আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা অনিয়ম, সেবা পেতে বিড়ম্বনা
জি.এম আল ফারুক, (আশাশুনি): আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নানা অনিয়ম, সেবা পেতে বিড়ম্বনা ও দুর্গতির হাতছানিতে আবদ্ধ হতে শুরু করেছে। ফলে সেবা গ্রহিতাদের ভোগান্তি, সরকারি নির্দেশ অমান্য করার মত চরম ধৃষ্টতা ও স্বাভাবিক কার্যক্রমে অনীহা দেখে সচেতন মহল ও সেবা নিতে আসা মানুষ হতবাক হচ্ছে।
প্রত্যেক সরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন বাধ্যতামূলক থাকলেও এ হাসপাতালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন না করার মত নির্লজ্জতাপূর্ণ কাজ হয়ে থাকে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জন্য মঞ্জুরীকৃত পদের সংখ্যা ২১০টি, তদস্থলে পুরন আছে ১৪৭টি, ফলে ৬৩ জন জনশক্তি না থাকায় সঠিক ভাবে হাসপাতাল পরিচালনা হচ্ছেনা।
হাসপাতালে (হাসপাতাল ও ইউনিয়ন) প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ২১টি পদ থাকলেও পুরন আছে মাত্র ১১টি। ফলে ১০ জন প্রথাম শ্রেণির কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতেই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পরিচালিত হচ্ছে। ২য় শ্রেণির ২৯টির স্থলে একটি পদ শূণ্য, ৩য় শ্রেণির ১৪১টি পদের স্থলে রয়েছেন ১০১ জন। শূণ্য আছে ৪০ জন। ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারী ১৯ জনের স্থলে আছে ৭ জন, ফলে ১২ জনের শূন্য পদ নিয়ে চলছে হাসপাতাল। অতীব গুরুত্বপূর্ণ পদ জুনিয়র কনসালট্যান্ট সার্জারী, মেডিসিন, এ্যনেসথেসিয়া, গাইনি ৪টি পদে কেউ নেই।
মেডিকেল অফিসারের ২টি পদের দু’টিই, ডেন্টাল সার্জন ১টিই শূন্য রয়েছে। এছাড়া সহকারী সার্জন (ইউনিয়ন) ১১টি পদের মধ্যে ৩টি পদ শূণ্য রয়েছে। হাসপাতালকে সার্বক্ষণিক সেবাদানের অন্যতম প্রধান শক্তি সিনিয়র স্টাফ নার্স ২৫টি পদের ২৪টি পুরণকৃত থাকলেও কৌশলে ৫ জনকে প্রেষণে অন্যত্র দায়িত্ব দেওয়ায় ভোগান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক ৩ জনের একজনকে টিবি ক্লিনিকে প্রেষণে এবং চিকিৎসা সহকারী (সবসৃষ্ট) ইউনিয়ন ১১টি পদের ৫ জন শূন্য রাখার পরও একজন অন-অনুমোদিত অনুপস্থিত থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জনবল সম্পর্কে ধারনা প্রদান করা হলো। কিন্তু হাসপাতাল সঠিক ভাবে পরিচালিত না হওয়ার অভিযোগ বেশ জোরালো হচ্ছে। রোগিরা হাসপাতালে গেলে চিকিৎসকের অভাবে সেবা পাওয়া কষ্টকর ও ভোগান্তিকর বলে সেবা নিতে আসা মানুষ খুবই জোরেশোরে অভিযোগ করে থাকেন।
অক্সিজেনের ব্যবহার নিয়ে রয়েছে নানা অভিযোগ। অক্সিজেন না থাকা, অক্সিজেন ব্যবহারে যান্ত্রিক সমস্যার কারনে রোগিরা অক্সিজেন না পাওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত ১১ আগষ্ট স্থানীয় মসজিদের এক মুসল্লি জোহরের নামাজরত অবস্থায় স্ট্রোক করলে তাকে সাথে সাথে হাসপাতালে নেওয়া হয়, কিন্তু অক্সিজেন দিতে না পারায় ও রোগির মাথা পিলারে লেগে কেটে গেলেও সেলাই না করে সাতক্ষীরায় রেফার করা হয়। সাতক্ষীরা হাসপাতালে নিয়ে তাকে সেলাই দেওয়া হয়।
সেলাই ছাড়া দীর্ঘ সময় থাকায় রোগির অনেক রক্ত ঝরে গিয়েছিল। রবিবার (২০ আগষ্ট) এক অন্তঃসত্তা মহিলাকে ইমার্জেন্সিতে নেওয়া হলেও আল্ট্রাসনো গ্রাম করার প্রয়োজন পড়লেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করতে পারেননি। তাদের অজুহাত হাসপাতালে শনিবার ও বুধবার আল্ট্রসনো গ্রাম করা হয়ে থাকে। বাধ্য হয়ে রোগিকে সাতক্ষীরা নিতে হয়।
এদিন দুপুর ১২ টা পর্যন্ত হাসপাতালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে সদুত্তর পাওয়া যায়নি। আশাশুনি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মিজানুল হক সাংবাদিকদের জানান, জনবল সংকটের কারনে অনেক সমস্যায় আছি। রোগিদের চাহিদা পুরনের সুযোগ না থাকায় সব সময় সবকিছু করা সম্ভব হচ্ছেনা। তারপরও আমরা আমাদের সক্ষমতাকে সর্বোচ্চ ভাবে কাজে লাগিয়ে রোগিদের সেবা প্রদানসহ সবকিছু করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ক্যাপশান: আশাশুনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অফিস সময়ে জাতীয় পতাকা উঠানো হয়নি।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)