কালিগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অর্ধলক্ষ টাকার বাণিজ্য
উপরি দোষ ভালো চিকিৎসা করার নাম করে সিরিয়াল রাপিস্ট কথিত কবিরাজ, গুনিন বাবু পূর্ব পরিচয়ে মা-বাবাকে ভুল বুঝিয়ে তাদের দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়ুয়া কন্যাকে মোটরসাইকেল যোগে তার বাড়ি হতে নিয়ে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে উপুর্যপরি ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দিতে অর্ধ লক্ষ টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে এ ব্যাপারে থানার উপ-সহকারী পরিদর্শক তরুণকে ভুল তথ্য দিয়ে স্থানীয় দফাদার তপন এবং ইউ.পি সদস্য আবু বক্কার এর নেতৃত্বে একটি প্রতারক চক্র থানার মামলার ভয় দেখিয়ে ধর্ষক কবিরাজ গুনিন বাবুর নিকট হতে ৫০ হাজার টাকা আদায় করে হাতিয়ে নিয়েছে।
ভুক্তভোগী ধর্ষিতার পিতা মাতাকে ভুল ও ভয় দেখিয়ে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে বাকি টাকা নিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে।
ঘটনাটি ঘটেছে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার বেলা ১২টার সময় সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল ইউনিয়নের ঘুষুড়ি ১০ শয্যা হাসপাতাল সংলগ্ন ঋষি পাড়া ঘুষুড়ী গ্রামে। ঘটনা সত্য হলেও স্থানীয় চেয়ারম্যান, থানা পুলিশ কিছুই জানেন না বলে জানান।
বিষয়টি ফাঁস হওয়ার খবর পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে ঘুষুড়ি গ্রামের ঋষিপাড়ার ধর্ষিতা স্কুল ছাত্রীর পিতা বীরেন্দ্র দাস, তার স্ত্রী ঝর্ণা দাস ও তার শাশুড়ি মালতি দাস সহ পরিবারের একাধিক সদস্যরা উপস্থিত সাংবাদিকদের জানান, বরেয়া গ্রামের মৃত বয়ে গাজীর পুত্র সিরিয়াল রেপিস্ট কথিত কবিরাজ গুনিন বাবু (২৩) এর সঙ্গে তাদের পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে গত ১৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সকালে বাবু কবিরাজ তাদের বাড়িতে আসে। এসে বলে তোমাদের মেয়ে (ঘুষুড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী) উপরি দোষ আছে, এক্ষুনি ভালো চিকিৎসা ঝাডফুঁক না করালে মেয়ে বাঁচবে না বলে ভয় দেখায়। তখন আমরা বলি গরিব মানুষ এত টাকা কোথা থেকে পাব তখন বাবু কবিরাজ বাজার হতে কিছু মাছ তরকারি কিনে আমাদের বাড়িতে দেয়। এরপর মেয়েকে চিকিৎসার নাম করে তার মোটরসাইকেল যোগে আমার কন্যাকে এবং আমার ভাইয়ের কন্যাকে সাথে নিয়ে তার বাড়িতে নিয়ে যায়। তার বাড়িতে নিয়ে ভালো-মন্দ খাবারের প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ঔষধ ও চেতনা নাশক ঔষধ খাইয়ে দেয়। তারা ঘুমিয়ে পড়লে বাবু কবিরাজ তার যৌন ক্ষুধা চরিতার্থ করার জন্য আমার কন্যাকে উলঙ্গ করে সমস্ত শরীরে তৈল লাগিয়ে এবং গোপন জায়গায় জেলি লাগিয়ে প্রথমে ধর্ষণ প্রচেষ্টায় রক্তাক্ত হলে পরে পায়ুুপথ দিয়ে ধর্ষণ করে রক্তাক্ত জখম করে।
বিকাল ৪টায় আমার কন্যার ঘুম ভেঙে গেলে ঘুম থেকে উঠে প্রচন্ড ব্যথা যন্ত্রনায় কান্নাকাটি শুরু করলে তার মোটরসাইকেলযোগে আমার বাড়িতে পৌছে দিয়ে দ্রুত চম্পট দেয়। ওই সময় বাড়িতে এসে আমার কন্যা অসুস্থ হয়ে পড়ে তার মাকে জানালে আমি সহ তার মা তাৎক্ষণিকভাবে তারালী বাজার গ্রাম্য ডাক্তার নাজমুছ শাহাদাৎ @ রাহান এর নিকটে নিয়ে যায়। সেখান থেকে ঔষধ কিনে নিয়ে এসে মেয়েকে অসুস্থ অবস্থায় বাড়িতে নিয়ে আসি। বাড়িতে এনে চাম্পাফুল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বর আবু বক্কর এর নিকট আমি সবকিছু খুলে বলি।
তখন তিনি চেয়ারম্যান সাহেব কে না জানিয়ে দফাদার তপনকে সংবাদ দিয়ে তার পরদিন বাবুকে খবর দিয়ে আমার বাড়িতে নিয়ে আসে। বাড়িতে এনে মেম্বর, চৌকিদার সহ স্থানীয় একটি গ্রুপ কবিরাজ বাবুকে উত্তম-মধ্যম দিয়ে মোটরসাইকেল আটকে ৫০ হাজার টাকা না দিলে তাকে থানায় দেওয়ার ভয় দেখায়।
পরে উপায়ন্তর না পেয়ে কবিরাজ বাবু তারপরের দিন ৫০ হাজার টাকা মেম্বর আবু বক্কার এবং দফাদার তপনের হাতে দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে ছাড়া পায়। এরপর মেম্বর এবং তপন দফাদার এসে আমাদের হাতে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে ১৫ হাজার টাকা তুলে দিয়ে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে এবং কাউকে কিছু না জানাতে বলে।
আমরা সেই ভয়ে কাউকে কিছু না বলে অসুস্থ মেয়েকে বাড়িতে রেখে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। আমরা থানায় যেতে চাইলে দফাদার তপন এবং মেম্বর আবু বক্কার এবং তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা বলে থানায় মামলা করতে গেলে তোমার মেয়ের বিয়ে হবে না এবং তোমার মেয়েকে কাটা ছেড়া করবে। কাউকে কিছু না বলে বাড়িতে চুপচাপ থাকো। কেউ আসলে কারো সাথে কথা বলবে না। এ বিষয়ে সাংবাদিকরা ভুক্তভোগী স্কুলছাত্রী এর নিকট জিজ্ঞাসা করলে সে সরল মনে সমস্ত ঘটনা অকপটে বলে যায়। (যা ভিডিও আকারে সংরক্ষিত আছে)। একইভাবে তার (মা-বাবা এবং দাদির বক্তব্য ভিডিও আকারে সংরক্ষিত আছে)। বর্তমান ওই স্কুলছাত্রী ভয়ে আতঙ্কে ভালো চিকিৎসা না নিয়ে বাড়িতে আশাঙ্খাজনক অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
বাবু কবিরাজ দীর্ঘদিন যাবৎ অসহায়, নিন্ম শ্রেণির মেয়েদের তার্গেট করে তাদেরকে প্রলোভন এবং চিকিৎসার ফাঁদে ফেলে সিরিয়াল রেফ করে আসায় সে এলাকায় সিরিয়াল র্যাপিস্ট হিসাবে পরিচিত। ঘটনার সত্যতা জানার জন্য শুক্রবার রাত ৮টার সময় চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদে গেলে দফাদার তপনকে জিজ্ঞাসা করলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলে, ছাত্রীর বাবাকে ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা হয়েছিল। পরে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি আমি থানার উপ-সহকারী পরিদর্শক তরুণ বাবুকে জানিয়েছিলাম। তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। পরে আমি মেম্বরকে জানালে মেম্বর এসে মীমাংসা করে দেন। সে একজন দফাদার হয়ে থানায় না জানিয়ে মীমাংসা করতে পারেন কিনা এ প্রশ্নে সে কোন উত্তর না দিয়ে বিষয়টি খবরের কাগজে না লেখার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করতে থাকেন। ইউ.পি সদস্য আবু বক্কারে নিকট নিকট রাত আনুমানিক ৯ টার সময় ঘুষুড়ি বাজারে তাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনিও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, দফাদার তপন আমাকে বিষয়টি জানালে আমি ঘটনাস্থলে গেলে তারা আমার মাধ্যমে রবীন্দ্র এবং তার স্ত্রীর হাতে ১৫ হাজার টাকা দিয়ে মিমাংসা হয়ে গেছে বলে আমাকে জানান। বাকি থানা ফাঁড়ি তপন দেখবেন বলে কবিরাজকে ছেড়ে দেওয়া হয়। একটি ধর্ষণের ঘটনা ইউ.পি সদস্য হয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে জরিমানা দিয়ে মিমাংশা করতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি ইউপি সদস্য আবু বক্কার।
এ ব্যাপারে রাত ৮টার সময় চাম্পাফুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন এর নিকট ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে কিছুই জানিনা আপনাদের মাধ্যমেই এই প্রথম শুনলাম যদি ঘটনার সত্যতা হয় তাহলে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)