অনাবৃষ্টির মধ্যে নানা শঙ্কায় শুরু হয়েছে সুন্দরবনে মধু আহরণ মৌসুম
সুন্দরবনের মধু আহরণ মৌসুম শুরু হয়েছে। চলতি বছর অনাবৃষ্টির মধ্যে নানা শঙ্কায় শুরু হয়েছে মধু আহরণ। ১ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে চলবে ১৫ জুন পর্যন্ত। পূর্ব ও পশ্চিম বনবিভাগের দু’টি রেঞ্জ থেকে এ লক্ষ্যে মৌয়ালদের মধ্যে পাস-পারমিট দেওয়া শুরু হয়েছে।
বনবিভাগের পক্ষে চলতি মৌসুমে ২ হাজার ৪৫০ কুইন্টাল মধু ও ৭১৫ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও বৃষ্টিহীনতায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে আশংকা প্রকাশ করেছেন মৌয়ালদের পাশাপাশি বনসংশি¬ষ্টরা। বৃষ্টিহীনতায় নানা আশংকাকে সামনে রেখে মৌয়ালরা বাপ-দাদার পেশা আঁকড়ে ছুটছেন সুন্দরবনে মধুর খোঁজে।
বাগেরহাট পুর্ব সুন্দরবন বিভাগের দেয়া তথ্যমতে জানা যায়, এ বছর ১ হাজার ৪০০ কুইন্টাল মধু এবং ৪৫০ কুইন্টাল মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে ২০১৯-২০ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮০০ কুইন্টাল মধু এবং ৩০০ কুইন্টাল মোম। ওই বছর আহরণ হয়েছিল ১ হাজার ২২০ কুইন্টাল মধু ও ৩৬৬ কুইন্টাল মোম।
পুর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সংশি¬ষ্ট বন অফিস থেকে ১৪ দিনের পাস-পারমিট নিয়ে মৌয়ালরা বনে প্রবেশ করছে। এর আগে তাদের অনুর্ধ্ব ২০০ মণ ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন বৈধ বিএলসি ধারী নৌকার মালিকানাসহ নানা শর্ত বা নির্দেশনা রয়েছে।
নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে বন আইনে শাস্তির বিধান রেখে ৯ টি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে মৌয়ালদের। এর মধ্যে সংরক্ষিত অভয়ারণ্য এলাকা থেকে মধু আহরণ করা যাবে না। মৌয়ালদের কেউ নিষিদ্ধ বনাঞ্চলে প্রবেশ করলে তাৎক্ষণিক তার পারমিট বাতিল করা হবে। এ ছাড়া মধু আহরণে মৌমাছি তাড়াতে অগ্নিকু- মশাল বা অনুরূপ কোনো দাহ্য পদার্থ এবং রাসায়নিক দ্রব্যাদি ব্যবহার করতে পারবেন না। মৌয়াল ও বনসংশি¬ষ্টরা জানান, মৌসুমের শুরুতে খলিশা ফুলের মধু আসে। এর পর আসে গরাণ এবং সর্বশেষ আসে কেওড়া ফুলের মধু। খলিশার মধু সবচেয়ে দামি।
সুন্দরবনে মৌসুমে মধু কম-বেশি হওয়া অনেকটা বৃষ্টির ওপর নির্ভর করে। চলতি বছর এ অঞ্চলে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। আর বৃষ্টি না হলে ফুলে মধু জমে না। ফুল শুকিয়ে ঝরে যায়। তাই এবছর মধু কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন মৌয়ালরা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, এ বছর সুন্দরবনে ১ হাজার ৪শত কুইন্টাল মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এ খাত থেকে বনবিভাগ ১০ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করবে। গত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সুন্দরবনে এক হাজার দুইশত বিশ কুইন্টাল মধু সংগ্রহ এবং ৯ লাখ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছিলো বলে ডিএফও জানান।
সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগ সাতক্ষীরা রেঞ্জে ১ এপ্রিল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) এম এম হাসান মধু আহরণ মৌসুমের উদ্বোধন করেন। আগামী ১৫ই জুন আড়াই মাসব্যাপী মৌয়ালরা সুন্দরবনে নির্দিষ্ট এলাকায় মধু আহরণ করতে পারবেন।
তিনি জানান, চলতি বছর মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল এবং মোম ২৬৫ কুইন্টাল নির্ধারিত হয়েছে। প্রতি কুইন্টাল মধু আহরণের জন্য ৭৫০ টাকা এবং প্রতি কুইন্টাল মোম ১ হাজার টাকা হারে রাজস্ব নির্ধারণ করা হয়েছে। পশ্চিম সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪টি স্টেশন বুড়িগোয়ালিনী, কোবাদক, কদমতলা ও কৈখালী ফরেস্ট স্টেশন থেকে পাস পারমিট দেওয়া শুরু হযেছে। ইতিমধ্যে নির্বিঘেœ মধু আহরণে মৌয়ালদের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগীয় কর্মকর্তা ড. আবু নাছের মোহসিন হোসেন জানান, ফরেস্ট স্টেশন থেকে মৌয়ালীদের ১ এপ্রিল থেকে পাস পারমিট দেওয়া শুরু হয়েছে ১৫ জুন পর্যন্ত মধু আহরণ চলবে। মৌয়ালদের সঠিক নিয়ম মেনে মধু আহরণ করার দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে সব থেকে দুটি বিষয়ের উপর অধিক গুরুত্ব দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চাক থেকে মধু আহরণ করার সময় মৌচাকের কিছু অংশ রেখে চাক কাটতে বলা হয়েছে।
সম্পূর্ণ চাক কোন ভাবে কাটা যাবে না। তাছাড়া মৌয়ালদের একটি দল যখন বনে মৌ চাক খুঁজতে থাকে তখন তাদের চোখ গাছের দিকে থাকে এ সময় বাঘের আক্রমণ থেকে সতর্ক থাকতে দলের দুই জনকে চারিদিকে নজরদারি রাখতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রায় মধু আহরণ হলে প্রায় ৮ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মধূ আহরণকারী মৌয়ালদের সাথে কথা বলে জানাযায়, প্রতিটি নৌকা প্রস্তুত করতে প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হবে। প্রতিটি নৌকায় ১০/১২ জন মৌয়াল থাকেন। প্রতি জন মৌয়ালের মৌসুমে খরচ হয় ১২/১৫ হাজার টাকা। গত বছর একেক জন মৌয়াল প্রায় ২ মণ করে মধু পান। প্রতিমণ মধূ ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। তবে এবার বৃষ্টি নেই। তাই মধু কেমন হবে তা নিয়ে রীতিমত আশংকার মধ্যেই মধূ আহরণে যাচ্ছেন তারা।
অধিকাংশ মৌয়ালদের নিজস্ব পুঁজি না থাকায় মহাজনদের কাছ থেকে দাদন নিয়েই বনে যান তারা। তবে বৃষ্টিহিনতায় অনেক মহাজন এবার পুঁজি বিনিয়োগে ঝুঁকি নেননি। তাই অনেকেই রয়েছেন নানামুখী সংকটে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)