এক চেয়ারম্যানের আক্রোশে নাজেহাল কালিগঞ্জের মনিকা পরিবার
কালিগঞ্জের দক্ষিণ শ্রীপুরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কতৃক শুরু হয়েছে এক অসহায় শ্রমজীবী পরিবারকে একঘোরে করার মধ্যযুগীয় প্রক্রিয়া। আদালতে মামলা চলমান থাকলেও আদালতের ধার ধারেন না তিনি, তার আইনই দক্ষিণ শ্রীপুরের আইন। তাকে (চেয়ারম্যানকে) না জানিয়ে আদালতের শরাণাপন্ন হওয়াকে ভাল চোখে দেখেন না তিনি। তিনি দাম্ভিক ঘোষণা দিয়ে বলে থাকেন আমি গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল অরফে বল গোবিন্দ আমার কথাই দক্ষিণ শ্রীপুরের কথা।
স্থানীয় সোনাতলা গ্রামের ঊমাকান্ত কর্মকার বলেন, ‘আমার মেয়ে মনিকা’র বিয়ে হয় আমাদের গোবিন্দ চেয়ারম্যানের শশুর বাড়ির নিকটবর্তি তালা উপজেলার সুজনশাহা গ্রামের সুবোধ মল্লিকের ছেলে শিমুল মল্লিকের সাথে। সেখানে শশুর ও শশুরবাড়ির অমানবিক নিপীড়ন করে বের করে দেয়। বিয়ের সময় নগদ টাকা, ভারতীয় হিরো কোম্পানীর ইগনেটার বাইক, স্বর্ণ, নগদ টাকা নেয়ারপরও দাবি করে তিন লাখ টাকার যৌতুক। পাশাপাশি বাড়ায় আপত্তিকর নির্যাতন। যা আদালতের নির্দেশিত কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের তদন্তেও প্রমানিত হয়। এরই মধ্যে আদালতের মামলাকালীন বিষয়টি না জানার ভান করে শশুরবাড়ির এলাকার লোক সুবোধ-শিমুল মল্লিকের পক্ষ নিয়ে তার ইউনিয়নের নাগরিককে হুমকি দিতে থাকে। নোটিশ দিতে থাকে। হুমকি দিতে থাকে ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম্য আদালতে নিয়ে পেটাবে। ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে আমাদের অনেকটা একঘোরেও করে ফেলার চেষ্টা করে। এ অবস্থায় আমরা আদালত ও প্রশাসনের কাছে একটু সাহায্য পেতে চাই। কারণ গোবিন্দ চেয়ারম্যান অত্যন্ত হঠকারী। তিনি যে কোন সময় যে কোন ধরনের দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। মেয়েকে নিয়ে আমাদের অনেকটা পালিয়ে বাঁচতে হচ্ছে।’
সাতক্ষীরা জজ আদালতের অতিরিক্ত পিপি ও বিশিষ্ট আইনজীবী ফাহিমুল কিসলু বলেন, নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করা গোবিন্দ চেয়ারম্যান। যাকে তাকে যে কোন সময় মান অপমান করা তার কাছে ডাল ভাত। নিজের ইউনিয়নের নাগরিককেও তিনি ছাড়েন না। সম্প্রতি তার এলাকার মানুষ মনিকা কর্মকারকে চুড়ান্ত বিপদাপন্ন করতে ছাড়েননি। সাতক্ষীরার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের মতো উচ্চ আদালতে মামলা চলকালীন অবস্থায় তার পরিষদে ডেকে পাঠিয়েছেন একাধিকবার। আস্ফালন দেখিয়েছেন তিনি বলেছেন তার ইউনিয়নে তিনি ম্যাজিস্ট্রেট। উকিল ও কোর্টের কত ক্ষমতা আর আমার কলমের কত ক্ষমতা আমি সেটা দেখাবো। তিনি (চেয়ারম্যান) আড়াইবছর এখনও ক্ষমতায় আছেন। চেয়ারম্যান কতৃক তার মনমতো সমাধান না করে বিষয়টি আদালতে যাওয়ায় ‘মনিকার পরিবারকে এলাকায় বসবাস করতে দেবেন না’ এমন আস্ফালন অবশ্যই আদালত ও দেশের আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনের শামিল।
এদিকে কর্মকার পাড়ার অন্যপরিবারের সদস্যদের রাত ৯টায় চেয়ারম্যান গোবিন্দ বাড়িতে ডেকে নিজেকে হনু প্রমানের পাশাপাশি অসহায় উমাকান্তের পরিবারের পাশে না দাঁড়ানোর জন্য ভীতি প্রদর্শন করে।
তার সন্তানের বয়সী এই মনিকার শশুরবাড়ির পক্ষ নিয়ে উমাকান্তের পরিবারকে হয়রাণি ও একঘোরে করার প্রচেষ্টায় বিক্ষুব্ধ এলাকার বিবেকবার মানুষরা। তারা দ্রুত প্রশাসন ও আদালতের হস্তক্ষেপ চান।
এদিকে মনিকা কর্মকার বলেন, একদিকে শশুর বাড়ির নিপীড়ন আরেকদিকে শশুরবাড়ির পক্ষ নিয়ে গোবিন্দ চেয়ারম্যানের নিপীড়ন আমাদের জীবনকে দুর্বিসহ করে তোলা হয়েছে। চেয়ারম্যানের অব্যাহত হুমকিতে আমার বৃদ্ধ কর্মজীবী বাবা মা ভাই আজ পলায়নপর জীবন পার করছে। আমাদের সাংবিধানিক অধিকার সেই নাগরিক সুবিধাদি বন্ধের চেষ্টা চালাচ্ছে গোবিন্দ চেয়ারম্যান। আমাদের সাথে যে অন্যায় হচ্ছে তার কি কোন বিচার নেই ?
একই গ্রামের আব্দুল আজিজ বলেন, গোবিন্দ চেয়ারম্যানের হঠকারিতার কারণে তিনি এর আগে দুই দুই বার নির্বাচন করেও পরাজিত হয়েছেন। এবার জিতেই সাধারণ মানুষের রাজা হওয়ার হীনচেষ্টায় লিপ্ত। অন্যায়ভাবে এলাকার অসহায় মানুষকে হয়রানী করার মধ্যে বীরত্ব নেই সেই বোধ তিনি হারাতে বসেছেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির বলেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। বিষয়টির সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছেন।
দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল বলেন, তারা (উমাকান্তের পরিবার) আদালত ও প্রশাসনের শরনাপন্ন হচ্ছে। এলাকায় তাদের থাকা লাগবে, কী করে থাকবে তা তিনি দেখবেন। তিনি অতিরিক্ত পিপি’র সাথে অশোভন আচরণের কথা স্বীকার করে বলেন আমিও বলেছি এই ইউনিয়নের ম্যাজিস্ট্রেট আমার কলমের জোর আমিও দেখাবো।
এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরার মানবাধিকার সংগঠক মাধব দত্ত বলেন, আদালতে চলমান মামলা এ অবস্থায় চেয়ারম্যান গোবিন্দ তার ক্ষমতা দেখানোর যে চেষ্টা তা আমাদের বিস্মিত করেছে। এটি তিনি কিভাবে করছেন তা আমাদের বোধগম্য না।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)