লবণাক্ততায় পুড়ছে সাতক্ষীরা উপকূলের মাটি
ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বছরের পর বছর প্লাবিত হয়ে আসছে শ্যামনগর উপকূলীয় জনপদ। সাগরের লবণ পানিতে তলিয়ে যায় এসব এলাকা। ফলে এখানকার মাটিতে দিন দিন বেড়েই চলছে লবণাক্ততা। কমে আসছে মাটির উর্বরতা।
কৃষকরা বলছেন, আষাঢ় শ্রাবণ মাসের আগে আমাদের ধান রোপন করা হয়ে যায় কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমরা অনেক পিছিয়ে গেছি। জলবায়ুর প্রভাবে লবণাক্তের ভাগ বেড়ে যাওয়ায় আমরা ফসল উৎপাদন করতে পারছি না। সেই সাথে দুর্বল বেড়িবাঁধের কারণে প্রতিবছর উপকূলে লবণ পানি প্রবেশ করে। আর এ লবণাক্ততার কারণে যত দিন যাচ্ছে, জমিতে ততোই ফসলের পরিমাণ কমছে। কৃষকদের এমন মন্তব্যে একমত কৃষিবিদরাও। তারা বলছেন, জলোচ্ছ্বাসে এসব পানির লবণাক্ততার কারণে জমির উর্বরতা কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে দীর্ঘমেয়াদী।
শ্যামনগরের সচেতন মহলের নাগরিক ছবেদ আলী গাজী বলেন, ভাঙা ও জোড়াতালি দেওয়া বেড়িবাঁধ উপকূলবাসীর গলার কাটা হয়ে আছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড এসব বাধ স্থায়ীভাবে মেরামত করে না। যখন ঘূর্ণিঝড় হয় তখনই এসব বাঁধের জোড়াতালি ভেঙে প্লাবিত হয় জেলার উপকূলীয় অঞ্চল। তখন তড়িঘড়ি করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) জরুরি মেরামত করে। যা আবার জোয়ারের চাপে ছুটে যায়। তবে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মাণ করলে এমন সমস্যা হতো না।
এ বিষয়ে শ্যামনগর কৃষি অফিসের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. লতিফুল হাসান বলেন, প্রতি বছর এসব এলাকা প্লাবিত হয়। সমস্যাটা শুধু প্লাবিত হওয়া নিয়ে নয়। একবার একটি উর্বর জমি লবণ পানিতে তলিয়ে গেলে। টানা দুই বছরের মতো লাগে বৃষ্টিতে সেই মাটির লবণাক্ততা কাটতে। কিন্তু প্রতিবছরই এসব অঞ্চল প্লাবিত হয়। ফলে এখন এই অঞ্চলে ফসল কম হয়। বছরের পর বছর লবণ পানিতে তলিয়ে থাকায় জমির উর্বর ক্ষমতা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এসব নিয়ে সরকারের এখনই ভাবা দরকার। নয়তো চরম মূল্য দিতে হবে।
শ্যামনগর সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তুষার মজুমদার বলেন, পানিতে ঘের, পুকুর ও জলাশয়ের মাছ ভেসে গেলে প্রাথমিক একটা লোকসান হয় মৎস্যচাষির। কিন্তু এসব ঘের, পুকুর বা জলাশয়ে লবণ থেকে যাওয়া চাষিদের মারাত্মক ক্ষতি হয়। মাটি যখন পানি থেকে লবণ গ্রহণ করে, তখন পানি মিষ্টি হতে প্রচুর সময় লাগে। এ সময়ে প্লাবিত হওয়া ঘের-পুকুর-জলাশয়ে মাছ চাষ করলে, তাতে শতভাগ লোকসান হয়। মাছ প্রচুর খাবার খায় ঠিকই কিন্তু লবণাক্ততার কারণে বড় হয় না। ব্যবসায়ীদের মারাত্মক লোকসান হয়। যার প্রভাবে বাজারে দাম বৃদ্ধি থাকে মাছের। শুধু সাগরের মাছ দিয়ে চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়। তাই যে কোনো মূল্যে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিতেই হবে।
এসব বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আবুল খায়ের বলেন, এক কিলোমিটার স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলে খরচ হয় ২৫ কোটি টাকা। এসব বাঁধ নির্মাণে বড় প্রকল্প নেওয়া ছাড়া সম্ভব না। তাই স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ সম্ভব হচ্ছে না। ছোট ছোট যা বরাদ্দ আসে তা দিয়েই বেড়িবাঁধ মেরামত করে উপকূলবাসীকে জলোচ্ছ্বাসের হাত থেকে রক্ষা করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গত দুবছরে একাধিকবার স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য মৌখিক ও লিখিতভাবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। তবে এখনও বড় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)