৬ ডিসেম্বর কলারোয়া মুক্ত দিবস


১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর, বিশ্ব মানচিত্রে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ঠিক ১০দিন আগে এই দিনে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিতাড়িত করে মুক্ত হয় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনপদ কলারোয়া উপজেলা। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর উল্লাসে মেতে ওঠে কলারোয়ার মুক্তি পাগল দামাল ছেলেরা। এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা কলারোয়ার মাটিতে (থানার ভিতরে) উত্তোলন করে স্বাধীন দেশের পতাকা।
রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রউফ জানান, মহান মুক্তিযুদ্ধে ৮নং সেক্টরের অধীনে ছিলো কলারোয়া উপজেলা। পাক হানাদার বাহিনীর আক্রমনে কলারোয়ায় প্রথম শহীদ হন উপজেলার মাহমুদপুর গ্রামের আফছার সরদার। পরে এপ্রিল মাসে পৌর সদরের বেতনা নদীর উপর নির্মিত ব্রীজের পার্শ্ববর্তী পালপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী পাকবাহিনী তাদের এদেশিয় দোসরদের সহায়তায় সেখানে হামলা চালিয়ে লাইন দিয়ে দাড় করিয়ে নিরস্ত্র ৯ জনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
তিনি বলেন, কলারোয়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্থান সেনাদের একাধিক সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে। তবে, এর মধ্যে ১৮ সেপ্টেম্বর উপজেলার ভারত সীমাস্তবর্তী বালিয়াডাঙ্গায় পাকবাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধ অন্যতম। এই যুদ্ধে ২৯ জন পাকিস্তান সেনাকে হত্যা করা হয় এবং ১৭ জন বাংলা মায়ের স্বাধীনতাকামী বীর সন্তান শহীদ হন।
এই বীর যোদ্ধা আরো বলেন, এর আগে ২৭ আগস্ট চন্দনপুর এলাকা থেকে পাক বাহিনীকে বিতাড়িত করে চন্দনপুর মুক্ত করা হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর কাকডাঙ্গার যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনের মুখে পাকিস্থান সেনারা কাকডাঙ্গা ঘাঁটি ছাড়তে বাধ্য হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে মুক্তিযোদ্ধারা শার্শা উপজেলার বাগআচঁড়ায় দু:সাহসিক হামলা চালিয়ে ৭জন পাক হানাদারকে হত্যা করে।
মায়ের ভুমিকে রক্ষার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে কলারোয়া ও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা বীর সেনানীরা একের পর এক সফল অপারেশনের মধ্যে দিয়ে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর চুড়ান্ত ভাবে পাক বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় কলারোয়া উপজেলা।
‘মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস’ বই থেকে জানা গেছে, কলারোয়া উপজেলার ৩৪৩ জন কৃতি সন্তান মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। এদের মধ্যে ২৭ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। যুদ্ধ পরিচালনায় এ অঞ্চলে গুরুত্বপর্ণ ভুমিকা পালন করেন বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর ও প্রবাসী সংগ্রাম পরিষদের সদস্য এমসিএ মমতাজ আহম্মেদ, ভাষা সৈনিক শেখ আমানুল্লাহ, বিএম নজরুল ইসলাম, ৭১ এর রনাঙ্গনে যুদ্ধকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন, শ্যামাপদ শেঠ প্রমুখ। মুক্তিকামী বীর যোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমনে অবশেষে পাক-হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসরদের বিতাড়িত করে দেশ স্বাধীন হওয়ার আগেই ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া পাকহানাদার মুক্ত করে।
এদিকে ৬ ডিসেম্বর, কলারোয়া মুক্ত দিবস উপলক্ষ্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, কলারোয়া উপজেলা প্রশাসন, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।

কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
