‘ফেনসিডিল ছাড়া তাদের চলেই না’
আসছে ঈদ, কলারোয়ায় সীমান্তে পথে আসছে ভারতীয় পণ্য!
আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে সাতক্ষীরার কলারোয়া সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে ভারত থেকে নানান পণ্যসামগ্রি অবৈধভাবে আসছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দিনের বিভিন্ন সময়, বিশেষ করে রাতের আধারে চোরাই পথে এ সকল পণ্য উপজেলার ১৭ কি.মি সীমান্ত পথের বিভিন্ন স্পট দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছে বলে জানা গেছে। এতে কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী অনেকের বরাত দিয়ে একাধিক সুত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের আসন্ন ঈদের বাজার দখল করার জন্য গভীর রাতে সীমান্তের রাস্তাঘাট জনশূন্য হলে ভারতীয় পণ্য পাচারের ঢল নামে। সীমান্তবর্তী সোনাই নদী ও ইছামতি নদীর বিভিন্ন ঘাট দিয়ে এসব পন্য বাংলাদেশে আনা হচ্ছে। এর পাশাপাশি ল্যান্ডপথেও চোরাচালানি হচ্ছে।
জানা গেছে, কলারোয়া সীমান্ত এলাকা কেঁড়াগাছি চারাবাড়ি ঘাট, কেঁড়াগাছি কুটিবাড়ি ঘাট, কেঁড়াগাছি রথখোলা ঘাট, কেঁড়াগাছি গাড়াখালী ঘাট, দক্ষিণ ভাদিয়ালী ঘাট, ভাদিয়ালী তেতুলতলা ঘাট, উত্তর ভাদিয়ালী কামারবাড়ি ঘাট, রাজপুর খা-বাগানের ঘাট, চান্দা স্লুইস গেট ঘাট, বড়ালী স্লুইস গেট ঘাট, উত্তর বড়ালী ঘাট, হিজলদী ভদ্রশাল ঘাট, হিজলদী শিশুতলা ঘাট, সুলতানপুর ঘাট, সুলতানপুর তালসারি ঘাট, গোয়ালপাড়া ঘাট, চান্দুড়িয়া ঘাট, কাদপুর ঘাট দিয়ে ভারতীয় পন্য প্রবেশ করছে।
সূত্রটি আরো জানায়, বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে এসব ঘাট দিয়ে রোজা এবং আসন্ন ঈদের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য সামগ্রী আসছে। এর মধ্যে ছোলা, বুট, জিরা, মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচী, আঙ্গুর, আপেল, মালটা, ন্যাশপতি, বেদানা, কিসমিস, শার্ট পিস, প্যাণ্ট পিস, রকমারী পাঞ্জাবি, থ্রিপিস, টুপিস, জর্জেট শাড়ী, ওড়না, গেঞ্জি, শিশু পোষাক, বালিশের কভার, বেডশীট, তোয়ালে, সীট কাপড়, উন্নতমানের বোম্বে প্রিণ্ট শাড়ী, সাউথ ইন্ডিয়ান সিল্ক, কাতান, বেনারসী, আতর, সেন্ট, বডি লোশন, সেভিং লোশন, সেভিং ক্রীম, বিভিন্ন প্রকারের ইমিটেশন অলঙ্কার, হাড়ি, কড়াই, স্টিলের প্লেট, গ্লাস, বাটি, গামলা, বালতি, কড়ির কাপ, পিরিচ, প্লেট, গামলা, ডিনার সেট, শিশু খেলনা, সেনেটারী ব্যাসিন, পাইপ, প্যান, বৈদ্যুতিক বাল্বের ফিলামেণ্ট, এলইডি বাল্ব, ঘর ওয়ারিং সামগ্রী, সিলিং রোজ, সকেট, জুতা, রকমারী স্যান্ডেল অন্যতম। পণ্যগুলো সাইকেল, মটরসাইকেল, ইঞ্জিন ভ্যান, নসিমন বা আলমসাধু ভরে বাঁগআচাড়া, বাঁকড়া, কলারোয়া, ঝাউডাঙ্গা, কেশবপুর, রাজগঞ্জ, মনিরামপুর, যশোর, নওয়াপাড়া, পাটকেলঘাটা ও চুকনগরে প্রবেশ করে।
এরপর এসব পণ্য চাহিদা মত খুলনা, বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন বাজার সহ রাজধানীতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে সুত্র জানায়।
ওই সকল পণ্য সামগ্রির পাশাপাশি ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক ও অবৈধ অস্ত্রও চোরাচালানি পণ্যের তালিকায় থাকে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তাদের ভাষায়- ‘ফেনসিডিল ছাড়া তাদের চলেই না।’
সুত্র মতে, সীমান্তবর্তী বালিয়াডাঙ্গা, কেঁড়াগাছি, সোনাবাড়িয়া, হিজলদী, গয়ড়া, চান্দুড়িয়া বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে চোরকারবারীদের দোকান ও রীতিমতো অফিসও আছে। ওইসকল অফিস থেকে তাদের চোরাচালানী সিন্ডিকেট পরিচালিত হয়।
এদিকে, বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা বৈধ পথে ভারতীয় পণ্য সামগ্রী আনার দাবী করে জানান, বৈধ পথে আমদানীর বহু গুণ চোরাই পথে আনা হয় বলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। তাছাড়া চোরাপথে আসার ফলে দক্ষিণাঞ্চলে হাটবাজার এখন সস্তা দামের চাকচিক্যময় ভারতীয় পণ্যে সয়লব হয়ে গেছে। এতে দেশীয় পণ্য অবিক্রিত হয়ে পড়ার উপক্রম।
সীমান্তের কতিপয় অসাধু জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও কিছু অসাধু সীমান্তরক্ষীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বখরা নিয়ে টাকার বিনিময়ে সুবিধা নিয়ে পরোক্ষ-প্রত্যক্ষভাবে চোরাচালানে সহায়তা করছে বলে সীমান্ত সুত্রগুলো জানায়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)