সাতক্ষীরায় হাতুড়ে ডাক্তার কাটলেন পায়ের আঙুল, দীনমজুর হারালেন চলাফেরার শক্তি


সাতক্ষীরায় গ্যাংগ্রিনের কথা বলে গরীব দীনমজুরের পা কেটেছেন গ্রাম্য হাতুড়ে ডাক্তার, তাতে পরিবারের একমাত্র আয়ের ব্যক্তিটি চলার শক্তি হারিয়ে পথে বসেছে পুরো পরিবার।
দীনমজুর মোকছেদ বিশ্বাস উপজেলার কদমখালী গ্রামের মোবারক বিশ্বাসের ছেলে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে চিকিৎসারত দিনমজুর মোকছেদ বিশ্বাসের স্ত্রী মাজেদা খাতুন বলেন, দুই মাস আগে নিজের ব্যবহারের জন্য বাজার থেকে চামড়ার জুতা ক্রয় করেন মোকছেদ বিশ্বাস। সেটিপায়ে দেয়ার পরে তার বাম পায়ের আঙুলে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষতের চিকিৎসার জন্য দেড় মাস আগে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অর্থো-সার্জারী) বিশেষজ্ঞ ডা. হাফিজউল্লাহকে দেখানো হয়। তিনি একটি ব্যবস্থাপত্র দেন। অর্থাভাবে ঔষধ ক্রয়ের সামর্থ্য না থাকাই গ্রাম্য ডাক্তার বঙ্কিম চন্দ্রের শরণাপন্ন হয়। দীর্ঘদিনধরে চিকিৎসা দিয়ে আসছিলো গ্রাম্য ডাক্তার বঙ্কিম। তাতে কোন লাভ হয়নি মোকছেদের বরং ক্ষতস্থানে পচনবৃদ্ধি পেয়ে তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। দীর্ঘদিনের চিকিৎসায় মোকছেদের অবস্থার অবনতি হয়ে পায়ের আঙুলের পচন বৃদ্ধি পেতে থাকলে গ্রাম্য ডাক্তার জানান গ্যাংগ্রিন হয়েছে আঙুল কাটতে হবে জানিয়ে পায়ের তিনটি আঙুলগুলো কেঁটে ফেলে ওই গ্রাম্য ডাক্তার।
মাজেদা খাতুন জানান, আঙুল কাটার পরে ক্ষতিগ্রস্থ হয় তার স্বামী, চলাফেরার শক্তি হারায়। উপায়ন্তর না পেয়ে সোমবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে বর্তমানে তার স্বামী এখনও হাটাচলা করতে পারছেন না।
স্থানীয় কদমখালী গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, মোকছেদ আলী দিনমজুর মানুষ। খাসজমিতে ঘর বেধেঁ বসবাস করে। বিভিন্ন মানুষদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে ঔষধপত্র খেয়েছেন বিভিন্ন সময়। অপচিকিৎসার কারণে তার পায়ের তিনটি আঙুল কেঁটে ফেলতে হয়েছে। মোকছেদ বিশ্বাসের চিকিৎসা সেবায় সকলকে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে গ্রাম্য ডাক্তার হয়ে গ্যাংগ্রিন রোগের চিকিৎসা দেওয়া, রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে না পাঠানোসহ অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে না পাঠিয়ে মোকছেদের পায়ের আঙুল কাঁটা তার ঠিক হয়নি বলে ভুল স্বীকার করে দেবহাটার কুলিয়া ইউনিয়নের শশাডাঙ্গা গ্রামের গ্রাম্য ডাক্তার বঙ্কিম চন্দ্র মন্ডল বলেন, এভাবে পা কাটা তার ভুল হয়েছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের অর্থপেডিক বিভাগের চিকিৎসক ডা. হাফিজউল্লাহ জানান, ভুল চিকিৎসা ও সময় মত ভালো চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে মোকছেদ আলীর পা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সে চলাফেরা করতে পারেন না। বাম পা অকেজো হয়ে গেছে। এখন তার বাম পা কেঁটে বাদ দেওয়া ছাড়া বিকল্প উপায় নেই।
আর কথিত গ্রাম্য ডাক্তারদের এধরনের অপচিকিৎসা দেয়া রীতিমতো অপরাধ বলে জানান তিনি।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
