আবু সাঈদ হত্যা : অভিযোগ আমলে নিয়ে পলাতক ২৬ জনকে গ্রেফতারের নির্দেশ


বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে এ মামলায় ২৬ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এছাড়া গ্রেফতার চার আসামিকে আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।
আসামিদের গ্রেফতারের জন্য পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের গ্রেফতার করে পরবর্তী তারিখে আদালতে উপস্থিত করতে বলা হয়েছে। মামলায় গ্রেফতার চার আসামিকে পরবর্তী শুনানির দিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে হবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১০ জুলাই ঠিক করা হয়েছে।
সোমবার (৩০ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
আদালতে আজ রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকউটর মোহাম্মদ তাাজুল ইসলাম, তাকে সহযোগিতা করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম। উপস্থিত ছিলেন- প্রসিকিউটর মো. মিজানুল ইসলাম ও মো. আব্দুস সাত্তার পালোয়ান।
প্রসিকিউশন শুনানিতে ট্রাইব্যুনালকে জানিয়েছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনায় সাবেক এসআই আমির হোসেন ও কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শরিফুল ইসলাম এবং ছাত্রলীগ কর্মী ইমরান চৌধুরী আকাশসহ আরও অনেকে এই হত্যাকাণ্ডে সহায়তা ও উসকানি দিয়েছেন বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
আদেশের পর চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদ হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
তিনি বলেন, মামলার ৩০ আসামির মধ্যে পলাতক ২৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ।
তাজুল ইসলাম বলেন, মামলায় ৩০ আসামির মধ্যে চারজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। তারা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ।
এর আগে সকালে এ মামলায় ১০৯ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) দাখিল করা হয়। এরপর শুনানিতে ১৯৭১ সালের সাধারণ নির্বাচন থেকে ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া ঘটনা তুলে ধরেন। আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় গত ২৪ জুন তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এতে ৩০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন যখন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন ১৬ জুলাই দুপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিবিদ্ধ হন আবু সাঈদ। ২৫ বছর বয়সী আবু সাঈদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদেই সোচ্চার হন বহু মানুষ, যাতে আরও গতিশীল হয় কোটা সংস্কার আন্দোলন। ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)
