জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ ২১ দফা বাস্তবায়নে সাতক্ষীরায় নাগরিক সংলাপ
ফারুক রহমান, সাতক্ষীরা: জলবায়ু পরিবর্তজনিত কারনে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত উপকূলীয় সাতক্ষীরা জেলার উন্নয়নে আগামী জাতীয় বাজেটে পর্যাপ্ত বরাদ্দসহ ২১ দফা বাস্তবায়নে সাতক্ষীরায় নাগরিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার (৩০ মার্চ) বেলা ১১টায় সাতক্ষীরা কেন্দ্রীয় পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন জেলা নাগরিক কমিটির আহবায়ক এড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল। সভায় সাতক্ষীরার নাগরিক আন্দোলনের নেতা মোঃ আশরাফুজ্জামান আশু ও লায়লা পারভীন সেঁজুতি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ায় সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
সভায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম, জেলা জাতীয় পাটির সভাপতি শেখ আজাহার হোসেন, সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. আশরাফুজ্জামান আশু, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি, সাতক্ষীরা পৌর মেয়র কাজী ফিরোজ হাসান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা চেয়ারম্যান কোহিনুর ইসলাম প্রমুখ।
সংবর্ধনার জবাবে সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য মো. আশরাফুজ্জামান আশু বলেন, আমি সংসদে যেয়ে জেলার সমস্যাগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই কাজগুলো করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশের অনুলিপি আমার হাতে এসে গেছে। আমরা বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে যেয়ে কাজের অনুমোদন করিয়ে আনছি। কিন্তু মাঠ পাযার্য়ে সেই কাজগুলো শুরু হচ্ছে না। এটি আমাদের জন্য দু:খের বিষয়। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা কোন কথা শুনতে চান না। তাদের কারণে জেলাজুড়ে জলবদ্ধা সৃষ্টি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, শহিদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কটি অপরিকল্পিত উন্নয়ন করে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এখানে চিলড্রেন পার্ক ছিলো, ফোয়ারা ছিলো, দরবার হল ছিলো, মাঠ ছিলো আমারা অনেক খেলাধুলা করেছি। দুটি লাইব্রেরি থাকা সত্ত্বেও পৌর অডিটোরিয়াম দখল করে সেখানে পাঠাগার করা হয়েছে। সেখানে সেই ধরনের কোন বইপত্র নেই। ব্যক্তিগতভাবে দখল করে রাখা হয়েছে। এটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেওয়ার জন্য বলেন। জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে অসাংস্কৃতিক ব্যক্তিরা কিভাবে বসে এটি বুঝতে পারি না। সে মার্কেটের নামে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
আশু বলেন, আইনজীবী সমিতিতে নির্বাচন হয় না এটি খুবই দু:খজনক। একজনের কাছে জিম্মি হয়ে থাকবে এটি হতে পারে না। বিগত ১০ বছর জেলার শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে। স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসায় নিয়োগ বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। যারা এসবের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বসন্তপুর নৌবন্দর উদ্বোধন করে দিয়েছেন।
সভায় জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, নাগরিক কমিটি যে ২১ দফা পেশ করেছে। এগুলো জেলার মানুষের জন্য প্রয়োজন। নাগরিক কমিটির ২১ দফার সাথে আমি একমত। তবে সংসদে উত্থাপিত হলেও সেটা বাস্তবায়ন হবে এটি বলা যাবে না। সকলের দাবী সাতক্ষীরা-যশোর রেল সংযোগ। ২০১০ সালে শ্যামনগরে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রেল লাইনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেটা প্রাথমিক যাচাই-বাছাই হয়েছে। সেটা এগিয়ে বলা যাবে না। সেজন্য সংসদ সদস্যদের বলবো যে বিষয়গুলো অনুমোদন হয়েছে অথচ লাল ফিতায় আটকে আছে, সেগুলো হেমারিং করে ছাড়িয়ে আনতে হবে। বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন পেয়েছে, সেটা আমাদের জন্য আর্শিবাদ। প্রয়োজনে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজের মতো বাড়ি ভাড়া করে নিয়ে হলেও যাত্রা শুরু হোক। অর্থনৈতিকজোন জেলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হবে। সেটার কাজ অনেক এগিয়ে গেছে কিন্তু সেটার গতি কচ্ছপের গতিতে এগুচ্ছে। ক্রীড়া কমপ্লেক্সের কাজ দ্রুত শেষ করতে সবাইকে একসাথে কাজ করতে হবে।
জলাবদ্ধতা, বেড়িবাধ, সুপেয় পানিসহ অনেক সমস্যা রয়েছে। সেগুলো চাইলে তাৎক্ষণিক আমরা পাবো না। সেজন্য আমাদের খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সামনে নিয়ে কাজ করতে হবে। একেজন সংসদ সদস্যকে একটি বিষয় ভাগ করে নিতে হবে। আর চারজন এমপি তার সহযোগিতা করবে। এভাবে কাজ করলে আমাদের সাতক্ষীরার সমস্যার সমাধান হবে এবং উন্নয়ন কাজগুলো দ্রুত এগিয়ে যাবে। এছাড়া জেলা শিল্পকলা, প্রেসক্লাব, ট্রাক মালিক এ্যাসোসিয়েশন ও আইনজীবী সমিতিসহ অনেক প্রতিষ্ঠানে অনেক সমস্যা আছে। এগুলো সমাধান করতে ঢাকায যাওয়া লাগবে না। আমরা সবাই এক হলে এগুলো সমাধান করা সম্ভব।
বক্তব্য রাখেন প্রফেসর আব্দুল হামিদ, কিশোরী মোহন সরকার, সুধাংশু শেখর সরকার, শেখ হারুণ অর রশিদ, এড. ওসমান গনি, শেখ মুসফিকুর রহমান মিল্টন, কমরেড আবুল হোসেন, এড. আজাহারুল ইসলাম, হেনরী সরদার, অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী, এড. আসাদুজ্জামান দিলু, এম কামরুজ্জামান, এড. মুনির উদ্দীন, নিত্যানন্দ সরকার, শেখ সিদ্দিকুর রহমান, জিএম মনিরুজ্জামান, রোজ বাবু, অধ্যাপক ইদ্রিশ আলী, আদিত্য মল্লিক, রবিউল ইসলাম রবি, আব্দুস সামাদ, বিশ্বনাথ ঘোষ, সাংবাদিক আব্দুস সামাদ, জোৎন্সা দত্ত, সফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
সভায় জেলা নাগরিক কমিটির ২১ দফা দাবি উপস্থাপন করেন মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্ত। সভা পরিচালনা করেন জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবলু।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)