নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে তালের চাষাবাদে লাভবান হচ্ছে চাষিরা
নড়াইলে বাণিজ্যিকভাবে তালের চাষ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ। নড়াইলের ৩টি উপজেলার গ্রামগুলোতে সারি সারি তালগাছগুলোতে কচি তালে ভরে গেছে। গ্রামগঞ্জ হয়ে তাল এখন শহরের অলিগলিতে দেখা মিলছে। এ জেলায় এখন বাণিজ্যিকভাবে তাল চাষাবাদ হচ্ছে। চাষ লাভজনক হওয়ায় এদিকে ঝুঁকছেন এই এলাকার চাষিরা। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে এখন রাজধানীসহ সারা দেশেও যাচ্ছে ফরমালিনমুক্ত তালের শাঁস।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, কালের বিবর্তনে নড়াইলের পল্লি থেকে অনেকটাই ম্লান হয়ে গিয়েছিল তাল গাছ। তবে বর্তমানে মৎস্য চাষিরা হাজার হাজার ঘেরের পাড়ে তালের আঁটি রোপণ করে ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে একদিকে, ঘেরের পাড়ের মাটি শক্ত করে ধরে রাখা তথা মাটির ক্ষয়রোধের পাশাপাশি বজ্রপাত প্রতিরোধকেরও কাজ করছে এই তালগাছ। একই সঙ্গে জেলার হাট-বাজারে তালের শাঁসের বেশ কদর বেড়েছে। সেই সঙ্গে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। ফলে মৌসুমি ফল হিসেবে তালের শাঁস গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখছে।
অনেক ফল যখন ফরমালিনের বিষে নীল, অন্যদিকে তালের শাঁসে ফরমালিনের ছোঁয়া লাগেনি। কারণ, দীর্ঘদিন তাল রেখে দিলেও নষ্ট হয় না। তবে প্রচণ্ড দাবদাহে এর কদর বেড়ে যায় আরও কয়েকগুণ। সারা দেশের দূর-দূরান্তে সরবরাহ করে বেশ ভালোই লাভের মুখ দেখছেন সরবরাহকারীরা।
সরেজমিন দেখা যায়, নড়াইল সদরের ভদ্রবিলা ইউপির দিঘলিয়া বাজারের একটি টিনশেডের অস্থায়ী গোডাউন থেকে বড় বড় ট্রাকে লোড করা হচ্ছে হাজার হাজার সবুজ রংয়ের কাঁচা তালের ছড়া। আর ঘাম ঝড়িয়ে এসব ফল যানবাহনে ওঠানোর কাজে সহায়তা করছেন বেশ কয়েকজন শ্রমিক।
স্থানীয় ফল সংগ্রহকারী মহাজন মোকামরমের আড়তঘর এটি। যিনি ছোট ফড়িয়াদের মাধ্যমে গ্রাম থেকে স্থানীয় কৃষকদের তাল, কচি ডাব প্রভৃতি ফল সংগ্রহ করে রপ্তানি করে থাকেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়।
অন্তত ২০-২৫জন পাইকার রয়েছেন মোকামরমের আড়তঘরে। যারা গ্রাম-গঞ্জ থেকে তাল কিনে এনে পাইকারি বিক্রি করেন তার ঘরে এবং এসব পাইকারদের মাধ্যমে ফল সংগ্রহ করে প্রতিদিন অন্তত কয়েক হাজার তাল সরবরাহ করছেন রাজধানীর কাওরানবাজার, রংপুর ও রাজশাহীসহ সারা দেশে।
৫ টাকা দরে তাল কিনে ৮-১০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বিভিন্ন আড়তঘরগুলোতে। কিন্তু সেখানে পরিবহণ খরচসহ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে।
তাল সংগ্রহকারী আশরাফুল আলম জানান, তিনি এলাকায় অসংখ্য মৎস্য ঘেরে ঘুরে ঘুরে রোপণ করা সারি সারি তাল গাছ থেকে প্রতি ১০০টি কচি তাল শাঁস ৩০০-৩৫০ টাকা দরে কিনে আড়তে ৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন গত দুই মাস ধরে।
ফড়িয়া আহমেদ হোসেন মোল্যা জানান, শুরুতে তেমন লাভের মুখ না দেখলেও এখন বেশ ভালোই আছেন তিনি। সকাল হলেই বেড়িয়ে পড়েন তালের সন্ধানে। পরে বিকালের মধ্যে সংগ্রহের ফল বিক্রি করেন আড়তঘরে। দিন দিন তালের শাঁস বিক্রি আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নড়াইল কার্যালয়ের উপপরিচালক (ডিডি) দীপক কুমার রায় জানান, আমার জানা মতে, কচি তালের শাঁস স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে রপ্তানি করা হচ্ছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। আমরা মাঠপর্যায়ে কৃষকদের তালগাছ রোপণের বিষয়ে আরও উদ্যোগী করতে উদ্বুদ্ধ করছি।
নড়াইলের সিভিল সার্জন ডা. নাছিমা আকতার বলেন, তালের শাঁসে ভিটামিন এ, বি ও সি, জিংক, পটাশিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়ামসহ অনেক খনিজ উপাদান রয়েছে। এছাড়া গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দূর করে। এমনকি কচি তালের শাঁসে রক্তশূন্যতা দূর করাসহ চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়ায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও বাড়িয়ে দেয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)