বুধবার, এপ্রিল ২৪, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

পর্ব-৫

রামাদান- শবে ক্বদর, ইতিকাফ ও ফিতরা

রামাদান- শবে ক্বদর, ইতিকাফ ও ফিতরা- পর্ব-৫
*******************

শবে ক্বদর

*” রামাদানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হলো শেষ দশ রাত | রাসূল (সা.) রামাদানের প্রথম ২০ রাতে কিয়ামুল্লাইল করার আগে বা পরে কিছু সময় ঘুমাতেন | কিন্তু রামাদানের শেষ ‘দশ’ রাতে তিনি সারারাত বা প্রায় সারারাত জাগ্রত থেকে কিয়ামুল্লাইল ও ইবাদতরত থাকতেন | শুধু তাই নয়, তিনি তার পরিবার-পরিজনকে ও জাগিয়ে দিতেন |

*” হাদীস “*

حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، عَنْ أَبِي يَعْفُورٍ، عَنْ أَبِي الضُّحَى، عَنْ مَسْرُوقٍ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ‏.‏

‘আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, যখন রামাদানের শেষ দশ রাত এসে যেত তখন নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রি জাগরিত থাকতেন , তাঁর পরিবারের সদস্যদেরকে জাগিয়ে দিতেন , তিনি অত্যন্ত উদ্দীপনার সাথে ইবাদত-বন্দেগিতে রত থাকতেন এবং সংসারিক ,পারিবারিক বা দাম্পত্য কাজকর্ম বন্দ দিতেন।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০২৪ |
মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮৩২ |
—————————

*” রামাদানের শেষ দশ রাতের মধ্যে রয়েছে ‘ ‘ ‘লাইলাতুল ক্বাদর ‘ বা তাকদীর বা মর্যাদার রাত | ইমাম বাইহাকী বলেন : লাইলাতুল ক্বদর অর্থ হলো , এ রাত্রিতে আল্লাহ পূর্ববর্তী বৎরে ফিরিশতাগণ মানুষদের জন্য কি কি কর্ম করবেন তার তাকদীর বা নির্ধারণ করে দেন |” -সূত্র: বাইহাকী,শুআবুল ঈমান ৩/৩১৯ |

সূরা ক্বদর-এ আল্লাহ বলেন:

لَيْلَةُ الْقَدْرِ ۙ خَيْرٌ مِّنْ اَلْفِ شَهْرٍؕ

” লাইলাতুল ক্বাদর এক হাজার মাস থেকেও উত্তম |”

* এই রাতটি উম্মাতে মুহাম্মদীর জন্য সবচেয়ে বড় নিয়ামত | একটি রাতের ইবাদত এক হাজার মাস বা প্রায় ৮৪ বৎসর ইবাদতের চেয়ে ও উত্তম | কত বড় নেয়ামত ! শুধু তাই নয় , এ রাত্রি কিয়ামুল্লাইল বা তাহাজ্জুদে জাগ্রত থাকলে আল্লাহ পূর্ববর্তী সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন |
—————————

” রাসূল (সা.) বলেনঃ”

، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ، قَالَ حَفِظْنَاهُ وَإِنَّمَا حَفِظَ مِنَ الزُّهْرِيِّ عَنْ أَبِي سَلَمَةَ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ـ رضى الله عنه ـ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ، وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ ‏”‏‏.‏ تَابَعَهُ سُلَيْمَانُ بْنُ كَثِيرٍ عَنِ الزُّهْرِيِّ‏.‏

আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি রমযানে ঈমানের সাথে ও সওয়াব লাভের আশায় সাওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এবং ” যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে, সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল ক্বদ্‌রে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেয়া হয়। সুলায়মান ইব্‌নু কাসীর (রহঃ) যুহরী (রহঃ) হতে অনুরূপ হাদীস বর্ণনা করেছেন।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৪ |
মুসলিম, আস-সহীহ ১/৫২৩ |

** আমরা মনে করি , ২৭ শের রাতই কদরের রাত | এই চিন্তাটি সঠিক নয় | রাসুল (সা.) কখনোই বলেন নি যে, ২৭ শে রামাদানের রাত ক্বদরের রাত | তবে অনেক সাহাবী, তাবিয়ী বা আলিম বলেছেন যে , ২৭ শের রাত শবে ক্বদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি | এজন্য আমাদের দায়িত্ব হলো রামাদানের শেষ দশ রাতের সবগুলি রাতকে ‘ শবে কদর ‘ হিসাবে ইবাদত করব | ২৭ শের রাতে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিয়ে এবাদত করব |

রাসুল (সা.) এর তরীকায় আমাদের জন্য সর্বোত্তম তরীকা |এতেই আমাদের নাজাত | তিনি নিজে ‘ লাইলাতুল ক্বদর ‘ লাভ করার জন্য রামাদানের শেষ দশরাত সবগুলিই ইবাদতে ও তাহাজ্জুদে জাগ্রত থেকেছেন এবং এরূপ করতে নির্দেশ দিয়েছেন |
” রাসূল (সা.) বলেন:”

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا أَبُو سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ ‏”‏‏.‏

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা রামাদানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লাইলাতুল ক্বদ্‌রের অনুসন্ধান কর |

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৭|

—————————

حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، أَخْبَرَنَا مَالِكٌ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ رِجَالاً، مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أُرُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِي الْمَنَامِ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيَهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِي السَّبْعِ الأَوَاخِرِ ‏”‏‏.‏

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর কতিপয় সাহাবীকে স্বপ্নের মাধ্যমে রামাদানের শেষের সাত রাত্রে লাইলাতুল ক্বদর দেখানো হয়। (এ শুনে) আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমাকেও তোমাদের স্বপ্নের অনুরূপ দেখানো হয়েছে। (তোমাদের দেখা ও আমার দেখা) শেষ সাত দিনের ক্ষেত্রে মিলে গেছে। অতএব যে ব্যক্তি এর সন্ধান প্রত্যাশী, সে যেন শেষ সাত রাতে সন্ধান করে।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৫|
—————————

* কোনো কোনো হাদীসে তিনি বেজোড় রাত্রিগুলির বেশি গুরুত্ব দিতে বলেছেন | রাসূল (সা.) বলেন:

حَدَّثَنَا مُعَاذُ بْنُ فَضَالَةَ، حَدَّثَنَا هِشَامٌ، عَنْ يَحْيَى، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، قَالَ سَأَلْتُ أَبَا سَعِيدٍ وَكَانَ لِي صَدِيقًا فَقَالَ اعْتَكَفْنَا مَعَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم الْعَشْرَ الأَوْسَطَ مِنْ رَمَضَانَ، فَخَرَجَ صَبِيحَةَ عِشْرِينَ، فَخَطَبَنَا وَقَالَ ‏ “‏ إِنِّي أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ، ثُمَّ أُنْسِيتُهَا أَوْ نُسِّيتُهَا، فَالْتَمِسُوهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ فِي الْوَتْرِ، وَإِنِّي رَأَيْتُ أَنِّي أَسْجُدُ فِي مَاءٍ وَطِينٍ، فَمَنْ كَانَ اعْتَكَفَ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلْيَرْجِعْ ‏”‏‏.‏ فَرَجَعْنَا وَمَا نَرَى فِي السَّمَاءِ قَزَعَةً، فَجَاءَتْ سَحَابَةٌ فَمَطَرَتْ حَتَّى سَالَ سَقْفُ الْمَسْجِدِ وَكَانَ مِنْ جَرِيدِ النَّخْلِ، وَأُقِيمَتِ الصَّلاَةُ، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَسْجُدُ فِي الْمَاءِ وَالطِّينِ، حَتَّى رَأَيْتُ أَثَرَ الطِّينِ فِي جَبْهَتِهِ‏.‏

আবূ সা’ঈদ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আমরা নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে রমযানের মধ্যম দশকে ই’তিকাফ করি। তিনি বিশ তারিখের সকালে বের হয়ে আমাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমাকে লাইলাতুল কদর (-এর সঠিক তারিখ) দেখানো হয়েছিল পরে আমাকে তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে। তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে তার সন্ধান কর। আমি দেখতে পেয়েছি যে, আমি (ঐ রাতে) কাদা-পানিতে সিজদা করছি। অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – এর সঙ্গে ই’তিকাফ করেছে সে যেন ফিরে আসে (মসজিদ হতে বের হয়ে না যায়)। আমরা সকলে ফিরে আসলাম (থেকে গেলাম)। আমরা আকাশে হাল্কা মেঘ খন্ডও দেখতে পাইনি। পরে মেঘ দেখা দিল ও এমন জোরে বৃষ্টি হলো যে, খেজুরের শাখায় তৈরী মসজিদের ছাদ দিয়ে পানি ঝরতে লাগল। সালাত শুরু করা হলে আমি আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) – কে কাদা-পানিতে সিজদা করতে দেখলাম। পরে তাঁর কপালে আমি কাদার চিহ্ন দেখতে পাই |

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০১৬ |
মুসলিম, আস-সহীহ ২/৮২৩ |

—————————

حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْوَاحِدِ بْنُ زِيَادٍ، عَنِ الْحَسَنِ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ إِبْرَاهِيمَ، عَنِ الأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَجْتَهِدُ فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِي غَيْرِهَا ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ غَرِيبٌ ‏.‏

আয়শা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রামাদানের শেষ দশদিন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) (ইবাদাতে) এত বেশি সাধনা করতেন যে, অন্য কোন সময়ে এরকম সাধনা করতেন না।

-সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (১৭৬৭)
—————————-

* রাসূল (সা.) লাইলাতুল ক্বদরের উদ্দেশ্য রামাদানের শেষ কয়েক বে জোড় রাত্রিতে সাহাবীদের নিয়ে জামাতে তারাবীহ বা কিয়ামুল্লাইল আদায় করেন —

حَدَّثَنَا هَنَّادٌ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْفُضَيْلِ، عَنْ دَاوُدَ بْنِ أَبِي هِنْدٍ، عَنِ الْوَلِيدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ الْجُرَشِيِّ، عَنْ جُبَيْرِ بْنِ نُفَيْرٍ، عَنْ أَبِي ذَرٍّ، قَالَ صُمْنَا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَلَمْ يُصَلِّ بِنَا حَتَّى بَقِيَ سَبْعٌ مِنَ الشَّهْرِ فَقَامَ بِنَا حَتَّى ذَهَبَ ثُلُثُ اللَّيْلِ ثُمَّ لَمْ يَقُمْ بِنَا فِي السَّادِسَةِ وَقَامَ بِنَا فِي الْخَامِسَةِ حَتَّى ذَهَبَ شَطْرُ اللَّيْلِ فَقُلْنَا لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ لَوْ نَفَّلْتَنَا بَقِيَّةَ لَيْلَتِنَا هَذِهِ فَقَالَ ‏ “‏ إِنَّهُ مَنْ قَامَ مَعَ الإِمَامِ حَتَّى يَنْصَرِفَ كُتِبَ لَهُ قِيَامُ لَيْلَةٍ ‏”‏ ‏.‏ ثُمَّ لَمْ يُصَلِّ بِنَا حَتَّى بَقِيَ ثَلاَثٌ مِنَ الشَّهْرِ وَصَلَّى بِنَا فِي الثَّالِثَةِ وَدَعَا أَهْلَهُ وَنِسَاءَهُ فَقَامَ بِنَا حَتَّى تَخَوَّفْنَا الْفَلاَحَ ‏.‏ قُلْتُ لَهُ وَمَا الْفَلاَحُ قَالَ السُّحُورُ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏ وَاخْتَلَفَ أَهْلُ الْعِلْمِ فِي قِيَامِ رَمَضَانَ فَرَأَى بَعْضُهُمْ أَنْ يُصَلِّيَ إِحْدَى وَأَرْبَعِينَ رَكْعَةً مَعَ الْوِتْرِ ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ أَهْلِ الْمَدِينَةِ وَالْعَمَلُ عَلَى هَذَا عِنْدَهُمْ بِالْمَدِينَةِ ‏.‏ وَأَكْثَرُ أَهْلِ الْعِلْمِ عَلَى مَا رُوِيَ عَنْ عُمَرَ وَعَلِيٍّ وَغَيْرِهِمَا مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عِشْرِينَ رَكْعَةً ‏.‏ وَهُوَ قَوْلُ سُفْيَانَ الثَّوْرِيِّ وَابْنِ الْمُبَارَكِ وَالشَّافِعِيِّ ‏.‏ وَقَالَ الشَّافِعِيُّ وَهَكَذَا أَدْرَكْتُ بِبَلَدِنَا بِمَكَّةَ يُصَلُّونَ عِشْرِينَ رَكْعَةً ‏.‏ وَقَالَ أَحْمَدُ رُوِيَ فِي هَذَا أَلْوَانٌ ‏.‏ وَلَمْ يَقْضِ فِيهِ بِشَيْءٍ ‏.‏ وَقَالَ إِسْحَاقُ بَلْ نَخْتَارُ إِحْدَى وَأَرْبَعِينَ رَكْعَةً عَلَى مَا رُوِيَ عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ ‏.‏ وَاخْتَارَ ابْنُ الْمُبَارَكِ وَأَحْمَدُ وَإِسْحَاقُ الصَّلاَةَ مَعَ الإِمَامِ فِي شَهْرِ رَمَضَانَ ‏.‏ وَاخْتَارَ الشَّافِعِيُّ أَنْ يُصَلِّيَ الرَّجُلُ وَحْدَهُ إِذَا كَانَ قَارِئًا ‏.‏ وَفِي الْبَابِ عَنْ عَائِشَةَ وَالنُّعْمَانِ بْنِ بَشِيرٍ وَابْنِ عَبَّاسٍ ‏.‏

আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে আমরা রোযা পালন করেছি। তিনি আমাদেরকে নিয়ে রামাদান মাসে কোন (নফল) নামায আদায় করেননি। অবশেষে তিনি রমযানের সাত দিন বাকী থাকতে আমাদেরকে নিয়ে নামাযে দাঁড়ালেন। এতে এক-তৃতীয়াংশ রাত চলে গেল। আমাদেরকে নিয়ে তিনি ষষ্ঠ রাতে নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়াননি। তিনি আবার আমাদের নিয়ে পঞ্চম রাতে নামাযের উদ্দেশ্যে দাঁড়ান। এতে অর্ধেক রাত চলে গেল। আমরা তাকে বললাম, হে আল্লাহর রাসূল। যদি আমাদের বাকী রাতটিও নামায আদায় করে পার করে দিতেন। তিনি বললেনঃ ইমামের সাথে যদি কোন লোক (ফরয) নামাযে শামিল হয় এবং ইমামের সাথে নামায আদায় শেষ করে তাহলে সে লোকের জন্য সারা রাত (নফল) নামায আদায়ের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর মাসের তিন রাত বাকী থাকা পর্যন্ত তিনি আর আমাদের নিয়ে নামায আদায় করেননি। আবার তিনি তৃতীয় (২৭শে) রাত থাকতে আমাদের নিয়ে নামাযের জন্য দাঁড়ালেন। তাঁর পরিজন ও স্ত্রীগণকেও তিনি এ রাতে ডেকে তুললেন। এত (দীর্ঘ)-সময় ধরে তিনি নামায আদায় করলেন যে, যার ফলে সাহ্‌রীর সময় চলে যাওয়ার সংশয় হল আমাদের মনে। বর্ণনাকারী জুবাইর ইবনু নুফাইর বলেন, আবূ বকর (রাঃ)-কে আমি বললামঃ ফালাহ্‌” কি? তিনি বললেন, সাহ্‌রী খাওয়া।

-সহীহ্‌, ইবনু মা-জাহ (১৩২৭)

নোটঃ
আবূ ঈসা হাদীসটিকে হাসান সহীহ্‌ বলেছেন। আলিমগণের মধ্যে রামাদানের রাতসমূহে (তারাবীহ্‌ নামায ও নফল ইবাদাতের উদ্দেশ্যে) দণ্ডায়মান হওয়া প্রসঙ্গে দ্বিমত আছে। কোন কোন আলিম বলেন, বিতর সহকারে এর রাক’আত সংখ্যা একচল্লিশ। মাদীনায় বসবাসকারীদের অভিমত এটাই এবং এরকমই আমল করেন এখানকার লোকেরা। কিন্তু আলী ও উমার (রাঃ) প্রমুখ সাহাবায়ে-কেরাম হতে বর্ণিত রিওয়ায়াত অনুযায়ী বেশিরভাগ আলিমের অভিমত অর্থাৎ (তারাবীহ্‌) বিশ রাক’আত। এই মত সুফিয়ান সাওরী, ইবনুল মুবারাক ও শাফিঈ (রহঃ)-এর। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) বলেন, আমাদের মক্কা নগরীর লোকদেরকেও বিশ রাক’আত আদায় করতে দেখেছি। আহ্‌মাদ (রহঃ) বলেন, এই বিষয়ের উপর বিভিন্ন প্রকার রিওয়ায়াত বর্ণিত আছে। এই ব্যাপারে তিনি কোন রকম সিদ্ধান্ত দেননি। ইসহাক বলেন, আমরা উবাই ইবনু কা’ব (রাঃ)-এর বর্ণনানুযায়ী একচল্লিশ রাক’আত আদায় করাকেই পছন্দ করি।
রমযান মাসে ইমামের সাথে তারাবীহ্‌ আদায় করাকে ইবনুল মুবারাক, আহ্‌মাদ ও ইসহাক সমর্থন করেছেন। ইমাম শাফিঈ কুরআনের হাফিয ব্যক্তির জন্য একাকী (তারাবীহ্‌র) নামায আদায় করাকে উত্তম বলেছেন। আইশা, নু’মান ইবনু বাশীর ও ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতেও এই অনুচ্ছেদে হাদীস বর্ণিত আছে।

জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ৮০৬ |
—————————

* আমরা অনেক সময় মনে করি তারাবীহ বা কিয়ামুল্লাইল বোধ হয় ‘ বিশ ‘রাকাতের বেশি পড়া যায় না বা জামাতে পড়া যায় না |রাসূল (সা.) ও সাহাবীগণের সুন্নত সম্পর্কে অজ্ঞতাই এর কারণ | রামাদানের কিয়ামু ল্লাইল ইশার পরে বা মধ্য রাতে বা শেষ রাতে যে কোন সময়ে ২০ রাকাত বা তার বেশি জামাতে আদায় করা যায় | সাহাবী-তাবিয়ীগণ অনেকেই শেষ দশ রাত্রিতে অতিরিক্ত ৪ বা ৮ রাকাত কিয়ামুল্লাইল আদায় করতেন | আমাদের দায়িত্ব হলো রামাদানের শেষ দশ রাত্রির প্রতি রাত্রিতে ইশা ও তারাবীহ-এর পরে প্রয়োজন মত কিছু সময় ঘুমিয়ে ঘুম থেকে উঠে পড়তে হবে| এরপর সেহেরী পর্যন্ত বাকি সময় ‘ ‘ ‘লাইলাতুল ক্বদর’ এর নামায, তিলাওয়াত, দোয়া,দরুদ ইত্যাদি সময় কাটাতে হবে ৷যদি মহল্লার মসজিদে কোন ভালো হাফেজ পাওয়া যায় ,তবে এ রাতগুলোতে রাত ১২/১ টা থেকে ৩/৪ টা পর্যন্ত ৩/৪ ঘণ্টা লম্বা কিরাআত ও দীর্ঘ রুকু সাজদা সহকারে জামাতে লাইলাতুল ক্বদরের উদ্দেশ্যে কিয়ামুল লাইল আদায় করতে হবে এবং বেশি বেশি করে দোয়া করতে হবে | তা সম্ভব না হলে, প্রত্যেকে নিজের সুবিধা মতো বেশি বেশি কিয়ামুল্লাইল বা শবে ক্বদরের নামায আদায় করতে হবে | বেজোড় রাত গুলিকে এবং বিশেষ করে ২৭ শের রাত্রি বেশি কষ্ট করতে হবে |

* রাসূল (সা.)এর তরীকায় সাহাবী, তাবেয়ী ও পরবর্তী বুজুর্গগণ ও এভাবে রামাদানের শেষ ‘দশ’ রাত পালন করতেন | তারা অনেকেই রামাদানের প্রথম ২০ রাতে ৩/৪ রাতে কুরআন খতম করতেন | আর শেষ ১০ রাতে প্রতিরাতে ১০/১২ পারা কুরআন তিলাওয়াত করতেন নামাযের মধ্যে |

* শবে ক্বদরের জন্য রাসুল সালাম একটি দোয়া শিখিয়েছেন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু বলেন হে আল্লাহর রাসূল যদি আমি লাইলাতুল কদর পায় তাহলে আমি কি বলবো ? রাসূল (সা.) বললেন তুমি বলবে:

” হে আল্লাহ আপনি ক্ষমাশীল মর্যাদাময় , আপনি ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন |”
সূত্র-তিরমিযী, আস-সুনান ৫/৫৩৪ |

—————————-
—————————

” ই’তিকাফ”

* রামাদানের শেষ দশ দিনের অন্যতম এবাদত হলো ই’তিকাফ করা | ইতিকাফের অর্থ হলো সার্বক্ষণিকভাবে মসজিদে অবস্থান করা | ওযূ.ইসতিনজা ,পানাহার ইত্যাদি একান্ত প্রয়োজন ছাড়া মসজিদ থেকে বের না হওয়া | মসজিদে অবস্থান কালে ঘুমানো ,বসে থাকা বা কথাবার্তা বলা যায় |তবে ই’তিকাফরত অবস্থায় যথাসম্ভব চেষ্টা করতে হবে ,সকল জাগতিক চিন্তা, কথাবার্তা ও মেলামেশা বাদ দিয়ে সাধ্যমত আল্লাহর যিকর ও ইবাদত বন্দেগিতে রত থাকা | না হলে নীরব থাকা | ই’তিকাফ মূলত একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত |তদুপরি লাইলাতুল ক্বদরের ফযীলত লাভের জন্যই এ সময়ে ই’তিকাফের গুরুত্ব বাড়ে৷

* আয়েশা (রা.)বলেন*

:حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ عُقَيْلٍ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ زَوْجِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يَعْتَكِفُ الْعَشْرَ الأَوَاخِرَ مِنْ رَمَضَانَ حَتَّى تَوَفَّاهُ اللَّهُ، ثُمَّ اعْتَكَفَ أَزْوَاجُهُ مِنْ بَعْدِهِ‏.

‘আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রামাদানের শেষ দশকে ই’তিকাফ করতেন। তাঁর ওফাত পর্যন্ত এই নিয়মই ছিল। এরপর তাঁর সহধর্মিণীগণও (সে দিনগুলোতে) ই’তিকাফ করতেন।

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২০২৬ |

* আমাদের সকলেরই চেষ্টা করা দরকার রামাদানের শেষ দশ দিন সুন্নাত ইতিকাফ করা দরকার | না হলে নফল-মুস্তাহাব হিসেবে দুই -এক দিনের জন্যেও ই’তেকাফ করা যায় | যদি পুরো দশ দিন না পারি তবে দু-এক দিনের জন্য হলেও ইতিকাফ করা দরকার | রাসূল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে:

” যদি কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাতে হাঁটে তবে তা তার জন্য ১০ বৎসর ই’তিকাফ করার চেয়ে উত্তম | আর যে ব্যক্তি ও একদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ই’তিকাফ করবে আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করবেন , প্রত্যেক পরিখার প্রশস্ততা ‘দুই’ দিগন্তের চেয়েও বেশি ।”
সূত্র- হাকিম, আল-মুসতাদরাক.৪/৩০০ | আলবানী,যয়ীফুত তারগীব ১/১৬৭ |

—————————
—————————

* যাকাতুল ফিতর*

* রামাদানের শেষে যাকাতুল ফিতর আদায় করতে হয়*

حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ حَدَّثَنِي نَافِعٌ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم صَدَقَةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ، أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ عَلَى الصَّغِيرِ وَالْكَبِيرِ وَالْحُرِّ وَالْمَمْلُوكِ‏.‏

ইব্‌নু ‘উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অপ্রাপ্ত বয়স্ক, প্রাপ্ত বয়স্ক, আযাদ ও গোলাম প্রত্যেকের পক্ষ হতে এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর সদকাতুল ফিতর হিসেবে আদায় করা ফরজ করে দিয়েছেন|

সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১৫১২|

حَدَّثَنَا مَحْمُودُ بْنُ خَالِدٍ الدِّمَشْقِيُّ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ” السَّمَرْقَنْدِيُّ، قَالاَ حَدَّثَنَا مَرْوَانُ، قَالَ عَبْدُ اللَّهِ حَدَّثَنَا أَبُو يَزِيدَ الْخَوْلاَنِيُّ، – وَكَانَ شَيْخَ صِدْقٍ وَكَانَ ابْنُ وَهْبٍ يَرْوِي عَنْهُ – حَدَّثَنَا سَيَّارُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، – قَالَ مَحْمُودٌ الصَّدَفِيُّ – عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنَ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ مَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلاَةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ الصَّلاَةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنَ الصَّدَقَاتِ ‏.‏

ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সদাক্বাতুল ফিতর ফরয করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হতে (রমাযানের) সওমকে পবিত্র করতে এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। যে ব্যক্তি (ঈদের) সলাতের পূর্বে তা আদায় করে সেটা কবুল সদাক্বাহ গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি সলাতের পরে আদায় করে, তা সাধারণ দান হিসেবে গৃহীত হবে। [১৬০৯]

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৬০৯ |

“-
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ مَسْلَمَةَ، حَدَّثَنَا دَاوُدُ، – يَعْنِي ابْنَ قَيْسٍ – عَنْ
عِيَاضِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ كُنَّا نُخْرِجُ إِذْ كَانَ فِينَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَكَاةَ الْفِطْرِ عَنْ كُلِّ صَغِيرٍ وَكَبِيرٍ حُرٍّ أَوْ مَمْلُوكٍ صَاعًا مِنْ طَعَامٍ أَوْ صَاعًا مِنْ أَقِطٍ أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ أَوْ صَاعًا مِنْ زَبِيبٍ فَلَمْ نَزَلْ نُخْرِجُهُ حَتَّى قَدِمَ مُعَاوِيَةُ حَاجًّا أَوْ مُعْتَمِرًا فَكَلَّمَ النَّاسَ عَلَى الْمِنْبَرِ فَكَانَ فِيمَا كَلَّمَ بِهِ النَّاسَ أَنْ قَالَ إِنِّي أَرَى أَنَّ مُدَّيْنِ مِنْ سَمْرَاءِ الشَّامِ تَعْدِلُ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ فَأَخَذَ النَّاسُ بِذَلِكَ ‏.‏ فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ فَأَمَّا أَنَا فَلاَ أَزَالُ أُخْرِجُهُ أَبَدًا مَا عِشْتُ ‏.‏ قَالَ أَبُو دَاوُدَ رَوَاهُ ابْنُ عُلَيَّةَ وَعَبْدَةُ وَغَيْرُهُمَا عَنِ ابْنِ إِسْحَاقَ عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُثْمَانَ بْنِ حَكِيمِ بْنِ حِزَامٍ عَنْ عِيَاضٍ عَنْ أَبِي سَعِيدٍ بِمَعْنَاهُ وَذَكَرَ رَجُلٌ وَاحِدٌ فِيهِ عَنِ ابْنِ عُلَيَّةَ أَوْ صَاعَ حِنْطَةٍ ‏.‏ وَلَيْسَ بِمَحْفُوظٍ ‏.‏

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

তিনি বলেন, যতদিন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে ছিলেন, আমরা ফিতরাহ দিতাম- প্রত্যেক ছোট, বড়, স্বাধীন ও গোলামের পক্ষ হতে মাথাপিছু এক সা’ খাদ্য এক সা’ পনির অথবা এক সা’ যব অথবা এক সা’ খেজুর অথবা এক সা’ কিসমিস। আমরা এ নিয়মেই ফিতরাহ দিয়ে আসছিলাম। অবশেষে মু’আবিয়াহ (রাঃ) হাজ্জ কিংবা ‘উমরাহ্‌ করতে এসে মিম্বারের আরোহন করে ভাষণ দানকালে লোকদেরকে বললেন, আমার মতে সিরিয়ার দুই মুদ্দ গম এক সা’ খেজুরের সমান। ফলে লোকেরা তাই গ্রহণ করলো। কিন্তু আবূ সাঈদ (রাঃ) বলেন, আমি যত দিন বেঁচে থাকি সর্বদা এক সা’ ফিতরাহই দিবো।

সহীহঃ মুসলিম।

সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ১৬১৬ |

“” আসমা বিনতে আবী বকর রাদিয়াল্লাহু বলেন: রাসুল( সা.) -এর যুগে আমরা যাকাতুল ফিতর আদায় করতাম দুই মুদ্দ গম দিয়ে “| সূত্র-অাহমদ, আল-মুসনাদ ৬/৩৫৫|

” এক’ সা’ হলো চার মুদ্দ | তাহলে দুই মুদ্দ হলো অর্ধ ‘সা’ | সা’- এর পরিমাপ নিয়ে ফকীহগণের মতভেদ রয়েছে | ইমাম আবু হানীফা (রাহ) মতে এক সা’ হলো প্রায় ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম | ইমাম আবূ ইউসূফ ও অন্য তিন ইমামের মতে এক সা’ হল প্রায় ২ কেজি ২০০ গ্রাম |

“” রাসূল (সা.) এক সা’ খাদ্য ফিতরা দিতে বলেছেন | খেজুর, কিসমিস, পনির এবং যব এই চার প্রকার খাদ্য থেকে প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ‘৩’ কেজি ৩০০ গ্রাম ফিতরা দিতে হবে | আর একটি বর্ণনায় আছে-গম বা আটার ক্ষেত্রে এর অর্ধেক, অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম হিসাবে দিলে চলবে | আমাদের দেশে এ ৫ প্রকার খাদ্যের কোনোটি মূল খাদ্য নয় | এক্ষেত্রে ইসলামী মূলনীতি হলো, দান গ্রহণকারী দরিদ্রগণের সুবিধা ও কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রাখা | এজন্য সবচেয়ে উত্তম হলো, খেজুর বা খেজুরের মূল্য প্রদান করা | কারণ সাহাবীগণ খেজুর প্রদান করতে ভালোবাসতেন | এছাড়া দরিদ্রদের জন্য তা অধিকতর উপকারী | তবে আমাদের দেশে সাধারণত ফিতরা-দাতাদের সুবিধার দিকে তাকিয়ে আটার মূল্য হিসেবে প্রদান করা হয় | এই হিসাবে বাজারের উত্তম আটা পরিবারের প্রত্যেক এর পক্ষ থেকে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম করে ফিতরা প্রদান করতে হবে | যাদের সচ্ছলতা আছে তারা মাথাপ্রতি ৩ কেজি ৩oo গ্রাম খেজুর প্রদানের চেষ্টা করবেন | এতে ফিতরা আদায় ছাড়াও রাসূল (সা.) ও সাহাবীগণের একটি অতিরিক্ত সুন্নত পালন করা হবে |

” ঈদের দিন নামাযের আগে অথবা তার আগে রামাদানের শেষ কয়েক দিনের মধ্যে ফিতরা আদায় করতে হবে | একজনের ফিতরা কয়েকজনকে এবং কয়েকজনের ফিতরা একজনকে দেওয়া যায় |

“”রাসূল (সা.) বলেন : ” জিবরাঈল (আ) আমার নিকট উপস্থিত হন | তিনি বলেন : যে ব্যক্তি রামাদান মাস পেল, অথচ তার গোনাহ ক্ষমা করা হলো না সে বিতাড়িত হোক | আমি বললাম :আমীন | তিনি বলেন: যার নিকট আপনার কথা বলা হলো, অথচ সে আপনার উপর সালাম পাঠ করল না সে বিতাড়িত হোক | আমি বললাম : আমিন | তিনি বললেন :যার পিতা মাতা বা একজন তার নিকট বৃদ্ধ হলেন, কিন্তু তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন না সে বিতাড়িত হোক | আমি বললাম :আমিন |” সূত্র-হাকিম, আল-মুসতাদরাক ৪/১৭০ | আলবানী,সহীহুত তারগীব ১/২৪০ |

* আমরা রামাদানের প্রায় শেষ প্রান্তে চলে এসেছি | আমল কি করলাম আল্লাহই ভালো জানেন | তবে সঞ্চয় যাই হোক না হোক, সবচেয়ে বড় কথা হলো ক্ষমতা লাভ করা তাই এ কদিন বেশি বেশি করে আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে এবং ক্ষমা চাইতে হবে |

” হাদীস শরীফে এসেছে, মুমিন ব্যক্তি তার পাপকে খুব বড় করে দেখেন , যেন তিনি পাহাড়ের নিচে বসে আছেন, ভয় পাচ্ছেন, যে কোন সময় পাহাড়টি ভেঙ্গে তার উপর পড়ে যাবে |আর পাপী মানুষ তার পাপকে খুবই হালকা ভাবে দেখেন, যেন একটি উড়ন্ত মাছি তার নাকের ডগায় বসেছে, হাত নাড়ালেই উড়ে যাবে |” সূত্র-বুখারী, আস-সহীহ ৫/২৩২৪,|

” পবিত্র মাহে রামাদানে আমাদের বেশি বেশি তাওবা করতে হবে | তাওবার অর্থ হলো ফিরে আসা তাওবার শর্ত তিনটি:(১) পাপের কারণে মনের মধ্যে অনুশোচনা বোধ করা, (২) আর কখনো এপাপ করব না বলে দৃঢ় সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং(৩) অনুশোচনা ও সিদ্ধান্ত নিয়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা |
রামাদানের এ মোবারক সময় আসুন আমাদের জীবনের সকল পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহর কাছে তাওবা করি | সকল পাপ থেকে তাওবা করা দরকার এরপরও যদি একান্ত অসুবিধা হয় তবে কিছু পাপ থেকে তাওবা করা যায় | যেমন আল্লাহ আমি নামাজ কাযা করতাম ,সিনেমা দেখতাম এবং দাড়ি কাট দাড়ি কাটতাম | দাড়ি কাটা এখন বাদ দিতে পারছিনা | আল্লাহ আমি নামায কাযা করা ও সিনেমা দেখা থেকে তওবা করছি আল্লাহ আমি আর কোনদিন এ কাজ করব না | আল্লাহ আপনি আমার অতীত পাপ ক্ষমা করে দেন এবং ভবিষ্যতে এ পাপ থেকে বেচে থাকার তাওফীক দেন | সকল পাপ থেকেই তওবা করুন | কোন পাপেই কোন মঙ্গল নেই সাময়িক অস্থিরতা এবং চিরস্থায়ী ক্রন্দন | হাদীস শরীফে বলা হয়েছে -রামাদান উপলক্ষ্যে আল্লাহ অগণিত বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে দেন | আসুন আমরা সকল গুনাহ থেকে তাওবা করে এ সকল মুক্তিপ্রাপ্ত দের দলে নিজেদের নাম লিখিয়ে নিই |

“”””””
“حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنِ الْعَلاَءِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏”‏ أَتَدْرُونَ مَا الْمُفْلِسُ ‏”‏ ‏.‏ قَالُوا الْمُفْلِسُ فِينَا يَا رَسُولَ اللَّهِ مَنْ لاَ دِرْهَمَ لَهُ وَلاَ مَتَاعَ ‏.‏ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏”‏ الْمُفْلِسُ مِنْ أُمَّتِي مَنْ يَأْتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ بِصَلاَتِهِ وَصِيَامِهِ وَزَكَاتِهِ وَيَأْتِي قَدْ شَتَمَ هَذَا وَقَذَفَ هَذَا وَأَكَلَ مَالَ هَذَا وَسَفَكَ دَمَ هَذَا وَضَرَبَ هَذَا فَيَقْعُدُ فَيَقْتَصُّ هَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ وَهَذَا مِنْ حَسَنَاتِهِ فَإِنْ فَنِيَتْ حَسَنَاتُهُ قَبْلَ أَنْ يُقْتَصَّ مَا عَلَيْهِ مِنَ الْخَطَايَا أُخِذَ مِنْ خَطَايَاهُمْ فَطُرِحَ عَلَيْهِ ثُمَّ طُرِحَ فِي النَّارِ ‏”‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ ‏.‏

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সাহাবীদের প্রশ্ন করলেন, তোমরা কি জান, দেউলিয়া কে? তারা বললেন, হে আল্লাহ্‌র রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)! আমাদের মধ্যে দেউলিয়া হচ্ছে সেই ব্যক্তি যার দিরহামও (নগদ অর্থ) নেই, কোন সম্পদও নেই। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমার উম্মাতের মধ্যে সেই ব্যক্তি হচ্ছে দেউলিয়া যে কিয়ামাত দিবসে নামায, রোযা, যাকাতসহ বহু আমল নিয়ে উপস্থিত হবে এবং এর সাথে সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ আত্মসাৎ করেছে, কারো রক্ত প্রবাহিত (হত্যা) করেছে, কাউকে মারধর করেছে, ইত্যাদি অপরাধও নিয়ে আসবে। সে তখন বসবে এবং তার নেক আমল হতে এ ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে, ও ব্যক্তি কিছু নিয়ে যাবে। এভাবে সম্পূর্ণ বদলা (বিনিময়) নেয়ার আগেই তার সৎ আমল নিঃশেষ হয়ে গেলে তাদের গুনাহসমূহ তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে, তারপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।

সহীহ, সহীহাহ্‌ (৮৪৫), আহকামুল জানাইয (৪), মুসলিম।

জামে’ আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৪১৮ |

“” বড় ভয়ঙ্কর কথা | কত কষ্ট করে আমরা সালাত,সিয়াম ,যাকাত,-ফিতরা ইত্যাদি ইবাদত পালন করছি | কিয়ামতের সে কঠিন দিনে যদি আমাদের সকল সওয়াব অন্যরা নিয়ে নেয়, আর আমাদেরকে পরের পাপ নিয়ে জাহান্নামে যেতে হয় তবে এর চেয়ে দুর্ভাগ্য আর কিছুই হতে পারে না | এইজন্য আমাদের সাবধান হওয়া দরকার |আল্লাহর কাছে যে অপরাধই করি না কেন , কোন বান্দার হক্ক যেন আমাদের দ্বারা নষ্ট না হয় | যদি নষ্ট হয়ে থাকে তবে এখনই তা ফিরিয়ে দিয়ে বা যে কোন ভাবে ক্ষমা নিয়ে নিতে হবে আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন|

* সর্বোপরি পবিত্র মাহে রামাদানে আমরা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই,আল্লাহ যেন এই প্রাণঘাতী করোনা ভাইরারের গযব থেকে থেকে আমাদেরকে হেফাজত করেন, আমাদের দেশকে রক্ষা করেন| আমীন|

* দোয়ার মুহতাজ*
মাওলানা জিয়াউল ইসলাম যুক্তিবাদী
বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ লেখক ও গবেষক
কলারোয়া, সাতক্ষীরা|

একই রকম সংবাদ সমূহ

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবু নসরবিস্তারিত পড়ুন

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবুবিস্তারিত পড়ুন

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত প্রফেসর মো. আবু নসর ৫২’রবিস্তারিত পড়ুন

  • সাতক্ষীরার প্রথম মহকুমা প্রশাসক নওয়াব আব্দুল লতিফ
  • A visionary leader committed to serving the constituents of Satkhira-1
  • সবুজ হোসেন-এর কবিতা “কুয়াশা”
  • আন্তর্জাতিক প্রতিবন্ধী দিবস ও আমাদের ভাবনা
  • বিশ্বের দৃষ্টি এখন বাংলাদেশের দিকে
  • বদলে যাওয়া বাংলাদেশের গল্প
  • আওয়ামী লীগের ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই : রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হারুন-অর-রশিদ
  • বর্তমান ক্রান্তিলগ্নে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধান
  • প্রধানমন্ত্রীর সফলতা ও জাতীয় উন্নয়ন
  • যশোর শিক্ষা বোর্ডের আইসিটি বিষয়ের প্রশ্নপত্রে পাঠ্যপুস্তক-বহির্ভূত প্রশ্ন!
  • ছিলো নদীবন্দর: কলারোয়ার চান্দুড়িয়ায় স্থলবন্দর চালুর দাবি
  • বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাক্ষী আশুরা