৩ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে হেরে গেলেন কলারোয়ায় ভগ্নিপতির দেয়া আগুনে দগ্ধ শ্যালক
৩ দিন মৃত্যুর সাথে লড়াই করে অবশেষে হেরে গেলেন সাতক্ষীরার কলারোয়ায় বোন জামাইয়ের (ভগ্নিপতি) দেয়া আগুনে পুড়ে দগ্ধ হওয়া শ্যালক ভ্যানচালক আব্দুল কাদের।
বৃহষ্পতিবার (১ জুন) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
অগ্নিদগ্ধ হয়ে সেখানে চিকিৎসাধীন আছেন কাদেরের স্ত্রী ও শিশু কন্যাও। তার স্ত্রীর অবস্থাও আশংকাজনক।
আব্দুল কাদের কলারোয়া উপজেলার চন্দনপুর গ্রামের আহাদ আলীর পুত্র।
বিষয়টি নিশ্চিত করে চন্দনপুর ইউপি চেয়ারম্যান ডালিম হোসেন জানান, ‘শেষ পর্যন্ত জীবন যুদ্ধে হেরে যেয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন আব্দুল কাদের। কাদের, তার স্ত্রী ও কন্যা অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এই জঘন্য অপরাধকারীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
উল্লেখ্য, গত ২৮ মে (রবিবার) ভোর সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার চন্দনপুর গ্রামে ছোটবোনের স্বামীর দেয়া পেট্রোল-আগুনে ঘুমন্ত অবস্থায় মারাত্মক অগ্নিদগ্ধ হন আব্দুল কাদের (৩০), তার স্ত্রী শারমিন খাতুন (২৫) ও শিশু কন্যা ফাতেমা (৭)। বিরোধের জের ধরে ছোট বোনের স্বামী যশোরের শার্শা উপজেলার নারায়নপুর পোড়াবাড়ি এলাকার আব্দুল বারীর ছেলে সবুজ হোসেন গভীর রাতে আব্দুল কাদেরের টিনশেডের ঘরের দরজায় বাইরে থেকে তালা বদ্ধ করে জানালা দিয়ে ঘরের মধ্যে ঘুমিয়ে থাকা ওই ৩ব্যক্তির উপর পেট্রোল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে মারাত্মকভাবে ঝলসে যায় তিনজনই। অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদের ঢাকায় পাঠানো হয়। সেখানেই ১জুন বৃহষ্পতিবার মারা যান আব্দুল কাদের।
এ ঘটনায় ওই দিনই অভিযুক্ত সবুজের সহযোগি বন্ধু কাঁদপুর গ্রামের আব্দুল মান্নান বিহারীর পুত্র সোহাগ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কলারোয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ‘আব্দুল কাদেরের বোন সুফিয়া বাদী হয়ে মামলা করেন। এ ঘটনায় সম্পৃক্ততার অভিযোগে সোহাগকে আটক করে বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। মূল অভিযুক্ত সবুজকে আটকের চেষ্টা চলছে।’
এদিকে, কাদেরের বোন জানান, ‘তার স্বামী সবুজ তাকে নির্যাতন করে। এজন্য সে স্বামীর ঘর করতে চান না। কিন্তু সবুজ তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতো। এসব নিয়ে তাদের ঝামেলা চলছিলো।’
স্থানীয়রা জানান, ‘স্ত্রী সুফিয়া খাতুন স্বামীর বাড়িতে যেতে না চাওয়ায় এবং স্ত্রীর বড় ভাই কাদের ফোনে বোনকে আর শ্বশুর বাড়িতে পাঠাবে না বলায় গভীর রাতে ঘরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে পালিয়েছে স্বামী সবুজ হোসেন (৩২) নামের ওই যুবক। ওই ঘটনায় সবুজ হোসেনের স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের বড় ভাই কাদের, তার স্ত্রী শারমিন ও তাদের ৭ বছর বয়সী মেয়ে ফাতেমা খাতুনের শরীরের বেশিরভাগ অংশ পুড়ে যায়। অভিযুক্ত ভগ্নিপতি সবুজ হোসেন পেশায় শার্শার আফিল জুট মিলের শ্রমিক।’
প্রতিবেশী ওহাব ফারুক সেন্টুর স্ত্রী খাদিজা খাতুন বলেন, ‘সবুজ হোসান ও তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের প্রায় দেড় বছর বয়সী এক কন্যা সন্তান রয়েছে। সন্তান হওয়ার পর থেকেই প্রতিনিয়ত তাদের ভিতরে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিরোধ হতো। সবুজ হোসেন তার স্ত্রী সুফিয়া খাতুনের উপর বিভিন্নভাবে নির্যাতন চালাতো। একপর্যায়ে সবুজের সাথে সংসার করতে না চাওয়ায় সবুজ হোসেন এমন জঘন্য কাজ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’
স্থানীয় বাসিন্দা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘এমন নৃশংস অবস্থা আগে কখনো দেখিনি। ৩জন মানুষ রাতে টিন ও কাঠ দিয়ে বানানো ঘরে ঘুমিয়ে ছিলো। সেই ঘরে তালাবদ্ধ করে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয় সবুজ হোসেন। ঘরে দাউদাউ করে আগুন জ্বলছিল। বাচ্চাসহ তারা রাত সাড়ে ৩টার দিকে চিৎকার করছিলো, তখন এলাকার মানুষজন ছুটে গিয়ে তালা ভাঙতে পারছিলো না। অনেক চেষ্টার পর তাদেরকে উদ্ধার করে শারীরিক অবস্থার মারাত্মক অবনতি হওয়ায় ঢাকা হাসপাতালে বার্ন ইউনিটে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়। ৩জনের অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক ছিলো। তাদের হাত পায়ের চামড়া খুলে খুলে পড়তে দেখা যায় ঘটনাস্থলে। ১জুন খবর পেলাম সেখানে চিকিৎসারত কাদের মারা গেছেন।’
স্থানীয়রা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও অভিযুক্তদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)