বৃহস্পতিবার, এপ্রিল ২৫, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

ইতিহাস ঐতিহ্য-৪

কলারোয়ার সাধক যবন হরিদাস

ইতিহাস ঐতিহ্য-৪

কলারোয়ার সাধক যবন হরিদাস

প্রফেসর মো. আবু নসর

১৪৫০ খ্রিষ্টাব্দে যবন হরিদাস কলারোয়া থানার কেঁড়াগাছি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মনোহর এবং মাতার নাম উজ্জলা। জন্মের পূর্বে তিনি পিতৃহারা হন। জন্মের কিছু দিন পরেই মাতা মারা গেলেন। ব্রাক্ষ্মন সম্প্রদায় কর্তৃক তিনি পরিত্যক্ত হন। হরিদাস বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম প্রচারক ছিলেন। বাল্যকালে হরিদাস মুসলমানদের কাছে লালিত-পালিত হয়েছিলেন বলে তাকে যবন হরিদাস বলা হতো।

ইতিহাসে জানা যায়, শ্রী চৈতন্য দেব যখন বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করছিলেন, সেই সময় কেঁড়াগাছি গ্রামের যবন হরিদাদের বড়ভাই সন্যাসী হয়ে চলে যান। যবন হরিদাস মায়ের গর্ভে থাকতে তার পিতাও সন্যাসী হয়ে অন্যত্র চলে যান এবং কিছু দিন পরে মৃত্যুবরণ করেন। হরিদাস নিন্মবর্ণের হিন্দু সন্তান ছিলেন বিধায় উচ্চ বর্ণের হিন্দু ব্রাক্ষ্মনরা তাকে প্রতিপালন করতে সম্মত না থাকায় বর্তমানের কেঁড়াগাছির বিপরীতে ভারতের ২৪ পরগণা জেলার স্বরূপনগর থানার হাকিমপুর গ্রামের হাবিবুল্যাহ করিগর হরিদাসকে নিজ বাড়িতে নিয়ে যান। হাবিবুল্যাহ’র স্ত্রী নি:সন্তান থাকায় তিনি হরিদাস কে সন্তান স্নেহে প্রতিপালন করতে থাকেন। ক্রমে বয়স বাড়তে থাকলে হরিদাস সকল সময় হরিনাম জপ করতে শুরু করেন এবং একজন চৈতন্য ভক্ত হয়ে পড়েন। মুসলমান ঘরে হরিনাম জপ বন্ধ করার জন্য হাকিমপুরের প্রভাবশালী খাঁ সাহেবরা বিভিন্ন ভাবে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। হরিদাস হাকিমপুর ছেড়ে যশোর জেলার শার্শা থানাধীন পাটবাড়ী ও কাগজপুকুর গ্রামে যেয়ে হরিনাম জপ করতে থাকেন। কিছুদিন পরে তিনি শ্রী চৈতন্যদেবের শীষ্যত্ব গ্রহণ করেন এবং কয়েক মাসের মধ্যে হরিদাস শ্রী চৈতন্যের অন্যতম শীষ্য হিসেবে পরিগণিত হন। তিনি কোনদিন কোনও দেবদেবীর পুজা করেননি। হরিনাম জপ-ই ছিলো তার মূলমন্ত্র।

হরিদাস মুসলমান ঘরে শৈশবকালে লালিত-পালিত হয়েছিলেন বলে বৈষ্ণব যুগে হরিদাসকে যবন হরিদাসকে আখ্যা দেওয়া হয়েছিলো। পরে যবন হরিদাস হরিনাম প্রচারে গৌরে গমন করেন। তখন হরিদাসকে গৌরের স্বাধীন সুলতান হোসেন শাহ সম্মানের সাথে গ্রহণ করেন এবং মহা বংশজাত বলে স্বীকৃত দেন।

এছাড়াও প্রবীণদের কাছ থেকে মতান্তরে জানা যায় যে, মায়ের মৃত্যুর পর বালক হরিদাস শশ্মানে যেয়ে মায়ের মুখোগ্নি করে সেখানে ঘুমিয়ে যান। পরের দিন পার্শবর্তী হাকিমপুর গ্রামের জনৈক নবিবুল্যাহ গাজী তাকে শশ্মান ঘাট থেকে উঠিয়ে নিয়ে বাড়ি এনে প্রতিপালন করেন। গাজী সাহেবের একটি মেয়ে ছিলো। সে শুধু দুধ, চিনি ও মুড়ি খেতো। মহৎ ও অকৃতদার গাজী সাহেব হরিদাসের সততা ও উদারতা লক্ষ্য করে তার সঙ্গে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে মেয়ের বিবাহের প্রস্তাব দেন বলে কথিত আছে। হরিদাস এই খবর জানতে পেরে সেখান থেকে পালিয়ে শার্শা থানার বেনাপোলের পাটবাড়ি কাগজপুকুর নামক গ্রামে চলে যান। হরিদাস সেখানেও সৃষ্টির সাধনা আরম্ভ করলেন।

অল্প দিন পর হরিদাস ব্রা²ন সাধক হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। কাগজপুকুরের জমিদার হরিদাসকে পরীক্ষা করার জন্য তার রক্ষিতা নর্তকী হীরামতিকে পাঠালেন। হীরামতি হরিদাসের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য রাতে কয়েক ঘন্টা নাচগান করে ক্লান্ত ও শ্রান্ত হয়ে মাটিয়ে লুটিয়ে পড়ে গেলো। অবশেষে স্বাভাবিক ভাবে হরিদাসের ধ্যান ভঙ্গ হলে তিনি রক্ষিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন- ‘মা তুই ছেলেকে দেখতে এসেছিস?’ এ কথা শোনার পর রক্ষিতা/নর্তকীর মনের আমুল পরিবর্তন হয়ে গেলো। নর্তকী ইতোপূর্বে তার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার শুভ বোধদয় বুকে নিয়ে জমিদারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তার যাবতীয় উপার্জন যথা সোনাদানা, টাকাপয়সা ও অন্যান্য অর্থসম্পদ সাধক যবন হরিদাসের পদতলে সমর্পণ করলো। নর্তকী হীরামতি গেরুয়া বসন ধারণ করে হরিদাসের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তীর্থস্থান বৃন্দাবনে চলে গেলো। যাওয়ার সময় তার সমর্পণকৃত অর্থ সম্পদ দিয়ে কোন জনহিতকর কাজ করার জন্য হরিদাসকে অনুরোধ করে গেলো।

পরবর্তীতে যবন হরিদাস নর্তকী হীরামতির অর্থসম্পদ নিয়ে বেনাপোল থেকে বালুন্ডা, সামটা, বাগআঁচড়া হয়ে কাজিরহাট, হেলাতলার মোড় থেকে পশ্চিম দিকে পাঁচপোতা, বোয়ালিয়া, কেঁড়াগাছি, তলুইগাছা হয়ে বসিরহাট পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করেন। এই দীর্ঘ রাস্তাটি ‘হীরামতির জাঙাল’ নামে পরিচিত বলে কথিত আছে।

যবন হরিদাসের আত্মার অস্তিত্ব বৈষ্ণব ধর্মে প্রচারের নিমিত্তে নিবেদিত ও উৎসর্গীকৃত ছিলো। বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম প্রচারক ও সাধক যবন হরিদাস পুরীতে মৃত্যুবরণ করেন। পুরীর নিকটবর্তী শ্রীক্ষেত্রে তার সমাধি আছে।

 

 

লেখক:
প্রফেসর মো. আবু নসর
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ,
কলারোয়া সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা।
০১৭১৭০৮৪৭৯৩।

একই রকম সংবাদ সমূহ

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবু নসরবিস্তারিত পড়ুন

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবুবিস্তারিত পড়ুন

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত প্রফেসর মো. আবু নসর ৫২’রবিস্তারিত পড়ুন

  • পবিত্র মিরাজের শিক্ষা স্রষ্টার ইবাদত ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
  • সাতক্ষীরার প্রথম মহকুমা প্রশাসক নওয়াব আব্দুল লতিফ
  • বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাক্ষী আশুরা
  • জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতি: চীনকে ছাড়িয়ে ভারত
  • ঈদুল আযহা : ঐতিহাসিক ত্যাগের মহান স্মরণিকা
  • শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ের দিন ‘মে দিবস’
  • বরকতময় পবিত্র শবে বরাত
  • ৭ মার্চ বাঙালি জাতির মূল চালিকা শক্তি
  • চেতনায় ’৭১: মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়া
  • ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া হানাদারমুক্ত দিবস প্রফেসর মো. আবু নসর
  • সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী (সাঃ)
  • আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি-ই হলো কোরবানি