কলারোয়ায় বহু ভাতাভোগি পাননি ভাতার টাকা, চলে গেছে অন্যের নাম্বারে!
স্বাামী নেই। বাস্তভিটা ছাড়া জমিজমা নেই। দুই সন্তান প্রতিবন্ধী। উপার্জন বলতে ভিক্ষাবৃত্তি আর বিধবা ভাতার সামান্য কয়টা টাকা। সেই টাকা অন্যের নাম্বারে চলে গেছে। -কথা গুলো বলতে বলতে দু’চোখের পানি পড়তে থাকে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার ৬নং সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের মাদরা গ্রামের আতিয়ারের বিধবা কন্যা ফিরোজা খাতুনের।
স্বামীর ২ কাঠা বাস্তভিটার উপর বাস করে একই গ্রামের অহেদ সরদারের কন্যা হাসিনা খাতুন। জমিজমা না থাকায় স্বামী মারা যাওয়া ও ৩ কন্যা বিয়ের পরে ভিক্ষা করে সংসার চলত। কিন্তু দু’বছর আগে হার্টের একটা ভাল্ব অকেজো হওয়ায় চলতে পারে না তিনি। এখন মেয়েরা কিছু সাহায্য করে আর বিধাবা ভাতায় দিন চলে। কিন্তু সেই ভাতার টাকা পায়নি হাসিনা।
একই উপজেলার চান্দা গ্রামের প্রতিবন্ধী বিউটি, বিধবা সালেহা, রহিমা, মাদরা গ্রামের প্রতিবন্ধী আসমা, প্রতিবন্ধী তৌহিদ, সোনাবাড়িয়া গ্রামের বিধবা ফিরোজাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে হাজার হাজার ব্যক্তি ভাতার টাকা পায়নি। ভাতার টাকা হিসাবে ধরে খুড়িয়ে তাদের সংসার চলে। ওষুধ কিনতে হয়।
স্থানীয় সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, মেম্বর কামরুজামান, মেম্বর হাসান তাদের ইউনিয়নে প্রায় তিন শতাধিক ব্যক্তির ভাতা না পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে জানান- ‘সমাজসেবা দপ্তরের নির্দেশ মোতাবেক মাইকিং করে তিনবার বয়স্ক বিধবা প্রতিবন্ধীদের ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে হাজির করা হয়। প্রথমবার আইডি কার্ডের কপির উপর মোবাইল নাম্বার লিখে জমা নেওয়া হয়। ২য় বার সমাজসেবা দপ্তরের কর্তারা ভাতা ভোগীদের আইডি ও মোবাইল নাম্বার যাচাই করে। তৃতীয় দফায় সমাজসেবা দপ্তরের সংগে মোবাইল ব্যাংকিং ”নগদ” এর কর্মচারীরা এসে মোবাইল সেট নিয়ে নাম্বার গুলো যাচাই করে।’
একই অভিযোগ করে দুইবার বঙ্গবন্ধু কৃষি পদক প্রাপ্ত দেয়াড়া ইউনিয়নের মহিলা মেম্বর আকলিমা খাতুন জানান, ‘তার এলাকা ৪, ৫ ও ৬ ওয়ার্ডের অন্ততঃ দুই শতাধিক ভাতা ভোগী এবার টাকা পায়নি। ভুক্তভোগীরা সমাজসেবা দপ্তরে যোগাযোগ করলে বলা হচ্ছে টাকা দেওয়া হয়েছে।’
‘তবে যে নাম্বারে টাকা গেছে বলা হচ্ছে, তা ভাতাভোগীর নয়। তাও ঢাকা, রংপুর, দিনাজপুর, যশোরে বা দেশের বিভিন্ন স্থানে সেই নাম্বারধারীর অবস্থান। রিং দিলে বেশীর ভাগ টাকা পাওয়ার কথা অস্বীকার করছে। অনেক নাম্বারে টেলিফোন রিসিভ হচ্ছে না। অনেক নাম্বারে সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না।’ -এভাবে সমগ্র উপজেলার হাজার হাজার ভাতা ভোগী এবার টাকা পায়নি। টাকা না পেয়ে প্রতিদিন দলে দলে ভাতা ভোগী উপজেলা সমাজসেবা দপ্তরে ভীড় করছে। সমাজসেবা দপ্তর থেকে কেউ সমাধান পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরে আলম নাহিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তারা মোবাইল নাম্বার তালিকাভূক্ত করার সময় ভুল লেখার কারণে সমস্যা হয়েছে। তবে টাকা উদ্ধারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’
এদিকে, বুধবার রাতে কলারোয়া নিউজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ম্যাসেঞ্জারে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নূরে আলম নাহিদ প্রকাশিত খবরটির ব্যাখ্যা লিখে পাঠিয়েছেন, দিয়েছেন কিছু ছবি।
সেটি হুবুহু তুলে ধরা হলো-
সমাজসেবা অফিসার, কলারোয়া সাতক্ষীরা বলছি…
নিউজের প্রেক্ষিতে, আমাদের ব্যাখ্যা নিম্নরূপ
১. ফিরোজা খাতুন এর টাকা সঠিক নাম্বারে প্রেরন করা হয়েছে, নগদের পিন ভূলে যাওয়া কিংবা প্রযুক্তিগত কোন কারনে টাকা উওোলন, অথবা সে জানেই না তার টাকা একাউন্টে জমা হয়েছে।
২.হাসিনা খাতুনের টাকা তার সঠিক নাম্বারেই ১৮ জুন প্রেরনের জন্য পেরোল প্রদান করা হয়েছে,আশা করি খুব শীঘ্র তিনি টাকা পেয়ে যাবেন।
৩. প্রতিবন্ধী বিউটি,এমআইএস করার সময় স্হানীয় গ্রাম পুলিশের নাম্বার দিয়েছিল,মেম্বার হাসান সাহেব ও আমরা সরাসরি তদারকি করে তার টাকা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে,এবং পরবর্তীতে যাতে তিনি নিজে ভাতা উওোলন করতে পারেন,তার নাম্বার পরিবর্তন করে নিজের নাম্বার গ্রহন করা হয়েছে।
৪. সালেহা,তিনি ইতোমধ্যে ভাতার টাকা বুঝে পেয়েছেন।
৫. রহিমা,তাহার টাকা সঠিক নাম্বারেই প্রেরন করা হয়েছে।
৬. আসমা খাতুন,তাহার মোবাইল নাম্বারের একটি অংশে অস্পষ্ট লেখার কারনে ২ এর জায়গায় ১ টাইপ করা হয়েছে।তারপরেও তার টাকা ফেরত এসেছে,পুনরায় তার টাকা সঠিক নাম্বারে প্রেরন করা হবে,আশাকরি অচিরেই তিনি টাকা পেয়ে যাবেন।
৭. প্রতিবন্ধী তৌহিদের টাকা সঠিক নাম্বারেই প্রেরন করা হয়েছে, তবু কেন তিনি টাকা পাচ্ছেন না,বোধগম্য হচ্ছে না।হয়তো তিনি খোজ না নিয়ে অভিযোগ করছেন।
মোবাইল নাম্বারের কোন এক সংখ্যা ভূল টাইপ হলে বাংলাদেশের যেকোন প্রান্তেই যাওয়াটা স্বাভাবিক।
সমাজসেবা দপ্তরে সমাধান পাচ্ছে না,কথাটা মনে খুব আঘাত করেছে,আমাদের নৈশ প্রহরি মেহনতি মানুষের সেবায় নিয়োজিত থেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে ফুসফুসের একটি অংশ অকেজো হয়ে জীবন মরণের সন্ধিক্ষণে, আমি নিজে করোনার সকল উপসর্গ নিয়ে জ্বরে আক্রান্ত হলেও টেস্ট করাই নি,রোজা,ইদসহ টানা কয়েকমাস দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি,আমরা সকল স্টাফরাই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছি,জীবনকে বাজি রেখে অসহায় মানুষ যাতে সঠিকভাবে টাকা পায় তার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গিয়েছি ও যাচ্ছি।
সমাজের দর্পন গণমাধ্যমসহ কলারোয়াবাসী সকলের সহযোগীতা কামনা করি, আশা করি সবাই সঠিকভাবে টাকা পেয়ে যাবেন।
ধন্যবাদ…
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)