জনজীবন বিপর্যস্থ
টানা বৃষ্টিতে কলারোয়ায় পানিবন্দি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-রাস্তা, তলিয়ে গেছে ঘের-পুকুর
কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: গত ৩ দিনের টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার কলারোয়ার জনজীবন বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে মাছের ঘের ও পুকুর, ফসলের ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাড়িঘর ও রাস্তা। ঘর থেকে বের হতে না পেরে ও কাজ করতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন দিনমজুর, ভ্যানচালক ও শ্রমজীবী খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ। ক্ষতি হয়েছে আগাম শীতকালীন সবজি চাষীদেরও।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাত পর্যন্ত অবিরাম ভারি, হালকা ও মাঝারি বৃষ্টিতে স্থবির হয়ে পড়েছে গোটা কলারোয়া উপজেলা। গত ৩দিনে টানা বৃষ্টির পাশাপাশি দিনভর আকাশ ছিলো অন্ধকারাচ্ছন্ন। মানুষের পাশাপাশি পশু-পাখিদেরও জড়সর হয়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে কদর বেড়েছে ছাতার। বাজারঘাটের অনেক দোকানপাট বন্ধ। যেগুলো খোলা আছে তাতেও বেচাকেনা নিন্মমুখি। অনেকে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না।
কলারোয়ার বুক চিরে যাওয়া বেত্রবতী নদী, পার্শ্ববর্তী কপোতাক্ষ নদ এবং সীমান্তবর্তী ইছামতি নদী ও সোনাই নদীতে পানি টয়টুম্বুর করছে। টানা বৃষ্টির কারণে এ নদীগুলোর তীরবর্তী অনেকের বাড়ির আঙিনা ও ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে।
উপজেলার শত শত মাছ চাষের ঘের ও পুকুর পানিতে থৈ থৈ করছে, অনেক ঘের-পুকুর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। রাস্তা-ঘাট, বাড়ির আঙিনায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
কলারোয়া বেত্রবতী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ও কলারোয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক রাশেদুল হাসান কামরুল জানান, ‘তার স্কুলের আঙিনা, বারান্দা ও ক্লাসরুম পানিবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এমনকি পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড মির্জাপুরের বিভিন্ন এলাকা ও রাস্তাঘাট পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অনেকের বাড়ির আঙিনায় পানি উঠেছে।’
তিনি আরো জানান, ‘পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থার চরম বিপর্যয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অধিকাংশ নাগরিক পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। শিক্ষার্থীদের স্কুলের পড়া-লেখা বাধাগ্রস্থ হচ্ছে। গোটা পৌর এলাকার প্রায় একই চিত্র।’
কলারোয়া বাজারের পরিবহন কাউন্টার ব্যবসায়ী মনিরুল আলম টিটু জানান, ‘তার বাড়ির আঙিনা ও কয়েকটি ঘর পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।’
তুলশীডাঙ্গা গ্রামের ভ্যান চালক নাসির জানান, ‘বাড়ি ও আশপাশের রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টির কারণে ভ্যান নিয়ে বাইরে বের হয়ে ভাড়া পাওয়াও যাচ্ছে না। প্রতিদিন চাল-তরকারি কিনে সংসার চালাতে হয়। গত ৩দিন আয় না থাকায় কষ্টে আছি।’
দিনমজুর আজিজ জানান, ৩দিন ধরে ঘরে বসে আছি। কাজকর্মে যেতে পারছি না। পরিবার নিয়ে সমস্যায় পড়েছি।’
মাছের ঘের ব্যবসায়ী আব্দুল হক জানান, ‘অনেকের মাছের ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। কেউ কেউ নেট-পাটা দিয়ে মাছ ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। কারো কারো ঘের-পুকুরের আইল সমান পানি থৈ থৈ করছে।’
চন্দনপুরের কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, ‘ফসলের ক্ষেতে অতিরিক্ত পানি জমে যাওয়ায় আবাদ নষ্ট হচ্ছে।’
এদিকে, পৌরসভা ও উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাড়ির আঙিনা, রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। পর্যাপ্ত ও যুগোপযোগী ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে অনেকে বলছেন।
সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল থেকে রোববার দূপুর পর্যন্ত সাতক্ষীরায় ১৪২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
চন্দনপুর ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফারুক আনছারী জানান, ‘অনেক ফসলী মাঠে অতিরিক্ত পানি জমে গেছে। আগাম শীতকালীন সবজি চাষীরা পড়েছেন বিপাকে। গ্রামাঞ্চলের সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ রয়েছেন কষ্টে।’
কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) জহুরুল ইসলাম জানান, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে জলাবদ্ধতার খবর শুনতে পেরেছি। ইতোমধ্যে পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ারকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল রাখার তাগিদ দিয়েছি। উপজেলাব্যাপী অচিরেই জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)