ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার হলেও দেশের কারাগারগুলোতে বন্দি লাখ ছাড়িয়েছে
দেশের কারাগারগুলোতে বাড়ছে বন্দির চাপ। প্রতিনিয়ত যে হারে নতুন বন্দি কারাগারে যাচ্ছে সে তুলনায় মুক্তি পাওয়ার সংখ্যা খুবই কম। এতে কারাগারে সেবার মান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কারা অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা কেন্দ্রীয়সহ দেশের ৬৮ কারাগারের ধারণক্ষমতা সাড়ে ৪২ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু গত ২০ নভেম্বর পর্যন্ত এসব কারাগারে বন্দির সংখ্যা ছিল ৮৪ হাজারের বেশি। এর মধ্যে নারী বন্দি তিন হাজার ৩৩৯ জন। গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির গণসমাবেশ এবং সারা দেশে চলমান পুলিশের বিশেষ অভিযান ঘিরে বন্দির সংখ্যা বেড়ে লাখ ছাড়িয়েছে।
গত রোববারও বিশেষ অভিযানে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় ৩০৭ জনকে। এদিন সারা দেশে এ সংখ্যা এক হাজারের বেশি।
রোববার ঢাকায় গ্রেফতারদের মধ্যে ৭৬ জন বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী। তাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সিনিয়র জেল সুপার সুভাষ কুমার ঘোষ জানান, চাপ থাকলেও তা সামলে নেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি সেবার মানও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।
তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে কারাগারে বন্দির চাপ বাড়ছে। কিন্তু সেই তুলনায় জামিনের সংখ্যা খুবই কম। সামনের দিনগুলোতে বন্দির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। এ বিষয়টিকে সামনে রেখে নতুন কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।
কারা সূত্র জানায়, কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি ও ঢাকা এবং চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে রাজনৈতিক বন্দির চাপ অন্যান্য কারাগারের চেয়ে অনেক বেশি। কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গি ও বিডিআর বিদ্রোহ মামলার আসামি রয়েছে। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রায়ই আসামি পাঠানো হয় কাশিমপুর কারাগারে। সূত্র জানায়, দেশের ১৩টি কেন্দ্রীয় ও ৫৫টি জেলা কারাগারে মোট ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৬২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৪০ হাজার ৬৯৭ ও মহিলা এক হাজার ৯২৯ জন। কিন্তু ২০ নভেম্বর পর্যন্ত প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুযায়ী কারাগারগুলোত আটক বন্দির সংখ্যা ৮৪ হাজার ১১৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮০ হাজার ৭৭৬ ও মহিলা কারাবন্দি রয়েছে তিন হাজার ৩৩৯ জন। এর মধ্যে হাজতি রয়েছে ৬৪ হাজার ১১৭ জন। হাজতির মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৬১ হাজার ৬০০ ও মহিলা দুই হাজার ৫১৭ জন। ১৯ হাজার ৯৯৮ জন কয়েদির মধ্যে পুরুষ ১৯ হাজার ১৭৬ ও মহিলা ৮২২ জন। এদের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রয়েছে দুই হাজার ১৮৪ জন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে পুরুষ দুই হাজার ১২১ জন ও মহিলা ৬৩ জন। এ ছাড়া বিদেশি বন্দি রয়েছে ৪৭২ জন। বিদেশি বন্দিদের মধ্যে হাজতি ২৭৮ জন ও কয়েদি ৫৫ জন। মহিলা রয়েছে ১৩৯ জন।
সূত্র মতে, কারাগারে আটক নারী বন্দিদের সঙ্গে রয়েছেন ৩৪১ জন শিশু। এর মধ্যে ছেলে ১৫৭ ও মেয়ে শিশু ১৮৪ জন। এসব শিশুর মায়েরা সাজাপ্রাপ্ত অথবা মামলায় গ্রেফতার হয়ে বন্দি রয়েছে। শিশু হওয়ার কারণে তারা মায়ের সাথেই কারাগারে থাকছে। এ ছাড়া ঢাকা ও কাশিমপুর এবং নারায়গঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে বিডিআর বিদ্রোহ মামলায় ৭৭৪ জন আসামি রয়েছে। তারা বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত।
কারা সূত্র আরও জানায়, বর্তমান দেশের বিভিন্ন কারাগারে যুদ্ধাপরাধী রয়েছেন ১২৫ জন। এদের মধ্যে হাজতি ৮৬, কয়েদি (সাজাপ্রাপ্ত) ১১ জন ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির সংখ্যা ২৮ জন। এ ছাড়া জেএমবি ও অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের সদস্য রয়েছে ৫৭৪ জন। এদের মধ্যে জেএমবির সংখ্যা ৪৩৩ ও অন্যান্য সংগঠনের জঙ্গি রয়েছে ১৪১ জন।
সম্প্রতি ঢাকার আদালত থেকে দুই জঙ্গি ছিনতাইয়ের ঘটনায় কাশিমপুর কারাগারে জঙ্গিদের মোবাইল ব্যবহারের তথ্য ফাঁস হয়। এরপর ঢাকার ডিআইজি প্রিজন ও কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপারকে বদলি করা হয়। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হলে নড়েচড়ে বসে কারা কর্তৃপক্ষ। নজরদারি বাড়ানো হয় জঙ্গিদের ওপর। বসানো হয়েছে জ্যামার। তবে কারাগার থেকে অনুমোদিত মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারছে বন্দিরা।
দেশের ৬৮ কারাগারের দায়িত্ব পালনের জন্য পুরুষ কারারক্ষী রয়েছেন আট হাজার ৫৬৫ জন এবং মহিলা কারারক্ষী ৬১৭ জন। এ সংখ্যা কারাবন্দিদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত নয়। জেল কোড অনুযায়ী আট বন্দির জন্য একজন কারারক্ষী ডিউটিতে থাকার নিয়ম রয়েছে বলে একজন কারা কর্মকর্তা জানান।
ওই কর্মকর্তা জানান, জনবল সংকট নিরসনে ১০ হাজার ৮৫৬ জন লোক নিয়োগের চাহিদাপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রায় ১২ হাজার বন্দি রয়েছে। যা ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি। একই অবস্থা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারেও। কাশিমপুর মহিলা কারাগারে ৪০০ বন্দির ধারণক্ষমতা থাকলেও সেখানে প্রায় নয় শতাধিক বন্দি রয়েছে।
সূত্র: যুগান্তর
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)