দুদকের ১১ অভিযোগের জবাব দিলেন শরীফ
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গতকাল রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) সংবাদ সম্মেলনে যেসব অভিযোগ তুলেছে, সম্প্রতি চাকরি হারানো কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন গণমাধ্যমে সেসব অভিযোগের বিপরীতে লিখিত জবাব দেন। একইসঙ্গে অভিযোগগুলোর বিষয়ে ব্যাখ্যাও দেন তিনি।
দুদকের করা ১১ অভিযোগের বিপরীতে শরীফের ব্যাখ্যা
১. দুদক সচিবের আনা অভিযোগে বলা হয়, শরীফ আদালতের অনুমতি ছাড়া লিখিত ও মৌখিকভাবে ৩৩টি ব্যাংক হিসাব জব্দ করেন, যা কমিশনকে বিব্রত করেছে। এ প্রসঙ্গে শরীফ বলেন, ‘আমি ব্যাংকে টাকা জব্দ করার আদেশ দিইনি। তদন্তের স্বার্থে ব্যাংকে অনুরোধপত্র দিয়েছিলাম। অনুরোধপত্রে এটাও লেখা ছিল যে, বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে এ ব্যাপারে শিগগিরই অবহিত করা হবে। তাৎক্ষণিকভাবে এটা করা হয়েছিল শুধু অপরাধলব্ধ টাকাগুলো উত্তোলন সাময়িকভাবে বন্ধ করার জন্য।’
২. কক্সবাজারে এক সার্ভেয়ারের বাসা থেকে র্যাবের জব্দ করা ৯৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে না রেখে এবং কর্তৃপক্ষকে অবহিত না করে ১ বছর ৪ মাস নিজের হেফাজতে রেখেছেন শরীফ। এ অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, জব্দ করা আলামতের টাকা তদন্তকারীর কাছে রাখা যাবে না, এমন বাধ্যবাধকতার কথা আইনে নেই। জব্দকৃত আলামতের টাকা অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তার কাছে ছিল, এমন নজির দুদকে প্রচুর আছে।
৩. অভিযোগ-সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তিকে (সিআইপি মো. ইদ্রিস) জবানবন্দি গ্রহণের জন্য নিজ দপ্তরে ডেকে এনে নির্মমভাবে প্রহারের অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেন শরীফ। তার ভাষ্য, মো. ইদ্রিসকে ভূমি অধিগ্রহণ মামলার আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার এবং আদালতের আদেশ নিয়েই রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। ইদ্রিস ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
৪. চট্টগ্রাম থেকে পটুয়াখালীতে বদলির পরেও দীর্ঘদিন কর্মস্থলে না গিয়ে কমিশনের আদেশ অবজ্ঞা করার অভিযোগ করা হয়েছে শরীফের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে তার জবাব, তিনি যখন দুদককে লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, তখন তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি চাকরিবিধি অনুযায়ী অনিবার্য কারণবশত বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানকাল সর্বোচ্চ ৩০ দিন বর্ধিত হতে পারে। করোনায় আক্রান্ত থাকার সনদ (চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের সত্যায়িত করা) জমা দেওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়।
৫. বদলির আদেশের বিরুদ্ধে এক আইনজীবীকে দিয়ে হাইকোর্টে রিট করানো এবং পত্রিকায় খবর ছাপানোর অভিযোগ প্রসঙ্গে শরীফের বক্তব্য, ‘আমার বদলির আদেশের বিরুদ্ধে শহিদুল ইসলাম নামে যে ব্যক্তি রিট করেছিলেন, তাকে আমি চিনি না। এমনকি আমার চাকরিচ্যুতির পর ১০ জন আইনজীবী উচ্চ আদালতে স্বপ্রণোদিতভাবে আমার নিরাপত্তা চেয়ে হাইকোর্টে চিঠি দিয়েছেন, সেটাও আমার জানার বাইরে ছিল। কেউ যদি নিজ উদ্যোগে আমাকে নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেন, সে ক্ষেত্রে আমার কী করণীয় থাকতে পারে।’
৬. চট্টগ্রামের কর্মস্থল ত্যাগের সময় শরীফের দায়িত্বে থাকা অনুসন্ধান ও তদন্তের নথিপত্র বুঝিয়ে না দেওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছে দুদকের সংবাদ সম্মেলনে। এর জবাবে শরীফ বলেন, নথি বুঝে নেওয়ার জন্য তাকে চট্টগ্রাম থেকে অবমুক্তির আগে গত বছরের ৩০ জুন ৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়। করোনার কারণে ১ জুলাই থেকে কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করা হয়। ১৯ জুলাই তার করোনা ধরা পড়ে। বিভাগীয় মামলায় গত বছরের ২২ আগস্ট নির্দেশপ্রাপ্তির পর নথি হস্তান্তরের ২ মাস ২১ দিন বিলম্বের অভিযোগ ভ্রান্তিকর। তিনি বলেন, তার কাছে ১৩০টি নথি ছিল। এগুলোর চালান তৈরি এবং সিডিতে সংরক্ষণ করা সময়সাপেক্ষ ছিল।
৭. কক্সবাজার জেলার ভূমি অধিগ্রহণ-সংক্রান্ত মামলার তদন্তে কমিশনের বিধিমালা অনুসরণ না করার অভিযোগ প্রসঙ্গে শরীফ বলেন, ‘আমার দাখিল করা প্রতিবেদনে ভুলত্রুটি থাকলে তদারককারী কর্মকর্তা সংশোধনের জন্য নির্দেশনা দিলেন না কেন? তারপরও দুদকের অফিস আদেশ অনুযায়ী যদি কোনো জিজ্ঞাসা বা অনুসন্ধান থাকত, তাহলে তা আমাকে দিয়েই সংশোধন করানো যেত।’
৮. কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (কেজিডিসিএল) অনিয়ম তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার পর কর্তৃপক্ষকে চাপ দিয়ে ছোট ভাই শিহাব উদ্দিনকে চাকরি দেওয়া, আরেক আত্মীয় শাহাবউদ্দিনকে জাল সনদের মাধ্যমে সেখানে চালক পদে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন দুদক সচিব। এ বিষয়ে শরীফ উদ্দিন বলেন, বাবার কর্মসূত্রে তারা চট্টগ্রামের ষোলশহরে রেলওয়ে কলোনিতে থাকতেন। তার পাশেই কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। ১৯৯২ সাল থেকে তারা সেখানে বড় হয়েছেন। ছোট ভাই শিহাব উদ্দিনসহ এলাকার শিক্ষিত অনেক বেকার যুবক ২০১৭ সাল থেকে ২ বছরের চুক্তিতে আউটসোর্সিং ঠিকাদারের মাধ্যমে সেখানে চাকরি করছেন। যখন শিহাব সেখানে নিয়োগ পেয়েছেন, তখন কর্ণফুলী গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছিলেন খায়েজ আহম্মদ মজুমদার। শরীফের ভাষ্য, ‘উনাকে (খায়েজ আহম্মদ) জিজ্ঞেস করলেই জানা যাবে, আমি তাকে আমার ভাইয়ের চাকরির জন্য কোনো অনুরোধ করেছি কি না। আর শিহাবউদ্দিন নামে কাউকে আমি চিনি না, এ নামে আমার কোনো আত্মীয় নেই।’
৯. শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন, অনুসন্ধানের নামে বিভিন্ন ব্যক্তিকে নোটিশ দিয়ে ডেকে এনে হয়রানি করার অভিযোগ করেন দুদক সচিব। শরীফের দাবি, তার সাড়ে ৭ বছরের চাকরিজীবনে এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। যদি থাকত, দুদক বিস্তারিত প্রকাশ করত।
১০. পটুয়াখালীতে দুদকের পরিচয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে হয়রানি করার অভিযোগ প্রসঙ্গে শরীফ বলেন, ‘পটুয়াখালীতে আমার কাছে কোনো অনুসন্ধান বা তদন্তের কোনো নথিই ছিল না। এ বিষয়ে কারও সঙ্গে কথা বলা বা হয়রানি করার প্রশ্নও ওঠে না।’
১১. গত ৩০ জানুয়ারি জীবননাশের হুমকির অভিযোগে চট্টগ্রামের খুলশী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিলেন শরীফ উদ্দিন। এ বিষয়ে দুদক সচিব বলেন, শরীফ এ ঘটনা দুদককে অবহিত করেননি। অবহিত করলে কমিশন ব্যবস্থা নিতে পারত। এ বিষয়ে শরীফের বক্তব্য, জিডি করার পর ৬ ফেব্রুয়ারি দুদকের সচিব ও ৯ ফেব্রুয়ারি দুদকের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের কাছে তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছেন। এ ছাড়া মুঠোফোনে দুদকের কয়েকজন কর্মকর্তার কাছে হুমকির বিষয়টি জানিয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তারা তাকে জিডি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)