মাতৃভাষা বাংলার মূল্যয়নে শেখ আবির এর খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনোভাব
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে (কলারোয়া নিউজ) এর বিশেষ প্রতিবেদন এটি। এই প্রতিবেদনে তরুণ যুক্তিবাদী বিতার্কিক শেখ আবির আহম্মেদ এর কাছ থেকে তার মতে বাংলা ভাষার বর্তমান গতিধারা নিয়েই এইি প্রতিবেদন। সে মাতৃভাষার মূল্যয়ন বিষয়ে বিভিন্ন ভিডিও করে মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে যাচ্ছে।
সে বলে
আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। কিন্তু বর্তমমান বাংলাদেশের অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় বাংলাদেশের মাতৃভাষা বাংলিশ(বাংলা ভাষা ও ইংরেজি ভাষা মিলিয়ে যে ভাষা তাকে বাংলিশ ভাষা বলে) বন্ধুুুু-বান্ধব, পিতা-মাতা, ভাই-বোন,ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারে ইত্যাদিতে কথা বলার সময় সকল ক্ষেত্রে আমাদের দ্বারা বাংলা ভাষা অপমানিত হচ্ছে। বর্তমান সময় কথা বলার সময় অনেকেই তার সম্পূর্ণ কথার অর্ধেকের বেশী ইংরেজি শব্দ দ্বারা ভরে ফেলছে। ফলে সে যে কোন ভাষায় কথা বলছে তা বোঝা-ই দায়। আমি ইংরেজি ভাষাকে অপমান করছি না। ইংরেজি যেহেতু আন্তর্জাতিক ভাষা এবং বাংলাদেশেরও অন্যতম ভাষা তাই মুখে কথা বলার সময় দুই একটা ইংরেজি শব্দ আসতে পারে। তাই বলে বাংলায় কথা বলার সময় একটি বাক্যের অর্ধেক বা অর্ধেক’র বেশী ইংরেজি শব্দ ব্যাবহার করা উচিত নয়। আমি বলছি না বাঙালি হয়ে ইংরেজি শেখা যাবে না। বাংলা ভাষাই শিখতে হবে। একটি আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে এ ভাষার প্রতি আমাদের পান্ডিত্য দরকার রয়েছে। তবে সেটা বাংলা ভাষাকে অপমান করে নয়। বলতে খারাপ লাগে, বাংলাদেশের ভদ্র-শিক্ষিত সমাজের অনেকেই প্রচন্ডভাবে বাংলা ভাষাকে অপমান করছে। বাংলায় কথা বলতে গিয়ে বাংলার মধ্যে এমনভাবে ইংরেজি শব্দ ঢুকাচ্ছে যার ফলে বাংলা ভাষায় মর্যাদা ক্ষুন্ন হচ্ছে। ইংরেজিতে বললে পুরা বক্তব্য ইংরেজিতেই দেন না আর বাংলায় বললে পুরা বক্তব্যটা বাংলা ভাষায় বলার চেষ্টা করুণ। তাতে দুই ভাষার মর্যাদা-ই সমুন্নত থাকবে।
এবার আসা যাক ফেসবুক,ম্যাসেঞ্জার, ইন্সটাগ্রাম, ইমো,টুইটর ইত্যাদি’র দিকে। আমাদের বাংলা ভাষার সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে এসব মাধ্যম হতে পারে অন্যতম মাধ্যম কিন্তু অস্তিত্বহীন অনেক বাঙালির দ্বারা বাংলা ভাষা সম্প্রসারণের এসব মাধ্যমগুলি হয়ে উঠছে বাংলা ভাষা অপমানের অন্যতম মাধ্যম। ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার ইত্যাদি মাধ্যমগুলিতে আমরা এখন এভাবে লিখি (kmn aco?,
vlo aci. tmi?,) ইত্যাদি বাংলিশ মাধ্যমে। যার ফলে আমরা বাংলা ভাষাকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দুইভাবেই অপমান করছি। চীনদেশ’র একটি বৈশিষ্ট্য আমার খুব ভালো লাগে তাঁদের দেশের বিমানবন্দর,অফিস, আদালত সহ দেশের বড় বড় কার্য ক্ষেত্রে ইংরেজি ভাষার ব্যাবহার একদম নেই বললেই চলে (খুবই কম)। আপনাদের কোনো আত্নীয়-স্বজন সেখানে থাকলে খোঁজ নিয়ে দেখবেন তারাও এটি বোলবে। এবার প্রশ্ন উঠতে পারে চায়নারা প্রযুক্তি খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এত উন্নতি সাধন করছে, সামান্য ইংরেজি ভাষা তারা ভালো পারে না?? বিষয়টি আসলে তা নয়। প্রযুক্তি,চিকিৎসা,বাণিজ্য ইত্যাদি খাতে বিশ্বব্যাপি তাদের খ্যাতি বিদ্যমান। আর এসব খাতে উন্নতি করতেে গেলে ইংরেজিতে ভালোই পারদর্শী হতে হয়। তাদের সে সক্ষমতা আছে। কিন্তু তাদের দেশে বিমানবন্দর, অফিস,আদালত ইত্যাদি বড় বড় সেক্টরগুলিতে তারা ইংরেজি ভাষার প্রচলন এজন্যই কমিয়ে দিয়েছে। যাতে তাদের ভাষা,সংস্কৃতি যেন বিশ্বব্যাপি ছড়িয়ে পড়ে। তাদের সাথে গভীর সম্পর্ক স্থাপন করতে, ঐ দেশে দীর্ঘ দিনের সফর করতে হলে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি জানতে হয়। কারণ, তারা ইংরেজি সহ অনান্য ভাষার প্রচলন খুবই কমিয়ে চায়নিজ ভাষার ও সংস্কৃতির প্রচলন সর্বাধিক করেছে।
সেই জায়গায় আমাদের কথাটি একটু ভাবুন তো আমরা অনেকে মনে করি আমি বাংলায় বেশী লিখলে বা কথা বললে লোকে ভাববে আমি মুর্খ। যারা এমনটি বলে বা ভাবে তারাই সবচেয়ে বড় মূর্খ।
মনে রাখবেন বিশ্বের কোনো জাতিই নিজের ভাষার জন্য প্রাণ দেই নি বাঙালি জাতি ছাড়া। তারই ফলশ্রুতিতে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। যা আমাদের জন্য অনেক সম্মান ও গর্বের বিষয়। কিন্তু, এই সম্মান, এই গর্ব বোধয় আমরা বুঝতে চাই না। হায় রে! হতভাগা অকৃতজ্ঞ জাতি আমরা। যে ভাষার জন্য বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা নিজের জীবন বিলিয়ে দিলো। সেই ভাষাকে আমরা এত ছোটো করে ফেলছি।
তাই আসুন এই আন্তর্জাতিক ভাষা শহীদ দিবসে আমরা প্রতিজ্ঞা করি,
“বাংলা ভাষা’র ব্যাবহার সর্বাধিক করি” ” নিজের ভাষার সঠিক মূল্যায়ন করি”।
ধন্যবাদ সবাইকে।
লেখক
শেখ আবির আহম্মেদ
প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি
কলারোয়া ডিবেটিং ক্লাব
সাতক্ষীরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)