দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠক
ভারতের ভ্যাকসিনের ট্রায়াল উৎপাদন বাংলাদেশে
করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবিলায় প্রক্রিয়াধীন ভারতীয় ভ্যাকসিন ‘কোভ্যাকসিন’ যথাযথ প্রক্রিয়া শেষ করতে পারলে, এর ট্রায়াল ও উৎপাদন যৌথভাবে বাংলাদেশে করতে প্রস্তাব দিয়েছে ভারত।
মঙ্গলবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে ভারতের এ প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে বাংলাদেশ।
বৈঠকে ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভার্চুয়াল বৈঠক আয়োজনে সম্মত হয়েছে দুই দেশ।
এ ছাড়া এ বৈঠকে তিস্তাসহ ছয়টি নদীর পানিবণ্টন সমস্যা সমাধানে আগ্রহ দেখিয়েছে ভারত।
সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে ভারত।
এদিন বিকালে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নেতৃত্বে ষষ্ঠ যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক হয়।
কভিড-১৯ মহামারীর কারণে এবারের বৈঠক ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর নিজ নিজ দেশ থেকে এ বৈঠকে যোগ দেন।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, চলমান মহামারীর প্রেক্ষাপটে উভয় পক্ষই স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেছে। বিশেষত কভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সরবরাহ, বিতরণ এবং সহ-উৎপাদনের ক্ষেত্রে। ভবিষ্যতে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন সরবরাহের জন্য বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়ে ভারতের আশ্বাসের প্রশংসা করেছেন ড. মোমেন।
উভয় পক্ষই সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করতে সম্মত হয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর পর্যায়ে ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হবে দুই দেশের মধ্যে। ঐতিহাসিক মুজিবনগর-কলকাতা সড়ক পুনরায় চালু করা হবে। বিজয় এবং বন্ধুত্বের ৫০ বছর উপলক্ষে ওয়েবসাইট চালু, দুই পক্ষই বঙ্গবন্ধু ও গান্ধীকে নিয়ে ডিজিটাল জাদুঘর প্রতিষ্ঠায় একমত হয়েছে। ভারত সরকারও ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে একটি স্মারক স্ট্যাম্প বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শে তাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাবে।
বাংলাদেশ পক্ষ ভারতীয় পক্ষকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য পারস্পরিকভাবে ভিসা এবং স্থলসীমা নিষেধাজ্ঞাগুলো সহজতর করতে। বিশেষ করে যারা মেডিকেল রোগী এবং শিক্ষার্থীরা ভারতের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। সাফটার আওতায় দেওয়া শুল্ক ছাড়ের জন্য বাংলাদেশ ভারতকে ধন্যবাদ জানিয়েছে। কারণ শুল্কবিহীন বিভিন্ন বাধা এবং পর্যাপ্ত বাণিজ্য সুবিধার অভাব বাংলাদেশের প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে ভারতে পণ্য বিশেষত উত্তর-পূর্ব দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে।
বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মধ্যে তিস্তাসহ ছয় নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়।
এসব নদীর পানিবণ্টন সমস্যার সমাধান চেয়েছে বাংলাদেশ। ভারত সমাধানের আগ্রহ দেখিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, সীমান্ত হত্যা বাংলাদেশ-ভারত উভয়ের জন্যই লজ্জার। সীমান্ত হত্যা নিয়ে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন। এ ইস্যুতে ভারতও একই প্রকার মনোভাব প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া এই যে সামান্য পিঁয়াজ, এটা আমাদের বাজারকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা করতে আলোচনা হয়েছে। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিস্তা চুক্তির সমাধান হবে।
ন্যায্যতার ভিত্তিতে তিস্তাসহ ৭টি নদীর পানিবণ্টন শিগগিরই হবে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, অভিন্ন নদ-নদীগুলোর পানিবণ্টন, ভারতীয় ঋণের (লাইন অব ক্রেডিট, সংক্ষেপে এলওসি) আওতাধীন প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়নসহ দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে। এবারের বৈঠকেও সর্বশেষ জেসিসি বৈঠক ও শীর্ষ নেতাদের নির্দেশনা বাস্তবায়নে অগ্রগতি এবং সম্পর্কের অবস্থা পর্যালোচনা করা হয়।
ড. মোমেন সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্করকে পিঁয়াজের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য রপ্তানির দিকে নজর রাখতে আহ্বান জানিয়েছেন, যেহেতু এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারকে প্রভাবিত করে। তিনি সমতার ভিত্তিকে জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ-ভারত বিনিয়োগ নীতি প্রয়োগে।
বৈঠককালে বাংলাদেশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, জাতিসংঘ সুরক্ষা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে ভারত রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে স্থায়ী সমাধানের জন্য আরও অর্থবহ ভূমিকা পালন করবে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)