় তদন্ত শুরু করেন। তদন্তে তিনি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের তদন্ত প্রতিবেদনের সাথে একমত পোষণ করেন। এবং গত জুন মাসের ৫ তারিখে মাদ্রাসার সুপারের কাছে এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চান। তবে পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও সুপার তার মন্তব্য প্রতিবেদন জমা দেননি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে কুশোডাঙ্গা এলাহী বক্স দাখিল মাদ্রাসার সুপার আবু ইউসুফ বলেন, আর দেড় বছর পর আমি চাকরি থেকে অবসরে যাবো। তাছাড়া আমার বাড়ি অনেক দূরে, একারণে আমি কোন ঝামেলায় জড়াতে চাই না। তিনি বলেন, মন্তব্য প্রতিবেদন আমার কাছে চাইলেও সভাপতি নির্দেশ ছাড়া আমি মন্তব্য প্রতিবেদন দিতে পারিনি। সভাপতি প্রতিবেদন দিতে নিষেধ করায় এখনো দেয়নি।
মাদ্রাসা সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, বর্তমানে এডহক কমিটি দিয়ে মাদ্রাসা চলছে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন হলে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
এবস বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকদের সাথে কোন মন্তব্য করবেন না বলে জানান অভিযুক্ত শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ভুট্টো।
এদিকে, খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণে আশ্বাস দিয়েছেন সাতক্ষীরার জেলা প্রসাশক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)