সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন যুদ্ধ
কলারোয়ায় এখন আ.লীগের ৩ গ্রুপ!
দুটি গ্রুপ থেকে এখন তিনটি গ্রুপে দৃশ্যমান হয়েছে সাতক্ষীরার কলারোয়া আওয়ামী লীগ। বিগত কয়েকটি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি তিন গ্রুপে পৃথকভাবে পালন করতে দেখা গেছে দলটির নেতাকর্মীদের। ইতোমধ্যে পৃথকভাবে তিনটি গ্রুপ বিক্ষোভ মিছিল সমাবেশ করেছে উপজেলা সদরে। পৌরসভা ও উপজেলা থেকে ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত দলীয় গ্রুপ দৃশ্যমান।
জাতীয় সংসদ ১০৫, সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) আসনে আগামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ থেকে এখন তিনটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে।
জানা গেছে, মূলত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদ সদস্য মনোনয়ন যুদ্ধে সাতক্ষীরা কলারোয়া আ.লীগের এখন ৩ গ্রুপে বিভক্ত।
একাধিক সূত্রে জানায়, সাতক্ষীরার ৪টি সংসদীয় এলাকার মধ্যে সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) সংসদীয় আসনটি দলীয় বিবেচনায় আওয়ামী লীগের একটি গুরত্বপূর্ণ আসন। জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত সৈয়দ কামাল বখত সাকীর নেতৃত্বে এই আসনটি একসময় ছিলো আওয়ামী লীগের দূর্গ। তার মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। পরবর্তিতে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব কমেনি। বরং দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে কলারোয়ার দ্বিতীয় পৌরসভা নির্বাচন ও এরপর গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের এই গ্রুপের দ্বন্দ্ব প্রকট আকার ধারণ করে। বিগত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শরীক দল হিসেবে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় পলিটব্যুরো সদস্য এডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ পরপর ২বার নৌকা প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তবু উপজেলা আওয়ামী লীগের দলীয় নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব অব্যহত রয়েছে। সম্প্রতি উপজেলা আওয়ামী লীগের এখন নেতাকর্মীদের ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে দলীয় প্রোগ্রাম করতে দেখা যাচ্ছে। যেটা এখন অনেকটাই প্রকট আকার ধারণ করছে।
সম্প্রতি দেখা গেছে, গ্রুপ ৩টি আগামি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে পৃথকভাবে প্রচার প্রচারণা চালালেও সাংগঠনিক ভাবে দলের অনেকের দৃশ্যমান।
বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ স্বপন নিজেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে গণসংযোগ ও মিটিং নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
এদিকে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম লাল্টু দলীয় কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বিভিন্ন প্রোগ্রাম করলেও কোন নেতৃত্বকে সমর্থন করেন তা দলীয় কর্মীরা বুঝতে পারেন না। তবে তার প্রায় মিটিং মিছিলে সৈনিক লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা সরদার মুজিবকে দেখা যায়। ধারণা করা যায় আমিনুল ইসলাম লাল্টু সমর্থন করছেন সরদার মুজিবকে। উল্লেখ্য, সরদার মুজিব বিগত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকার প্রার্থী মুস্তফা লুৎফুল্লাহের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন।
অপরদিকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহবায়ক সাজেদুর রহমান খান চৌধুরী মজনু, লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আবুল কালাম, যুগিখালী ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল হাসান, যুবলীগ নেতা মফিজুল ইসলাম লাভলু, সঞ্জয় সাহার নেতৃত্বে একটি গ্রুপ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের মিছিল মিটিং করতে দেখা যাচ্ছে। ধারনা করা হচ্ছে এই গ্রুপটি বর্তমান সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।
রাজনীতি সচেতন স্থানীয় অনেকে জানান, স্বপন-লাল্টুর রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, সরকারি ও স্থানীয় প্রভাব বাস্তবায়নে দ্বন্দ্ব, অর্থ, পেশা, জনবল ও নানান প্রতিযোগিতার দ্বদ্বএ নাভিশ্বাস তৃণমূল পর্যায়ের আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। ফলে স্বভাবতই তারা স্বপন-লাল্টুর বাইরে আরেকটি নতুন গ্রুপের জন্ম দিচ্ছে। এই অংশটি বর্তমান সংসদ সদস্যের দিকে ঝুঁকছেন।
সূত্র জানায়, বিগত বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেকে মনোনয়ন না পেয়ে নৌকার পক্ষে না গিয়ে বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন অথবা নিরবতা পালন করতে দেখা গেছে। আগামিতেও ফের তেমনটি হবে কিনা জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
সব মিলিয়ে আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব দিনদিন প্রকাশ্য রুপ নিতে চলেছে। এই দ্বন্দ্ব নিরাসন জরুরী বলে মনে করছেন তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)