হোলি উৎসব: ভারতে মুসলিম ধরপাকড়, ত্রিপলে মসজিদ ঢেকে দেয়া হলো


ভারতের উত্তরপ্রদেশের সাম্ভলে হোলির সময় শান্তি বজায় রাখার নামে ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে রাজ্যটির প্রশাসন। অন্তত ১,০১৫ জনকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে আটক করা হয়েছে এবং প্রায় এক ডজন মসজিদ ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
শহরের ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদসহ বেশ কয়েকটি মসজিদ, যেগুলোর বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী গোষ্ঠীগুলো প্রচারণা চালাচ্ছে, সেগুলোর ওপর ত্রিপল দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) পৃথক প্রতিবেদনে এ খবর দিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ইন, ডেকান হেরাল্ড ও মাকতুব ইন্ডিয়া।
একইসঙ্গে দ্য হ্যান্স ইন্ডিয়া নামে আরেক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ‘শান্তি রক্ষার’ নামে মুসলিমদের অন্তত ৬০টি মসজিদে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে প্রশাসন।
জেলা প্রশাসনের দাবি, হোলি উদযাপনের সময় কোনো অশান্তি যাতে না হয়, সে জন্য স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে পরামর্শ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্রীশ চন্দ্র জানান, ‘হোলির শোভাযাত্রার পথে থাকা ১০টি ধর্মীয় স্থানের ওপর ত্রিপল দেওয়া হচ্ছে।’
সাব-ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট (এসডিএম) ড. বন্দনা মিশ্র বলেন, ‘সাম্ভলের বিভিন্ন মসজিদে লখপালদের (প্রশাসনিক কর্মী) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। পুরো জেলা সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছি, যাতে হোলি শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়।’
এই পদক্ষেপ সাম্ভলে চলমান উত্তেজনার মধ্যেই নেওয়া হয়েছে, যেখানে ঐতিহাসিক শাহী মসজিদকে ঘিরে হিন্দুত্ববাদী প্রচার চলছে। গত বছর মসজিদ জরিপের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী মুসলিমদের ওপর পুলিশ হামলা চালালে অন্তত পাঁচজন নিহত হন এবং বহু মানুষকে গ্রেফতার করা হয়।
হোলির আগে প্রশাসনের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে বিরোধী দল ও মুসলিম সংগঠনগুলো বলছে, এটি সরকারের পক্ষপাতদুষ্ট নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। তারা অভিযোগ করছে, হোলির দিনে মুসলিমদের ঘরে থাকার পরামর্শ দিয়ে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা এবং বিজেপি নেতারা সাম্প্রদায়িক উসকানি দিচ্ছেন।
সাম্ভলের শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা অনুজ কুমার চৌধুরী এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হোলি বছরে একবার আসে, কিন্তু শুক্রবারের নামাজ ৫২ বার হয়। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিয়েছি যে যখন মানুষ হোলি খেলবে, তখন যদি মুসলিমরা চায় না যে তাদের গায়ে রঙ লাগুক, তবে তারা যেন ঘরে থাকে।’
তার এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও।
হোলির দিন শুক্রবার পড়ায় বিভিন্ন কট্টরপন্থি হিন্দু নেতা ইসলামবিদ্বেষী মন্তব্য করে বিতর্ক উসকে দিচ্ছেন। মঙ্গলবার বিজেপি নেতা রঘুরাজ সিং ব্যঙ্গ করে বলেন, ‘মুসলিম পুরুষদের উচিত হোলির দিন নিজেদের রক্ষা করতে ত্রিপলের তৈরি হিজাব পরা।’
এই পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা হলেও প্রশাসন নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে এবং হোলির দিন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উত্তরপ্রদেশে মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ বেড়েছে। গত বছর প্রয়াগরাজে সমাজকর্মী তথা মুসলিম নেতা জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা অনেকেই ‘বুলডোজার রাজনীতি’ বলে আখ্যা দেন। এমনকি নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী আন্দোলনের সময়ও রাজ্যজুড়ে মুসলিমদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় ও দমনপীড়ন চালানো হয়।
সাম্ভলে হোলির আগে প্রশাসনের গণআটক এবং মসজিদের ওপর ত্রিপল চাপিয়ে দেওয়ার ঘটনাও এই ধারাবাহিক নীতির অংশ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। স্থানীয় মুসলিমদের অভিযোগ, প্রশাসন পরিকল্পিতভাবে হোলিকে ব্যবহার করে তাদের ধর্মীয় অধিকার খর্ব করছে এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
