Mysterious Migration of Hercules (হারকিউলিসের রহস্যময় স্থানান্তর)
কেন ধর্ষণ আর হত্যার সাজা দিতে হারলিউলিস এসেছিলেন। এখন বুঝতে পারছেন?
শিল্পকর্ম সৃষ্টির পেছনের গল্পঃ
গ্রীক আদর্শবাদের কারণেই হয়তো দেবতা আর মানুষের মধ্যকার দূরত্ব কিছুটা হলেও ঘুচেছে। তারই অনুসরণে রোমান মিথোলজির মহান চরিত্র হারকিউলিসের জন্ম হয়েছিল মানুষের ঘরে। দেবতা জিউস ও মানবি আক্লমিনার সন্তান তিনি। মৃত স্ত্রী ও সন্তানের পূনর্জীবনের জন্য তিনি দেবতা ইউরেস্হিউস এর উপদেশক্রমে বার রকম অসম্ভব কাজ করার সিদ্ধান্ত নেন। এই কাজ গুলোকে সমষ্টিগতভাবে বলা হয় হারকিউলিসের শ্রম । সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল নিমিয়ার এক সিংহকে বধ করা, বাস্রতের হাইড্রাকে হত্যা করা,রাজা অজিয়াসের আস্তাবল পরিষ্কার করা, স্টিমফ্যালিন পাখিদের তাড়ানো ইত্যাদি।
প্রাচীন রোমানদের কাছে তাই হারকিউলিস ছিলেন অনেকটা বন্ধুর মতোই। ঠিক তেমনি ভাবে যুগ যুগ সময় পরেও বাংলাদেশের নিরীহ মানুষের পাশে দাড়িয়ে স্বপ্নের মতো ধর্ষকের নিধন করছে কোন এক মানুষরূপী হারকিউলিস।
২০১৯ সালে এসেও বিচারের অভাবে বাংলাদেশে একের পর এক ধর্ষণ তথা শিশুধর্ষণ চরম আকার ধারন করলেও, প্রশাসন যখন কোন বিচার করতে পারছিলো না, ধর্ষকরা ক্ষমতার জোরে মুক্তি পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। ঠিক সেই সময় রাতের আঁধারে কেউ একজন ধর্ষণের বদলা নিতে নেমেছিল। ধর্ষকের লাশের গলায় অপরাধের স্বীকারোক্তিমূলক চিরকুট ঝুলিয়ে চিরকুটে বিচারক হিসেবে নিজেকে হারকিউলিস নামে দাবী করেছিল সে। সেই অজ্ঞাত একজন মানুষ হারকিউলিস হয়তো এটিই প্রমাণ করতে চেয়েছিলো, চাইলেই অন্যায়ের বিচার করা যায়। সেজন্য ঈশ্বর কিংবা দেবতার অপেক্ষায় থাকতে হয় না। মানুষের মাঝেই দেবতার বাস।
এই চিত্রটি বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার সম্মুখে যেনো প্রশ্ন ছুড়ে দিচ্ছে। হারকিউলিসের সিংহরূপী মুখোশ এবং হাতের অস্ত্রটি তাকে রোমান দেবতার কোঠায় রেখে দিলেও পরনের আটপৌরে লুঙ্গী ও স্যান্ডেল এবং শরীরের রং ও গঠন তাকে কেবল সাধারণ মানুষ হিসেবেই পরিচয় দেয়নি বরং বাঙ্গালি জাতির সাহসীকতাকেও তুলে ধরেছে। যে সাহস তারা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এনেছিলো। হাতে ধরে রাখা পাল্লাটির একপাশের ধর্ষিতারা ও অন্য পাশে হারকিউলিসের হাতে খুন হওয়া গলায় চিরকুটধারী সেইসব ধর্ষকের লাশ।
ফিগারের পেছনের অংশে বাংলাদেশের সংসদভবনের সামনে রাখা ভাস্কর্যটি ভাসমান অবস্থায় বিচার কার্যের দূর্বলতাকেই ইঙ্গিত করছে। এবং ভাস্কর্যে বিচারের দেবীর ছোখে কালো কাপড় বাধা, যাতে সে নিরোপেক্ষ বিচার করতে পারে। কিন্তু আজকের প্রেক্ষাপটে কালো কাপড় বাঁধার কারণে সে ন্যায়-অন্যায়, বিচার- অবিচার কিছুই করতে পারছে না। এটা মুলত প্রশাসনিক অন্ধত্ত্ব। তাই আমার চিত্রে হারকিউলিসের মুখ কাপড় দিয়ে বাঁধা থাকলেও তার চোখ খোলা যাতে সে দেখে দেখে অন্যায়ের বিচার করতে পারে। সেই সাথে জাতীয় প্রতীক শাপলা যেভাবে নুয়ে পড়েছে তাতে হয়তোবা জাতি হিসেবে বাঙালির টিকে থাকার প্রশ্নই উঠেছে। কারণ ঘড়ির কাটায় রাখা পা দু’টি এন্টিক্লোকওয়াইজ মানব সভ্যতার ফেলে আসা দিনগুলোকে নির্দেশ করছে। তাই সেখানে সময় সংখ্যার উল্টো বিন্যাস। অর্থাৎ 12,11, 10, 9 এমন। ধর্ষণের বর্বরতা প্রাচীন আর আধুনিক যুগের মাঝে একধরনের অদৃশ্য ভয়ঙ্কর সংযোগ স্থাপন করছে।
সর্বোপরি আইনের অন্ধত্বের কারণে যদি আজকের হারকিউলিসের মত সকল অন্যায় ও অবিচারের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য হাজারো হারকিউলিসের জন্ম হয় তবে তা প্রশ্নবিদ্ধ করে আমাদের সমাজ, আইন, বিচার ও প্রশাসন ব্যবস্থাকে। যা একটি জাতির সুশাসন প্রতিষ্ঠার প্রধান অন্তরায়।
বিঃদ্রঃ সাধারণত বানিজ্যিক বিজ্ঞাপন কিংবা বিনোদনের জন্য কাট আউট বোর্ড এ-র ব্যবহার আমরা দেখে থাকি। কিন্তু এখানে আমি অনেকটা হার্ডবোর্ডকে কাট আউট বোর্ড পেইন্টিং-র রূপ দিয়েছে। তবে তা চারকোনা ফ্রেমকে প্রাধান্য না দিয়ে সম্পূর্ণভাবেই চিত্রের বিষয়বস্তুকে স্বাধীনতা দেয়ার জন্য। ফিগারের হাতে ধরা পাল্লাটি রিপোজারি ফ্রেমিং এ-র ন্যায়। যাতে চিত্র ভাবনায় কিছুটা ত্রিমাত্রিকতা প্রকাশ পায়।হারকিউলিস এই চিত্রের মূল বিষয় হলেও গোল্ডেন রেশিওর দিক থেকে বিবেচনা করলে সিংহের মুখটি নয়, বরং মানুষের চোখ দু’টিই ফোকাস করার চেষ্টা করেছি । যাতে সৃষ্টিশীলতার ক্ষেত্রে মানুষের ক্ষমতাকেই এখানে ঈশ্বরের সমকক্ষ করে ভাবা যেতে পারে।
লেখক:
জয়ন্ত মন্ডল
সাবেক শিক্ষার্থী,চারুকলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)