নড়াইলের নুপুর কর্মকার: ১০ হাজার মিটারে ব্রোঞ্জ জিতে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীর চমক
নড়াইলের নূপুর কর্মকারের ঘোরাঘুরির সীমানাটা এত দিন ছিল নড়াইলের লোহাগড়া বাজার পর্যন্ত। প্রথমবারের মতো ঢাকায় এসে বিস্ময়ের চোখেই সবকিছু দেখছিল ১২ বছর বয়সী অ্যাথলেট। এবারই প্রথম বাংলাদেশ অ্যাথলেটিকস ফেডারেশন অন্তর্ভুক্ত করেছে মেয়েদের চারটি নতুন ইভেন্ট। এই ইভেন্টগুলোর মধ্যে ৪০০ মিটার হার্ডলসে তামান্না আক্তার, ট্রিপল জাম্পে মোসাম্মত জান্নাতুল, ৫ হাজার মিটারে শামসুন্নাহার ও ১০ হাজার মিটার দৌড়ে সোনা জিতেছেন রিংকি বিশ্বাস।
তবে এগুলো ছাপিয়ে বনানী আর্মি স্টেডিয়ামে সবার নজর কেড়েছে ১০ হাজার মিটার দৌড়ে অংশ নেওয়া নূপুর কর্মকার। প্রথমবার অংশ নিয়েই জিতেছে ব্রোঞ্জ। জাতীয় অ্যাথলেটিকসে সর্বকনিষ্ঠ প্রতিযোগী হিসেবে পদক জিতেও যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না নূপুরের, ‘আমি যে এখানে এসে কোনো পদক জিতব, তা কখনোই ভাবিনি। প্রথমবার এসেই ব্রোঞ্জ জিতে খুব ভালো লাগছে।’
লোহাগড়া মাইকুমড়া মিতালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী নূপুর। বড় বোন নন্দিতা কর্মকারও এবার নূপুরের সঙ্গে অংশ নেন ১০ হাজার মিটার দৌড়ে। কিন্তু বোনকে পেছনে ফেলে ব্রোঞ্জ জেতেন নূপুর। এই ইভেন্টে সোনাজয়ী নৌবাহিনীর রিংকি বিশ্বাস সময় নেন ৪২ মিনিট ৩৪.১০ সেকেন্ড। সেনাবাহিনীর পাপিয়া খাতুন রুপা জেতার পথে সময় নেন ৪২ মিনিট ৩৫.৬০ সেকেন্ড। আর ব্রোঞ্জ জিততে নূপুরের লেগেছে ৪২ মিনিট ৫৬.৪৫ সেকেন্ড।
নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের কোচ দিলীপ চক্রবর্তী জাতীয় অ্যাথলেটিকসে নূপুরকে এনেছেন। প্রথমবার এসেই নূপুর পদক জেতায় খুশি কোচ। এত ইভেন্ট থাকতে কেন নূপুরের জন্য ১০ হাজার মিটার দৌড় বেছে নিলেন?
দিলীপ চক্রবর্তী যেন জানতেন এই ইভেন্টে একটা ভালো কিছু উপহার দিতে পারবে নূপুর, ‘ও বড় বোনের সঙ্গে মাঠে আসত। নিয়মিত অনুশীলন করত। ওকে দেখে ভালো অ্যাথলেট মনে হয়েছিল আমার। যদি ওকে ১০০, ২০০ বা ৪০০ মিটারে অনুশীলন করাতাম, খুব বেশি উন্নতি হতো না। আর যখনই শুনেছি প্রথমবার মেয়েদের ১০ হাজার মিটার চালু করেছে ফেডারেশন, আমিও সুযোগটা নিয়েছি। কিন্তু মাত্র ১৫ দিনের অনুশীলনে ও যে পদক জিতে নেবে, সেটা ভাবিনি। ৫ বছর পর ও বাংলাদেশে এই ইভেন্টে সেরা দৌড়বিদ হবে।’
নূপুর কর্মকার লোহাগড়া শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়ামে প্রতিদিন সকালে তিন ঘণ্টা অনুশীলন করেই ব্রোঞ্জ জিতেছে নূপুর। স্কুলের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় লংজাম্প, হাইজাম্প ও ১০০ মিটারে সোনা জিতেছে নূপুর। কিন্তু এসবের চেয়ে ১০ হাজার মিটার পছন্দ নূপুরের, ‘স্যার (দিলীপ চক্রবর্তী) আমাকে এই ইভেন্টে দৌড়াতে বলেছেন। এখানে এসে একটা পদকও জিতেছি। তাই অন্যগুলোর চেয়ে এটাই বেশি ভালো লেগেছে।’
নূপুরের বাবা বিষ্ণু কর্মকার লোহাগড়া বাজারের সবজির আড়তের শ্রমিক। বাবার উৎসাহে খেলাধুলায় আসা নূপুরের, ‘বাবা চান আমি যেন বড় খেলোয়াড় হই। এবার পদক জিতেছি শুনে বাবা খুব খুশি হয়েছেন। ভবিষ্যতে বিকেএসপিতে ভর্তি হতে চাই।’
নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের অ্যাথলেট নন্দিতা, রিংকি সবাই এরই মধ্যে নৌবাহিনীতে চাকরি পেয়েছেন। কোচের আশা একদিন নূপুরও ট্র্যাকে দৌড়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে, ‘রিংকির সঙ্গে একই মাঠে নূপুর অনুশীলন করে। রিংকির চাকরির সংস্থান হয়েছে। নূপুরের বড় বোন নন্দিতাকেও নেভিতে দিয়েছি। আশা করি একদিন নূপুরও ঠিকই কোনো না কোনো সংস্থায় চাকরি পেয়ে যাবে। অ্যাথলেটিকসে ওর ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল দেখছি।’
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)