এম.এ মাসুদ রানা -এর ছোট গল্প “ব্রেকআপ”
অনেকদিন হলো আর লেখার সময় পায়না। প্রবাস জীবনে কাজের চাপে অবসর পাওয়া কষ্টকর। যদিও বা অল্প কিছু সময় হাতে পায়, কিন্তু তখন হয় গল্পের প্লট মাথায় আসে না, নয়তোবা জাগতিক ভাবনায় সবকিছু উলটপালট হয়ে যায়। ইদানিং ফেক আইডি তে ঢুকলে একটি ইংরেজি শব্দ প্রায়ই পরিলক্ষিত হয় শব্দটি হচ্ছে ‘ব্রেকআপ ‘ যার বাংলা অর্থ দাঁড়ায় স্থগিত হওয়া বা ছাড়াছাড়ি হওয়া। আর শব্দটি বহু হলো ব্যবহৃত হচ্ছে বর্তমান টিন এজার তরুণ তরুণীদের প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে। অবশ্য কিছুকাল আগেও প্রেম ভালোবাসায় কেউ ব্যর্থ হলে বা প্রেমিক প্রেমিকার সম্পর্ক কোন কারনে ছিন্ন হলে, বলতো ওর সাথে আর আমার কোন সম্পর্ক নেই বা ছিন্ন হয়ে গেছে। অথবা বন্ধন মুক্ত করে দিয়েছি, এমনই ভাষা ব্যবহৃত হতো।
অথচ আজ কয়েক বছরের ব্যবধানে ফেক আইডি বা ইন্টারনেটের বহুলো ব্যবহার আমাদের অনেক মাতৃ ভাষাকে দিন দিন মাটির নিচে চাপা দিয়ে দিচ্ছে,কিন্তু আমরা বুঝতেও পারছি না, খালি ভাষার মাস এলেই গলা ফাটিয়ে চিৎকার পাড়ি।তো পাঠক ব্রেকআপের ছোট্ট একটি ঘটনা নিয়েই আজকে আমার গল্প, ছেলেটির নাম রায়হান কবির,ঢাবির সাংবাদিকতা ও প্রশাসন বিষয়ে অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, গ্রামের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, হোস্টেলে থেকে লেখাপড়া করে, গ্রাম থেকে বাবা কষ্ট করে যা টাকা পাঠায়, তাতে সব রকম খরচের সংকুলান হয় না। অর্থাৎ gf এর পিছনে প্রতি মাসে যে টাকা ব্যয় হয়, সেটা বাবা বা পরিবারের পাঠানো টাকা দিয়ে খরচ করতে কবিরের বিবেক বাধা হয়ে দাঁড়ায়,তাই বাধ্য হয়ে দুইটা টিউশনি করতে হয়। কবির প্রথম টিউশনি শুরু করে বাবার খরচের চাপ কমানোর জন্য, কিন্তু ওইখানেই বাঁধে বিপত্তি, ছাত্রের বড় বোনের সাথে পরিচয়, অতঃপর —, এই রইল আপনার চা আর নাস্তা, ছাত্রকে পড়ানোর ফাঁকে খেয়ে নেবেন কিন্তু –, আবার লজ্জা করবেন না?
বলতে বলতে চলে যাচ্ছিল টিনা, কিন্তু আপনি —-?আপনার ছাত্রের কাছে জেনে নিবেন!ছাত্র, আমার একমাত্র আপু, ডাক নাম টিনা।ও আচ্ছা, এরপর আস্তে ধীরে তাদের মাঝে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, তারপর প্রেম, অবশ্য প্রেমের প্রস্তাবটা টিনাই প্রথম দেয়, কারণ টিনা জানতো কবির নিজে থেকে কখনোই বলবে না। আর কবির মনে মনে টিনাকে ভাল বাসলেও বাস্তবতার আলোকে সঙ্গত কারণেই বলার সাহস বা ইচ্ছা কোনটাই ছিল না। কারণ টিনা বড়লোক বাবার আদরের সুন্দরী কন্যা, গাড়িতে করে ঢাবিতে যেত, কবির যখন থার্ড ইয়ারের ছাত্র, তখন টিনা সবেমাত্র ফার্স্ট ইয়ারের ছাত্রী,হোস্টেল থেকে একাডেমিক ভবন অনেকটা দূরে হলেও কখনো রিকসায় যেত না কবির।এমনকি টিউশনিতে ও যেত অনেক সময় হেঁটে, টিনা মাঝেমাঝে লিফট দিতে চাইলেও কবিরের আপত্তির কারণে—,এ নিয়ে কখনো কখনো কথা কাটাকাটিও হয়েছে। কবির তার জমানো টাকা দিয়ে মাঝে মাঝে টিনাকে গিফট কিনে দিত।টিনা কখনো জানতেও চাইনি জে, এসব কিনার টাকা তুমি কোথায় পাও? বরং রেস্টুরেন্টে বসলে কবির ই বিল বহন করতো। অথচ নিজের শখ করে কখনো পাঁচ টাকার বাদামও সে কিনে খেত না। সেদিন পড়ন্ত বিকালে একটি ফাইল হাতে ঘম’ক্ত অবস্থায় ক্লান্ত শরীরে নীলক্ষেতের ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে, মেসের দিকে ফিরছিল কবির।হঠাৎ পিছন দিক হতে একটি গাড়ির কয়েকবার হণে’র শব্দে পিছিয়ে ফিরে তাকাতেই দেখল অন্য কেউ নয়, টিনা।
এই ছেলে কোন কথা নয় উঠে এসো বলছি। অন্যদিন হলে হয়তো বা আপত্তি করতো কবির,কিন্তু আজ করলো না। ক্লান্ত ও চিন্তিত শরীর হাটতে চাইছিল না। অথচ মাস শেষ, টিউশনি টাকা এখনো পকেটে আসেনি—, আর বাবা তো বলেই দিছে, তোমাকে আর টাকা দিতে পারব না, পড়ালেখা শেষ এবার চাকরির চেষ্টা করো,পারলে নিজের ছোট ভাই বোনের পড়ালেখার ভার ও তোমার উপর রইল, তা না হলে —?বাকি কথাটা আর বুঝতে বাকি রইল না কবিরের, কোন কথা না বলে চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলো। কিছুক্ষণ আর কথা বলল না, একটা রেস্টুরেন্টের সামনে এসে গাড়ি পার্ক করলো। কি ব্যাপার টিনা? এই অপার বেলায় এখানে গাড়ি পার্ক করছো, তার চেয়ে চলো কোন পার্কে —,কথা শেষ করতে দিল না টিনা, বললাম তো;কোন কথা নয়, চুপচাপ এস। রেস্টুরেন্টের এক কোণে ফাঁকা টেবিল দেখে বসলো দুজন। কি খাবে বলো, আমার খিদে নেই টিনা,শুধু এক কাপ রং চা হলেই চলবে। আর তুমি যা খাবে তাই অর্ডার দাও।
আসলে তখন পকেটে যা আছে তা দিয়ে, দুজনের খাবারের বিল দেওয়ার মত নয়,আজ তোমায় বিল দেওয়া লাগবে না;বিল আমি দেব। এই বলে টিনা বয়কে ডেকে, কবিরের পছন্দের খাবার অর্ডার দিল। আচ্ছা কবির এবার বলতো, আজ কয়েক দিন তোমার কোন খোঁজ খবর নেই, কল রিসিভ করো না, মেসেজের উত্তর দাও না, নেট বন্ধ, ছোট্টুকে পড়াতেও যাচ্ছো না, তোমার হোস্টেলে খোঁজ নিয়ে জানলাম, হোস্টেল ছেড়ে দিছো। কি ব্যাপার? এতগুলো প্রশ্ন একসাথে করলে কোনটার উত্তর আগে দেব। একে একে সবগুলোর উত্তর দাও।১ঃ-মাস্টার্স এর রেজাল্ট শেষ, তাই কর্তৃপক্ষের হাল ছাড়ার নির্দেশ, ২ঃতাই —, তাই হল ছেড়ে একটা সস্তা মেসে উঠেছ তাই না? কবিরের কোন কথা নেই, কি হলো বাকি প্রশ্নের উত্তর দাও? ৩ঃহল ছেড়ে মেস খোঁজার ব্যস্ততা, চাকুরীর জন্য ইন্টারভিউ দেওয়ার প্রস্তুতি এর মধ্যে কিছু একটা ব্যবস্থা করে তবে, সব মিলিয়ে —।সব মিলিয়ে কি এবার মাস শেষ তাই না? এবারও কোন জবাব নেই। বয় খাবার দিয়ে গেল, খেতে খেতে টিনা,দেখো দ্রুত একটা কিছু কর। বাবা কিন্তু আমার জন্য পাত্র দেখা শুরু করে দিয়েছেন। কবির, ভালো তো, প্রতিষ্ঠিত পাত্র হলে তার গলায় ঝুলে পড়ো।
আমার মত বেকার বাউন্ডেলের পিছে ঘুরে কি লাভ? দেখো কবির,ফাজলামো করোনা। তুমি রাজি থাকলে বাবাকে বলে, তার অফিসে —?তা হয় না টিনা, আমাকে আমার যোগ্যতায় উঠতে দাও। জানতাম তুমি এমন বলবে। শোনো, আমি তোমাকে তিন মাস সময় দিচ্ছি এর মধ্যে, বাবার কাছে প্রস্তাব নিয়ে যাবে, নইলে কিন্তু আমাকে হারাতে হতে পারে, আর তখন কিন্তু, আমাকে বুঝতে পারবে না। তোমার তো পড়াশোনা শেষ করতে দু বছর বাকি আছে, তোমার বাবাকে বোঝাও আমি তার ভিতরে —,বিষয়টা এখন তুমি বুঝবে না, যদি কখনো মেয়ের বাবা হও, তখন বুঝবে। আর পড়া লেখার ইচ্ছে থাকলে (চলবে……)
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)