কলারোয়ায় দু’সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় এজাহার, দাফন সম্পন্ন
যৌন নির্যাতনকারিসহ তিন জনের নামে কলারোয়া থানায় এজাহার দেয়া হয়েছে।
শিশু কন্যার যৌন নির্যাতনকারির বিচার না পেয়ে দু’সন্তানকে হত্যার পর মায়ের আত্মহত্যার ঘটনায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে শুক্রবার বিকেল ৫টায় লাশ তিনটি কলারোয়া উপজেলার পূর্ব লাঙ্গলঝাড়া গ্রামে নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
এদিকে, আত্মহননকারি মাহফুজা খাতুনের ভাই যশোর জেলার শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নের বসতপুর গ্রামের হযরত আলীর ছেলে মশিয়ার রহমান বাদি হয়ে শুক্রবার সন্ধায় ধর্ষণের চেষ্টাকারি হৃদয় গাজী, তার বাবা লাল্টু গাজী ও আত্মহননকারি মাহফুজার চাচা শ্বশুর ইয়াকুব আলীর নাম উল্লেখ করে থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।
শুক্রবার সকালে পূর্ব লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের শিমুল সরদারের বাড়িতে যেয়ে দেখা গেছে, উৎসুক মানুষের ভিড়।
তারা জানান, ছোট শিশুর ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় বিচার পেতে স্থানীয় ইউপি সদস্য, মহিলা সদস্য ও লাঙ্গলঝাড়া চেয়ারম্যানের কাছে যেয়েও হতাশ হয়েছেন মাহফুজা। আগামি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের হিসাব নিকাশ করতে দায় এড়িয়ে সময় পার করেছেন সকলে। অবশেষে মা ও স্বামীকে জানিয়েই দু’সন্তানকে মেরে ফেলে নিজে আত্মহত্যা করার কথা বলেছিলেন মাহফুজা। উগ্র সভাবের মাহফুজা দু’সন্তানকে মেরে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলে পড়েও কথা বলেছেন স্বামীর সঙ্গে। একপর্যায়ে মারা যাওয়ার পূর্ব মুহূর্তে মাহফুজার হাত থেকে মোবাইল ফোনটি ঘরের মেঝেতে পড়ে যায়।
মাহফুজার ভাই মশিয়ার রহমান বলেন, বিয়ের পর থেকে চাচা শ্বশুর ইয়াকুব আলীর বাড়িতে যাতায়াত করতো বোন মাহফুজা। দুলাভাই কাজের জন্য বেশিরভাগ সময় বাড়িতে না থাকার কারণে বোনকে কু’প্রস্তাব দেওয়ায় চাচা শ্বশুরের বাড়িতে যাওয়া বন্ধ করে দেয় মাহফুজা। একপর্যায়ে মাহফুজাকে ব্যাপক মারপিট করা হলে স্থানীয়ভাবে শালিসি বৈঠক ডেকে মিটিয়ে দেওয়া হয়। এরপরও তার বোনের উপর ইয়াকুবের কুদৃষ্টি ছিল। দেড় বছর আগে গভীর রাতে ঘরের টালি খুলে ভিতরে ঢোকার চেষ্টা করলে বোন টর্চ মেরে চিৎকার করলে ইয়াকুব পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে তিনি লোকজন নিয়ে ইয়াকুবকে খুঁজতে এলে তিনি পালিয়ে যান।
যদিও ইয়াকুব আলী তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মাথা গরম থাকার কারণে বৌমা সকল সময় তাদের সঙ্গে বিরোধ করতো।
এদিকে, শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে মাহফুজা ও তার দু’সন্তানের লাশের ময়না তদন্ত শুরু করেন সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. অসীম সরকার ও ডা. সেলিম রেজা।
সুরতহাল প্রতিবেদনের সঙ্গে মৃতদেহের কোন কোন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখে দায়িত্বপালনকারি চিকিৎসক ময়না তদন্তের কাজ বন্ধ রেখে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারি কলারোয়া থানার উপ-পরিদর্শক আবু হানিফকে ডেকে আনেন মর্গে।
পরে সুরতহাল প্রতিবেদন সংশোধন করে ময়না তদন্ত সম্পন্ন করা হয়।
শুক্রবার ময়না তদন্তের দায়িত্বে থাকা সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. সেলিম রেজা সুরতহাল প্রতিবেদনে ত্রুটি থাকার কথা অস্বীকার না করেই বলেন, ময়না তদন্ত প্রতিবেদন না দেওয়ার আগে কোন মন্তব্য করা যাবে না।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আত্মহননকারি মাহফুজার ভাই মশিয়ার রহমান জানান, তিনি মনে করেন ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় বিচার না পাওয়া, থানা পুলিশ করতে চাইলে ধর্ষণের চেষ্টাকারির বাবার হুমকি ও মাহফুজার চাচা শ্বশুর ব্যবসায়ীক বিরোধিতায় বোন, ভাগ্নে ও ভাগ্নিকে মরতে হয়েছে। মৃত্যুর জন্য ওই তিনজন দায়ী। তাই ওই তিনজনকে আসামি করে তিনি থানায় এজাহার দিয়েছেন।
কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মীর খায়রুল কবীর জানান, মশিয়ার রহমানের এজাহারটি পেয়েছেন। যাঁচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রসঙ্গত, শবেবরাতের দিন সোমবার সকাল ১১টার দিকে বাড়িতে খেলা করতে এলে পূর্ব লাঙ্গলঝাড়া গ্রামের লাল্টু গাজীর ছেলে হৃদয় ঘরের পাশে ডেকে নিয়ে মাহফুজার পাঁচ বছরের মেয়ে মোহনাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। বিষয়টি জানতে পেরে স্বামী, শ্বশুর ও জনপ্রতিনিধিদের জানিয়েও বিচার না পাওয়ায় ঘোষণা দিয়েই দু’সন্তানকে হত্যা করে নিজে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)