শ্যামনগরে জাল দলিল চক্রের ফাঁদে পড়ে দিশেহারা হতদরিদ্র নুরুন নাহার


নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী গ্রামের হতদরিদ্র নারী নুরুন নাহার প্রতারণার শিকার হয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। স্বামী ও শিশুপুত্রের ইটভাটার শ্রমের কষ্টার্জিত টাকা ও বাবার বাড়ির শেষ সম্বল বিক্রি করে জমি কিনতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হয়েছেন তিনি।
নুরুন নাহার জানান, একই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক ওরফে “জাল রাজ্জাক”-এর কাছ থেকে ৩০ শতক জমি কেনেন। দলিল লেখক শ্যামনগরের বিসমিল্লাহ সেরেস্তার এস এম মাহবুবুর রশিদ (লাইসেন্স নম্বর ৩৬/১৯৮৭), মোঃ আমজাদ হোসেন (লাইসেন্স নম্বর ৫২/৭৮) ও মিজানুর রহমান মিন্টুর (লাইসেন্স নম্বর ৩০/১৯৮৭) সহযোগিতায় এবং তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রার মইনুল হকের সহায়তায় ১৪ মার্চ ২০২৩ তারিখে দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়, যার দলিল নম্বর ১৩৪৯।
জমির বিনিময়ে আব্দুর রাজ্জাক প্রথমে নুরুন নাহারের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা নেন। পরবর্তীতে রেজিস্ট্রির দিন আরও ৪ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা গ্রহণ করেন, ফলে মোট ৮ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে নুরুন নাহার জানতে পারেন, জমির দলিলসহ সংযুক্ত কাগজপত্র সবই জাল।
তদন্ত করে দেখা গেছে, আব্দুর রাজ্জাক যে দলিলের মাধ্যমে জমি বিক্রি করেছেন, সেটি ১৭ মে ১৯৬৭ সালের। অথচ তার জন্ম তারিখ ১০ আগস্ট ১৯৬৭। অর্থাৎ, তার জন্মের তিন মাস আগেই দলিল তৈরি করা হয়েছে, যা স্পষ্টতই প্রতারণার প্রমাণ বহন করে।
প্রতারিত নুরুন নাহার তৎকালীন সাব-রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ তার বদলি হয়ে যাওয়ায় বিষয়টি স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে তিনি টাকা বা জমি ফেরতের আশায় প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং সংশ্লিষ্ট দলিল লেখকদের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানিয়ে নুরুন নাহার শ্যামনগরের বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার, সাতক্ষীরা জেলা সাব-রেজিস্ট্রার, জেলা প্রশাসক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ বিষয়ে বিসমিল্লাহ সেরেস্তার মালিক এস এম মাহবুবুর রশিদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, “সেদিন আমার সেরেস্তায় অনেক দলিল রেজিস্ট্রি হয়েছিল। ব্যস্ততার কারণে ভালো করে কাগজপত্র যাচাই করতে পারিনি। এটি একটি ভুল হয়েছে।”
এ ধরনের জালিয়াত চক্রের প্রতারণার হাত থেকে সাধারণ মানুষকে রক্ষা করতে দ্রুত প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি উঠেছে এলাকাবাসীর মধ্যেও।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
