এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে শিশু স্বাধীনের খুনিরা
রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বালু নদীতে শিশুস্বাধীনের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধারের ১৯ দিন পেরিয়েগেলেও হত্যায় জড়িতরা ধরাছোঁয়ার বাইরে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, প্রভাবশালী চক্রের ইন্ধনে এই নির্মম হত্যাকাণ্ডহলেও পুলিশ প্রশাসন এখনো নির্লিপ্ত। শিশুহত্যার বিচার তো মিলছেই না, উল্টো হত্যাকারীদের হুমকি-ধমকিতে বাড়িছাড়া হয়ে মানবেতর জীবনযাপনকরতে হচ্ছে।
গত ৪ ডিসেম্বর বালু নদীতে নির্মাণাধীনসেতুর নিচ থেকে ৯বছরের শিশু ওসমান গণিস্বাধীনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। স্বাধীনরাজধানী লাগোয়া নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কায়েতপাড়া ইউনিয়নের নাওড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহীন আলমের ছেলে। স্থানীয় পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল সে। এরআগে ১ ডিসেম্বর সেনিখোঁজ হয়।
স্বাধীনেরবাবা শাহীন আলম এই হত্যাকাণ্ডেরসঙ্গে রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং স্থানীয় কায়েতপাড়াইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম ও তার ভাইমিজানুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করে আসছেন। তারভাষ্য, ভূমিদস্যু রফিককে বাড়ি লিখে নাদেওয়ায় তার শিশুসন্তানকে নির্মমভাবেহত্যাকাণ্ডের শিকার হতে হয়েছে।
লাশউদ্ধারের ১৯ দিন পেরিয়েগেলেও হত্যাকারীদের ধরতে পুলিশের কোনোভূমিকা নেই অভিযোগ করেশাহীন বলেন, ‘স্বাধীনের মরদেহ সবাই দেখেছে, হত্যাকরে আমার ছেলের মুখবিকৃত করে দিয়েছে, অ্যাসিডদিয়ে শরীর ঝলসে দিয়েছে। লাশ গুম করার সর্বোচ্চঅপচেষ্টা হয়েছে। এত কিছুর পরওপ্রভাবশালীদের ইন্ধনে স্থানীয় প্রশাসন হত্যা মামলা না নিয়ে অপমৃত্যুরমামলা দিতে বাধ্য করেছে।এরপর এটিকে হত্যা মামলার মতো গুরুত্ব দিয়েতদন্তের কথা বলা হলেওমূলত পুলিশের কোনো তৎপরতা নেই।’
পরিবারটির অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রভাবশালী চক্র সরাসরি যুক্তথাকায় গত ১৯ দিনেওময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ও ভিসেরা রিপোর্টপাওয়া যায়নি। ফলে হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্তকেউ গ্রেপ্তার হয়নি। বরং তারা অনবরতহুমকি দিয়ে যাচ্ছে।
এপ্রসঙ্গে মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘একটাশিশু কোনোভাবেই অপরাধ করতে পারে না।সেখানে পুলিশের একটা দায়িত্ব ছিলসুষ্ঠুভাবে তদন্ত করা। কিন্তু তারাসেটা পারে না প্রভাবশালীদেরচাপের জন্য, সেটা কী করেহয়? পুলিশ তার দায়িত্ব পালনকরেনি।’ সততার সঙ্গে পুলিশের দ্রুত তদন্তকাজ শেষ করা উচিতমন্তব্য করে তিনি আরওবলেন, ‘সমাজে যারা প্রভাবশালী, মাসলপাওয়ার আছে, টাকা আছে, তারাই আইন লঙ্ঘন করে।পুলিশের একটা কাজ আছেসততার সঙ্গে দ্রুত তদন্ত শেষ করা।
কিন্তুসেটা হয় না অনেকসময় ওপর থেকে চাপেরকারণে।’ তিনি আরও বলেন, সাধারণত পলিটিক্যাল লিডাররা মানুষের জমি সব থেকেবেশি দখল করে। সেখানেহয়তো সে ফ্যাক্টরি বানাবে, মাছের ঘের করবে। এটাকিন্তু তার অধিকার খর্বহচ্ছে। মনিটরিং ও প্রশাসনের জবাবদিহিনা থাকার কারণে এগুলো ঘটছে।
জানাযায়, হত্যাকাণ্ডের দুই মাস আগেরংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম নিহত স্বাধীনের দাদারেজাউল আলমকে বাড়িটি নামমাত্র মূল্যে বিক্রির জন্য জোর চাপদিয়ে আসছিল। তার সঙ্গে আরেকজননারীও ছিল। কিন্তু রেজাউলতাদের সাফ জানিয়ে দেনতিনি বাড়ি বিক্রি করতেচান না। কেননা বাড়িবিক্রি করলে তাদের থাকারজায়গা হবে না। তারপরওযদি কখনো বিক্রি করতেহয় তিনি নিজেই রফিকেরবাড়িতে গিয়ে প্রস্তাব দেবেন।অভিযোগ রয়েছে, রফিক তার ক্যাডারবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে দিনের পরদিন নির্যাতনের হুমকি দিয়ে আসছিলেন রেজাউলেরপরিবারকে।
শুরু হয় হামলা, নির্যাতন, নিপীড়ন ও চাঁদাবাজি। হত্যাকাণ্ডেরআগের দুই মাসে পরিবারটিরওপর একাধিকবার হামলার ঘটনা ঘটে। এমনকিস্বাধীনের বাবা শাহীন আলমেরদোকানে দুবার হামলা চালিয়ে মারধর করে রফিকের সন্ত্রাসীরা।এদিকে, স্বাধীন হত্যার এক সপ্তাহ আগেরফিকুলের ভাই মিজানুর রহমানস্বাধীনের পরিবারকে উচিত শিক্ষা দেবেনবলে বাড়িতে এসে হুমকি দিয়েযান। ঠিক এক সপ্তাহপর স্বাধীন নিখোঁজ হয়। এরপর ওসমানগণির বীভৎস লাশ নদীতে পায়তার পরিবার।
গতকালশনিবার কথা হয় নিহতশিশু স্বাধীনের মা উম্মে হানিমুন্নীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘১৯দিন হয়ে গেল, কিন্তুআমার সন্তান হত্যার সঙ্গে জড়িতরা মুক্ত বাতাসে শ্বাস নিচ্ছে। রফিক ও তারভাই মিজানের জমি দখলের ষড়যন্ত্রেরবলি হয়েছে আমার ছেলে। কিন্তুরূপগঞ্জের থানা-প্রশাসনের কোনোসহযোগিতা আমরা পাচ্ছি না।’
নিহত শিশু স্বাধীনের বাবাশাহিনুর আলম বলেন, ‘আমারশিশুসন্তান খুনের পর আমি পুলিশেরকাছে গিয়েছি, অপরাধীদের নাম বলেছি। আমিবলেছি তারা আমার দোকানভাঙচুর করেছে, আমি প্রেস কনফারেন্সকরেছি, সেখানেও আমার সঙ্গে খারাপআচরণ করেছে। বাসায় হামলা করেছে, এখন আমি অন্যজায়গায় থাকি। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুলিশকিছুই করেনি।’ তিনি প্রশাসনের উদ্দেশ্যেপ্রশ্ন তোলেন, ‘আমি প্রশাসনের
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)