শুক্রবার, এপ্রিল ২৬, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

ঈদুল ফিতরের মানবিক মূল্যবোধ

ঈদুল ফিতরের মানবিক মূল্যবোধ
প্রফেসর মো. আবু নসর


ঈদ মহাআনন্দ আর মহামিলনের দিন। নানান বয়সী মুসলিমদের কাছে অত্যন্ত কাঙ্খিত বছরের এ দিনটি।

নফসের সঙ্গে একমাস যুদ্ধ করে রোজাদাররা যে সাফল্য, গৌরব ও পুণ্য অর্জন করে সেজন্য মহান আল্লাহর দরবারে তার শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্বের প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করার আনন্দ উৎসবই হচ্ছে ঈদুল ফিতর। রাসুল্লাহ (সা.) সানন্দে ঘোষনা করেন- “প্রতিটি জাতিরই আনন্দ-উৎসব রয়েছে, আমাদের আনন্দ উৎসব হচ্ছে ঈদ” (বুখারি ও মুসলিম)। বৃহত্তর মুসলিম উম্মাহর নিকট ঈদুল ফিতর এক আনন্দঘন অনুষ্ঠান। ঈদ পৃথিবীতে জান্নাতি সুখের নমুনা। ঈদের দিনে ঈদের ময়দানে উপস্থিত হয়ে নামাজ আদায় করা একটা বড় ইবাদত।

ঈদ আরবী শব্দ। অপর নাম আউদ। আউদ অর্থাৎ যে আনন্দ অনুষ্ঠান ঘুরে ঘুরে উপস্থিত হয়। ফিতরও আরবী শব্দ। এর অর্থ হলো ভঙ্গ। অন্য অর্থ ভঙ্গের দান। আবার ফেতর এর অর্থ স্বভাব বা প্রকৃতি। ঈদুল ফিতর অর্থাৎ রোজা ভাঙ্গার আনন্দ বা সিয়াম ভাঙ্গার আনন্দ। অন্য অর্থে দানের উৎসব। ঈদুল ফিতরের আরেক অর্থ স্বাভাবিকতায় ফিরে আসার আনন্দ উৎসব। মহা-পবিত্র ও মহা বরকতময় রমজান মাসে দৃঢ় প্রত্যয়ের সঙ্গে যাবতীয় পানাহার ও কামাচার থেকে কঠোর সতর্কতা সহকারে বিরত থেকে শওয়ালের পহেলা তারিখে এসে রোজাদাররা আবার প্রচলিত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে। আনন্দে হিল্লোল নিয়ে আসে পবিত্র ঈদুল ফিতর।

ঈদ উৎসবের সুতিকাগার আরব উপদ্বীপে ছিল বলে জানা যায়। ঈদের প্রচলন হয় হিজরী দ্বিতীয় সনে। প্রাচীন আরবে অনুষ্ঠিত হতো ‘‘ওকাজের মেলা’’। অনেকে ওকাজের মেলাকে মেহেরজান মেলা হিসাবে আখ্যায়িত করতো। ‘‘ওকাজের মেলা’’ ছিল ইসলাম পূর্ব আরব বাসীদের প্রাণের উৎসব। এ উৎসবের জন্য প্রস্তুতি চলতো বছর জুড়ে। আবার সংস্কৃতির প্রতিকৃতি হিসেবে বিবেচিত হতো ‘‘ওকাজের মেলা’’, যা ছিল লক্ষ্যহীন আনন্দে পরিপূর্ণ। এ মেলায় অনেক কিছুই ছিল ইসলামী চিন্তা চেতনার সাথে বৈপরীত্য। এ অবস্থায় লক্ষ্যহীন আনন্দ মেলা কে বাদ দিয়ে ওকাজেরের বিপরীতে রমজানে আত্মশুদ্ধির পবিত্র স্পর্শমন্ডিত ও বহুবিধ কল্যানধর্মী আনন্দঘন ঈদুল ফিতল প্রচলিত হয়।

রমজান মাস শেষে শওয়াল চাঁদের পহেলা তারিখে আসে ঈদ উৎসব যা অফুরন্ত পুণ্য দ্বারা পরিপূর্ন। রোজার মাসে মুসলমানরা আতœনিয়ন্ত্রন, পরিশীলন ও পরিশুদ্ধি করার জন্য যে সিয়াম সাধনা করেন তার পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে ঈদুল ফিতরের আগমন ঘটে। ঈদুল ফিতর সবার কাছে চির নতুন সমুজ্জল একদিন। ঈদুল ফিতর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান। এর পিছনে রয়েছে ধর্মপ্রাণ মানুষের ত্যাগ তিতিক্ষা এবং নিবেদিত প্রাণের আকুতি। রোজাদার মুসলমানরা যখন ঈদের দিনে নামাজ পড়ার জন্য ঈদগাহে বা মসজিদে আসতে শুরু করে তখন আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের ডেকে ডেকে বলেন, দেখো ফেরেশতারা মানুষ সৃষ্টি করার সময় তোমরা বলেছিলে যে তারা পৃথিবীতে ফেতনা, ফেসাদ ও খুন খারাবিতে লিপ্ত থাকবে। আর এখন দেখো কিভাবে আনুগত্যের নিদর্শন স্বরুপ তারা আমরা দিকে অগ্রসর হচ্ছে। হে ফেরেশতারা তোমরা তাদের অভ্যর্থনা জানাও এবং বলে দাও আমি আল্লাহ তাদের গোনাহ সমুহ মাফ করে দিয়েছি। আল্লাহর তরফ থেকে রোজাদার মুসল্লিদের মধ্যে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের সার্টিফিকেট বিতরণের দিনই হলো ঈদুল ফিতর। আর তাই রমজান শেষে ঈদুল ফিতরই হলো রোজাদারদের পুরস্কারের দিন। আল্লাহ বলেন, রোজাদারদের আমি নিজেই পুরস্কার প্রদান করব। ইসলাম বাস্তবিকই মুসলমানদের জন্য বড় উত্তম বিধান দিয়েছে। ঈদের আনন্দ শুধু কারো একার নয় বরং পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, গরীব সবার মধ্যেই এ আনন্দের সেতুবন্ধন হলো ঈদুর ফিতর। গরীবদের ঈদের ব্যবস্থা না করে ধনীদের ঈদগাহে যাওয়ার অনুমতি ইসলাম দেয়নি। ঈদের দিন খুশীর দিনকে সবাই ভাগাভাগি করে নিতেই পবিত্র ঈদুল ফিতর আমাদের মাঝে বয়ে এনেছে সেই সুন্দরতম ব্যবস্থা। ঈদুল ফিতরের সকাল আসে মানুষে মানুষে সমতার এক আনন্দ উজ্জীবিত চেতনায় অনুপ্রেরণার পসরা নিয়ে। বঞ্চিত, অভাবী, দরিদ্র ও দারিদ্র পীড়িতদের মধ্যে স্বচ্ছল ও বিত্তশালীদেরও নির্দিষ্ট হারে ঈদের প্রত্যুষে ফিতরা বিলানো কর্তব্য। ফিতরা দেওয়া ওয়াজিব। ফিতরা মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধকে জাগ্রত ও সুসংহত করে এবং সিয়ামের বুনিয়াদকে মজবুত করে। ফলে মানুষের মধ্যে দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধের এক অনাবিল আনন্দ প্রজ্জলিত হয়।

ঈদুল ফিতর বিশ^ মুসলিমের সাম্য ও সমতার উদ্দীপনাকে উজ্জীবিত করে। পৃথিবীর সব মুসলমান একই আনন্দে বৈভবে এবং একই অনুভুতিতে সর্বজনীন ও প্রানবন্ত হয়ে ওঠে ঈদুল ফিতরে। ঈদুল ফিতর মানুষের হৃদয় ও মনকে পরিচ্ছন্ন আলোকে বিকশিত করে তোলে। সকল বিবাদ, বিভেদ, অশান্তি, বৈষম্য, জুলুম, অনাচার, অশ্লীলতা দুর করে এক পরিশীলিত জীবন চেতনা সঞ্চয়িত হয় ঈদুল ফিতরে। এ ঈদ প্রাচুর্যের ও বরকতের। ঈদুল ফিতর মানুষের শেষ্ঠত্ব সমুন্নত রাখতে প্রতি বছর নির্দিষ্ট তারিখে চন্দ্র সনের আবর্তনে ফিরে আসে। অবশ্য মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব নির্ধারিত হয় তাকওয়ার মাপকাঠিতে। তাকওয়া অর্থাৎ আল্লাহ ভীতি। তাকওয়ার জীবন হচ্ছে আত্মসংঘমী ও সাবধানী জীবন, পাপবর্জিত শুদ্ধ জীবন। সুদীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধানার পর ঈদ প্রতিটি মুসলমানদের ঘরে নিয়ে আসে আনন্দের সওগাত। ঈদে এমন এক নির্মল ও অনাবিল আনন্দের আয়োজন, সেখানে মানুষ আতœশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয় এবং আনন্দ সমভাগাভাগি করে। মাহে রমজানের রোজার মাধ্যমে নিজেদের অতীত জীবনের সব পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত হওয়ার অনুভূতি ধারণ করেই পরিপূর্ণনতা লাভ করে ঈদের খুশি। ঈদুল ফিতর বা রোজা ভাঙ্গার আনন্দ উৎসব এমনই এক পরিচ্ছন্ন অনুভূতি জাগ্রত করে যা মানবিক মূল্যবোধকে সমুন্নত করে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের পথ পরিক্রমায় চলতে ধর্মপ্রান মুসলমানদের উৎসাহিত করে।

বৈষম্যের সকল স্তর ভেঁঙ্গে চুরমার করে দেয় ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতর প্রতি বছর আর্বিভূত হয় মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করার জন্যই। সব মানুষের এক কাতারে দাঁড় করিয়ে এক সুদৃঢ় মানববন্ধন তৈরী করে দেয় ঈদুল ফিতর। স্বভাবের চাহিদা সমুহকে উপেক্ষা করে কঠোর আত্মসংঘম ও আত্মশুদ্ধির কার্যকর ও বাস্তবরূপ ধারণ করে এই ঈদুল ফিতর। ঈদের দিনে বিশ্বজগতের রব, সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা মহাপ্রভু আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও বিরাটত্বের ঘোষনা বার বার উচ্চারিত হয় আল্লাহু আকবর তাকবীরের মাধ্যমে। জীবনের সর্বক্ষেত্রে একটা মহাসত্য বারবার উদ্ভাসিত হয়ে থাকে, সেটা হলো আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান সর্বাতœকভাবে জীবনের প্রতিমূহুর্তে গ্রহণ করতে পারলে পৃথিবীটা প্রকৃত সুখের ও শান্তির হয়ে উঠতো। ঈদল ফিতর সেই তাগাদা নিয়েই আসে। সর্বজনীন ঈদ উৎসব হয়ে উঠুক বিশ^জনীন উৎসব।

লেখকঃ
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ, কলারোয় সরকারি কলেজ,
সাতক্ষীরা

একই রকম সংবাদ সমূহ

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবু নসরবিস্তারিত পড়ুন

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবুবিস্তারিত পড়ুন

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত প্রফেসর মো. আবু নসর ৫২’রবিস্তারিত পড়ুন

  • পবিত্র মিরাজের শিক্ষা স্রষ্টার ইবাদত ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
  • সাতক্ষীরার প্রথম মহকুমা প্রশাসক নওয়াব আব্দুল লতিফ
  • বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাক্ষী আশুরা
  • জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতি: চীনকে ছাড়িয়ে ভারত
  • ঈদুল আযহা : ঐতিহাসিক ত্যাগের মহান স্মরণিকা
  • শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ের দিন ‘মে দিবস’
  • বরকতময় পবিত্র শবে বরাত
  • ৭ মার্চ বাঙালি জাতির মূল চালিকা শক্তি
  • চেতনায় ’৭১: মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়া
  • ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া হানাদারমুক্ত দিবস প্রফেসর মো. আবু নসর
  • সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী (সাঃ)
  • আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি-ই হলো কোরবানি