এক প্রেমিক শতাধিক নারীর!
মেহেদী হাসান। পেশা তার প্রেম প্রতারণাই। মূলত টার্গেট প্রেমের ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নেওয়া মোটা অঙ্কের টাকা। এতে সে অনেকটা সফলও।
প্রেমের ফাঁদে ফেলেছেন এ পর্যন্ত শতাধিক নারীকে। সে নিজেকে কখনো এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, কখনো পুলিশের এএসপি, কখনো বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা পরিচয়ে ফেসবুকে নিজেকে উপস্থাপন করে। এরপর ধনাঢ্য পরিবারের মেডিকেল, বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া নারীদের টার্গেট করে। ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদ পেতে নারীদের সঙ্গে গড়ে তুলত সম্পর্ক।
প্রেমের সম্পর্কের একপর্যায়ে নারীদের আবেগতাড়িত এবং প্রলোভন দেখাত বিয়ের। যারা তার ডাকে সাড়া দিত সেসব নারীর কাছে থেকে কৌশলে তাদের নগ্ন ভিডিও ও ছবি সংগ্রহ করত। পরে তা অনলাইনে ছাড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করত। কিন্তু এই প্রতারকের হয়নি শেষরক্ষা।
এক বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছাত্রীর বাবার মামলায় ঢাকার সাভার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর বাবা পল্টন থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। তিনি উল্লেখ করেন, তার শ্যালকের ফেসবুক মেসেঞ্জারে ৭ জানুয়ারি একটি ভিডিও আসে। ভিডিওটি ওপেন করে ভাগনির অশ্লীল ভিডিও দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে তার ভাগনি সুমির (ছদ্মনাম) সঙ্গে আলোচনা করেন।
জানতে পারেন মেহেদী হাসান নামে একটি ছেলের সঙ্গে ২০২০ সালের প্রথম দিকে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সম্পর্ক থাকার সময় মেহেদী নিজেকে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিয়েছিল। মেহেদীর সঙ্গে সুমির সম্পর্ক থাকার সময় মেহেদী সুমিকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে নগ্ন ভিডিও ও ছবি পাঠাতে বাধ্য করে। পরে সুমি জানতে পারেন মেহেদী কোনো চাকরি করে না। সে একজন প্রতারক। বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে নিজেকে সরকারি কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক করে অশ্লীল ছবি ধারণ করে। ব্ল্যাকমেইল করাই তার পেশা। এসব বিষয় জানার পর সুমি মেহেদীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন সময় মেহেদী সুমির অশ্লীল ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখায়।
এতে সুমি ভয় পেয়ে বিভিন্ন সময়ে মেহেদীকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা দেয়। লোকলজ্জার ভয়ে সুমি বিষয়টি প্রকাশ করেনি কারও কাছে। একপর্যায়ে সুমি আর কোনো টাকা দেবে না বলে জানিয়ে দেয়। এতে মেহেদী ক্ষিপ্ত হয়ে সুমির আত্মীয়দের মোবাইল নম্বর ও ফেসবুক আইডি সংগ্রহ করে সুমির অশ্লীল ছবি ও ভিডিও ম্যাসেঞ্জারে ও হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দেয়।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, গ্রেফতার মেহেদী ভুয়া এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে মেডিকেল, বুয়েট ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়েদের সঙ্গে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক করে নগ্ন ছবি ও ভিডিও হাতিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ধনাঢ্য পরিবারের শতাধিক শিক্ষার্থীর নগ্ন ভিডিও ও ছবি এবং চ্যাটিং হিস্ট্রি তার মোবাইল ফোনে পাওয়া গেছে। ৭ বছর ধরে মেহেদী শতাধিক নারীর সঙ্গে এ ধরনের অপকর্ম চালিয়ে আসছিল।
কখনই নিজের ব্যক্তিগত ছবি বা ভিডিও কারও সঙ্গে শেয়ার না করা; সোশ্যাল মিডিয়ায় পরিচয় হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে যাচাই-বাছাই না করে সম্পর্কে না জড়ানো এবং কোনো ধরনের ব্ল্যাকমেইলের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে ডিবি সাইবার ক্রাইম বিভাগে জানানোর অনুরোধ করেন সাইবার কর্মকর্তা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)