যে উপায়ে বাড়াবেন হজমশক্তি


সুস্থতার জন্য হজমশক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি বাধাগ্রস্ত হলে বা কোন ধরনের সমস্যা দেখা দিলে পুরো দেহই স্থবির হয়ে পড়তে পারে। সব মানুষের হজমশক্তি এক ধরনের হয় না। একই ধরনের খাবার অনেকে হজম করতে পারে আবার অনেকে পারেন না। অনেক সময় দেখা যায় যে একই রকম খাবার খেয়েও একজন মোটা হয় কিন্তু আরেক জন হয় না।
পুষ্টিবিদদের মতে, একটা খাবারের সঙ্গে আরেকটা খাবার মিলে শোষণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এটি বাধাগ্রস্ত হলে ওজন বেড়ে যাওয়া, লিপিড প্রোফাইল বেড়ে যাওয়া, ইউরিক অ্যাসিড বেড়ে যাওয়া, রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার মতো শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হজম প্রক্রিয়ায় ঝামেলার কারণে অনেক সময় খাবার খেলেও শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি না পাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দেয়। ফলে গর্ভজাত শিশুর বিকাশ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বিবিসি বাংলা অনলাইনের একটি প্রতিবেদনে হজমশক্তি বাড়ানো কিছু উপায় সম্পর্কে বলা হয়েছ। জেনে নেয়া যাক সেগুলো।
# পর্যবেক্ষণ : একজন ব্যক্তির কোন খাবার খেলে সমস্যা হচ্ছে সেটি খেয়াল করতে হবে। আগে পুষ্টিবিদ ডা. তাসনিম হাসিন পাপিয়া জানান, আমাদের দেশে বেশির ভাগ মানুষ বোঝেই না যে কোন খাবারে তাদের সমস্যা হচ্ছে। এ জন্য তারা ধীরে ধীরে প্রায় সব ধরনের খাবার বাদ দিতে থাকে। যেমন, তেলে ভাজা খাবার, দুধ বা দগ্ধজাতীয় খাবার, টক খাবার ইত্যাদি।
যেমন অনেকের ল্যাকটো বা দুধ হজম করতে সমস্যা হয়। সে ক্ষেত্রে দুধ বা দুগ্ধ জাতীয় খাবার একেবারে বাদ না দিয়ে ধীরে ধীরে সেটার সহ্য ক্ষমতা বাড়াতে হবে। কারণ দুধ হজমে দরকারি ল্যাকটেজ নামে এক ধরনের এনজাইম শরীরে নিঃসরণ বন্ধ হয়ে গেলেও তা আবার নিঃসরণ শুরু করা সম্ভব। আর এ জন্যই কোন খাবারে হজম প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় বা সমস্যা হয় সেটি জানাটা জরুরি।
এ ছাড়া অনেক সময় নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অভাবেও হজমশক্তি দুর্বল হয়ে থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নিলে তা শক্তিশালী করা সম্ভব।
হজমশক্তি বাড়ানোর প্রক্রিয়া বা একে শক্তিশালী করার প্রক্রিয়া সবার জন্য এক রকম হয় না। ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে যে কার কোন খাবারের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে।
# শারীরিক ব্যায়াম : সব ধরনের শারীরিক ব্যায়াম হজমশক্তিকে বাড়ায় না বলে মনে করেন পুষ্টিবিদরা। মেটাবলিজম বা হজমশক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অঙ্গ মানুষের কোমরের দিকটায় বা ডায়াফ্রামের ওপর থেকে শুরু করে নিচ পর্যন্ত থাকে বলে জানান তারা। তাদের মতে, যেসব ব্যায়াম শরীরের মাঝের অংশের কর্মকাণ্ড যত ভালো হবে হজম প্রক্রিয়া তত সুন্দর হবে।
শরীরের মাঝের অংশের কর্মকাণ্ড বাড়াতে হলে বিশেষ ধরনের কিছু ব্যায়াম করতে হবে। যেমন, চেয়ারে বসার ক্ষেত্রে রিভলভিং চেয়ার ব্যবহার করলে শরীরের নড়াচড়া সহজ হয়। একই সঙ্গে বসার ক্ষেত্রে যদি টুইস্টিং পদ্ধতি অর্থাৎ শরীরের ওপরের অংশ একদিকে এবং নিচের অংশ আরেক দিকে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়।
এ ছাড়া কিছু ব্যায়াম করা যায়। যেমন, শুয়ে ৯০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে দুই পা উঁচু করে রাখতে হবে এবং পা দুটি চক্রাকারে অর্থাৎ বাম থেকে ডানে এবং ডান থেকে বামে ঘোরাতে হবে। এটা খুব ভালো কাজ করে।
স্পট জগিং বা একই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি জগিং করা যায় বা হালকা করে লাফানো-এ ধরনের ব্যায়ামও খুব উপকারী।
# খাবার : হজমশক্তি সবল করতে হলে খাবারের প্রকারটা বুঝতে হবে। যেমন খাবারে যদি শাক থাকে তাহলে সেটি অবশ্যই তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। আবার মাংস জাতীয় কিছু খেলে সঙ্গে যাতে লেবু থাকে সেটি খেয়াল রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রতিবার খাওয়া শেষ করে অল্প পরিমাণ লেবু-পানি খেলে সেটি হজমের ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করে। এ ছাড়া খাবার খাওয়া শুরু করার আগে জিহ্বাতে অল্প একটু লবণ স্পর্শ করিয়ে খাবার খেলে সেটিও হজমে সাহায্য করে।
এ ছাড়া গাট ব্যাকটেরিয়া যা হজম প্রক্রিয়াকে দ্রুততর করে সেগুলো বেশি খাওয়া যেতে পারে। প্রাকৃতিকভাবে এই ব্যাকটেরিয়ার সবচেয়ে ভালো উৎস হচ্ছে দই।
সে ক্ষেত্রে দিনের কোন একটা সময় দেড়শ থেকে দুইশ এমএল দই খাওয়া যেতে পারে।
# পর্যাপ্ত ঘুম : রাত জেগে থাকাটা হজমের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রভাব সৃষ্টি করে বলে জানান পুষ্টিবিদরা। পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, রাতের বেলা এমনিতেই পরিবেশে অক্সিজেনের পরিমাণ কম থাকে। সেই সঙ্গে রাতের বেলা ফুসফুসের বেশির ভাগ অংশ অব্যবহৃত থাকে।
যার কারণে পুরোপুরি শ্বাস নেয়া সম্ভব হয় না। আর জেগে থাকলে মানুষের সব ইন্দ্রিয় কাজ করে বলে শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতি তৈরি হয় যা হজম প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণেই হজমশক্তিকে বাড়াতে হলে বা একে বেশি কর্মক্ষম করতে হলে রাতে ঘুমানো জরুরি বলে মনে করেন তিনি।
# শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম : পুষ্টিবিদ সৈয়দা শারমিন আক্তার বলেন, শারীরিক বিভিন্ন ক্রিয়া কতটা ভালোভাবে কাজ করবে তা অনেকটাই নির্ভর করে যে শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেনের সরবরাহ আছে কিনা। আর হজম বা শোষণ প্রক্রিয়ার জন্যও অক্সিজেনের বিকল্প নেই। সে কারণেই শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম করাটা জরুরি বলে মনে করেন এই পুষ্টিবিদ। তিনি বলেন, নাক দিয়ে লম্বা করে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে লম্বা করে শ্বাস ছাড়লে দেহে অক্সিজেনের সরবরাহ বাড়ে। যাতে হজম সহজ হয়।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
