শনিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৪

কলারোয়া নিউজ

প্রধান ম্যেনু

সাতক্ষীরা, দেশ ও বিশ্বের সকল সংবাদ, সবার আগে

ইতিহাস ঐতিহ্য-৩

কলারোয়ায় নীল বিদ্রোহ ও মহকুমা প্রশাসক নওয়াব আব্দুল লতিফ

ইতিহাস ঐতিহ্য-৩

কলারোয়ায় নীল বিদ্রোহ ও মহকুমা প্রশাসক নওয়াব আব্দুল লতিফ

প্রফেসর মো. আবু নসর

ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি বৃটিশ শাসকদের কাছে কলারোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হিসেবে পরিচিত ছিল। তখন কলারোয়া ছিল বাংলার দেশপ্রেমিক সচেতন মানুষের নন্দিত এক জনপদ। নীল বিদ্রোহের পীঠস্থান, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম দুর্ভেদ্য দূর্গ, বহু প্রাচীন ঐতিহাসিক ঐতিহ্যের এক গৌরব গাঁথা ইতিহাস সমৃদ্ধ, পূরাকীর্তি, সভ্যতা, প্রত্নতত্ব আর সংস্কৃতির নিদর্শন সহ দর্শনীয় স্থান, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র এবং অন্যান্য ঐতিহ্যে ভরপুর ভূবনমোহন স্বপ্নপুরী দেশের বহুল উচ্চারিত জনপদের নাম সাতক্ষীরার কলারোয়া। কবি বলেছেন ‘মাথার পরে নীল চাদোয়া, শস্য শ্যামে গা নাওয়া, চোখ জুড়ানো মন ভুলানো, স্বর্গোপমা কলারোয়া’।
প্রকাশ থাকে যে, কলারোয়ার পূর্ববর্তী নাম ছিল হোসেনপুর পরগণা।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ১৮৫১ খৃষ্টাব্দে বসিরহাট থেকে বিচ্ছিন্ন করে সাতক্ষীরা মহকুমা সৃষ্টি হওয়ার পর মহকুমার সদর দপ্তর কলারোয়াতে স্থাপিত হয়। শিক্ষা, সংস্কৃতি, সভ্যতা, যোগাযোগ ব্যবস্থা, রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে তুলনামুলকভাবে অধিক উন্নত ও অগ্রগামী ছিল বিধায় কলারোয়াতেই সাতক্ষীরা মহকুমার প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হয়েছিল। তাই উপমহাদেশের ইতিহাসে কলারোয়ার স্থান অত্যন্ত গৌরবজনক।
আর নবগঠিত সাতক্ষীরা মহকুমার প্রথম মহকুমা প্রশাসক বা মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন জনাব আব্দুল লতিফ (ফরিদপুর), যিনি পরবর্তীতে খান বাহাদুর ও নওয়াব উপাধি লাভ করেন।

অবশ্য কলারোয়ায় দশ বৎসর যাবৎ মহকুমার প্রশাসনিক কার্যক্রম চালানোর পর ১৮৬১ সালে সাতক্ষীরার প্রভাবশালী জমিদারদের প্রচেষ্টায় মহকুমা সদর দপ্তর কলারোয়া থেকে সাতক্ষীরাতেই স্থানান্তরিত হয়।

উল্লেখ্য যে, কলারোয়াতে কার্যালয় স্থাপন করে ১৮৫১ খৃষ্টাব্দে সাতক্ষীরাকে যশোর জেলার চতুর্থ মহকুমা হিসেবে সৃষ্টি করা হয়। পরে ১৮৬৩ খৃষ্টাব্দে ২৪ পরগনা জেলার সৃষ্টি হলে সাতক্ষীরা মহকুমা ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্ভুক্ত হয়।
প্রকাশ থাকে যে, যশোর জেলা মূলত খুলনা এবং ২৪ পরগনা জেলার অনেক আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৭৮১ সালের ৭ জুন অবিভক্ত বাংলার প্রথম জেলা যশোর জেলা গঠিত হয়। ফরিদপুর, ২৪ পরগনার কিছু অংশ, নদীয়া (বর্তমান কুষ্টিয়া) ও খুলনা নিয়ে যশোর জেলা গঠিত হয়। যশোর উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন জেলা। ১৮০০ সালে যশোর জেলা কালেক্টরেট বিল্ডিং (৩৬০ দরজা) নির্মিত হয়। যশোর জেলার প্রথম জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন ট্রীলম্যান হেংকেল। ১৮৮১ সালে খুলনা জেলা গঠিত হয়। মহকুমা হিসাবে খুলনার আত্মপ্রকাশ ঘটে ১৮৪২ সালে।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ইংরেজ লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস জমিতে স্বল্পকালীন ইজারা প্রথা চালু করেন। ফলে ইংরেজরা প্রজাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ ও ফসল আদায়ের চেষ্টা করে। এই সময় কৃষকরা চরম দারিদ্রের মধ্যে নিপতিত হয়। ১৭৬৫ থেকে ১৭৯০ সাল পর্যন্ত সময়ে দেশে খাজনা দ্বিগুন বৃদ্ধি পায়, যা মরার উপর খাড়ার ঘা। ইতোমধ্যে কলারোয়া এলাকায় ও যশোর অঞ্চলে ইংরেজরা কৃষকদের নীলচাষে বাধ্য করে। ক্রমশঃ নীলচাষ সাতক্ষীরা এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। নীলচাষ ছিল একটি লাভজনক ব্যবসা। তাই বহু এলাকায় ইংরেজরা নীলকুঠি স্থাপন করে নীল ব্যবসা শুরু করে। ১৮১০ খৃষ্টাব্দে নীল ব্যবসা তুঙ্গে উঠে। ১৮১৬ খৃষ্টাব্দে বাংলাদেশ থেকে সমগ্র পৃথিবীর জন্য ব্যবহার্য নীল সরবরাহ করা হয়েছিল। নীল ব্যবসায় প্রচুর মুনাফায় উৎসাহিত হয়ে ইংরেজরা কৃষকদের উপর নীল উৎপাদনের জন্য চাপ প্রয়োগে নিদারুন উৎপীড়ন ও অবর্ননীয় অত্যাচারের স্বাক্ষর বহন করেছিল। ফলে দেশে নীল বিদ্রোহ শুরু হয়।

কলারোয়া থানার সোনাবাড়িয়াতেও ঐ সময় নীল বিদ্রোহের চরম ঢেউ লেগেছিল। কলারোয়া, সোনাবাড়িয়া, চিতলা, দরবাশা, কেঁড়াগাছি, কুঠিবাড়ী, কামারালি, জানকা, কাশিয়াডাঙ্গা, ক্ষেত্রপাড়া, সরসকাটি ও দাড়কী গ্রামে নীলকুঠি ছিল বলে জানা যায়। বস্ত্র ও নীল বাণিজ্যের প্রসার এবং চাষী ও তাঁতীদের বিদ্রোহ দমন ও প্রতিরোধ যুদ্ধের সময় ইংরেজ শাসকরা প্রশাসনিক সুবিধা ও শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে ইন্ডিগো কমিশন স্থাপন করে কয়েক স্থানে ম্যাজিষ্ট্রেট, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ও জয়েন্ট ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ করেন। ১৮৫১ থেকে ১৮৫৪ খৃীষ্টাব্দ পর্যন্ত জনাব আব্দুল লতিদফ নব গঠিত সাতক্ষীরা মহকুমার সদর দপ্তর কলারোয়ায় মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট (মহকুমা প্রশাসক) থাকাকালীন নীল চাষীদের উপর জুলুম, অত্যাচার ও অর্থনৈতিক শোষনের প্রতিকারের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারের কাছে আবেদন জানান।

পরবর্তীতে এখানে গণ আন্দোলনও শুরু হয়। ইংরেজরা নীল চাষীদের প্রতিহত করার জন্য এমনকি সশস্ত্র আক্রমনও চালায়। মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আব্দুল লতিফ এ ঘটনার প্রতিবাদ করেন এবং ইংরেজ সরকারের কাছে এহেন অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেন। ঐ সময় কলারোয়ার পিছলাপোল ও কুশোডাঙ্গা গ্রামের কৃষকরা নীলকরদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য বিদ্রোহ ঘোষনা করে অসীম সাহসিকতা পরিচয় দেন।

বিদ্রোহের কারণ তদন্ত ও পর্যবেক্ষন করার জন্য লতিফ সাহেব কর্মচারী মত্তদুদ ববকন্দাজকে ঘটনাস্থলে পাঠালে তিনিও সঙ্গত কারণে অত্যাচারিত ও নিপীড়িত বিদ্রোহী কৃষকদের পক্ষ সমর্থন করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, নীলকরদের অত্যচারের একটা চিত্র পাওয়া যায় স্কোনস সাহেবের রিপোর্টে, কলারোয়ার অধিকাংশ অঞ্চলে ঐ সময় ফারাজী আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছিল। তার ফলে কৃষকদের মধ্যে অধিকার সচেতনাতার সৃষ্টি হয় এবং নীল বিদ্রোহ এখানে নতুন মাত্রা লাভ করে। ইংরেজ প্রশাসনের আশ্রয় প্রশ্রয়ে ক্ষমতাদর্পী নীলকর সাহেবদের প্রবল আধিপত্যের যুগে নিজের অতিমূল্যবান চাকুরী হারাবার সম্ভাবনা থাকা সত্বেও তরুন মহকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আব্দুল লতিফ নীলকরদের অত্যাচার থেকে কৃষকদের বাঁচাতে যথেষ্ট সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

বিশেষ করে ঝিকরগাছা ও পাঁচপুরা এলাকার চাষী আসানউল্ল্যাহ মন্ডল, জাকের মন্ডল ও তোতাগাজীর উপর নীলদস্যুদের অত্যাচার মোকাবেলায় মহাকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আব্দুল লতিফের ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়। তখন কলারোয়ার সর্বত্র ব্যাপক হারে নীলের চাষ হতো। সাতক্ষীরার বুড়োনে কলারোয়ায় (বর্তমানে পশু হাটের উত্তর পার্শে), সোনাবাড়িয়া ও কেঁড়াগাছিতে কোম্পানী অফিস ছিল। ১৭৯৫ খ্রীষ্টাব্দে বিলাতের বোর্ড অব ডিরেক্টররের অনুমতি নিয়ে পিটারবন্ড নামক এক ইংরেজ যশোরের রুপদিয়ায় সর্বপ্রথম নীলকুঠি স্থাপন করেন। সেসময় সমগ্র যশোর জেলার নব্বইটি গ্রামের বার্ষিক নীল উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১০,৭৯১ মণ। তখন খুলনা জেলার জন্ম হয় নি। খুলনা তখন যশোর জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল।

সাতক্ষীরা মহাকুমা ম্যাজিষ্ট্রেট জনাব আব্দুল লতিফ (ফরিদপুর) নীলচাষীদের উপর কুঠিয়ালদের অত্যাচার সম্পর্কে ইংরেজ সরকার সমীপে এক জোরালো বিবরণী দাখিল করেন। একই সময় ঝিকরগাছার নীলকুঠি প্রধান/অধ্যক্ষ মিস্টার হেনরী ম্যাকেঞ্জীও তৎকালীন ছোটলাট স্যার ফ্লোডারিক হ্যালিডের নিকট জনাব আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে নীল চাষীদের পক্ষে সাহায্য ও সমর্থন দানের জন্য অভিযোগ দায়ের করেন। জনাব লতিফকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সন্তোষজনক কৈফিয়ত দিতে বলা হয়। ১৮৫৪ খৃষ্টাব্দের শুরুতে জনাব লতিফের বিরুদ্ধে এই ঘটনা যা বাংলায় নীল কমিশন নিযুক্তির পূর্বে নির্বাচিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।
উল্লেখ্য যে, অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্বের অধিকারী তরুন মহকুমা প্রশাসক জনাব আব্দুল লতিফ বিভিন্ন জনহিতকর কাজের জন্য চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। ন্যায় সত্যের প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন বলিষ্ট ভূমিকা ও চাকুরীজীবী প্রভু তোষনের হীন মনোভাবের উর্ধে থেকে তিনি কলারোয়ার মানুষের সঙ্গে গড়ে তুলেছিলেন অন্তরের গভীর সংযোগ ও ভালবাসা। তিনি সাতক্ষীরা মহকুমার গরীব নিরীহ ও নিরন্ন কৃষক সমাজের উপর নীল কুঠিয়ালদের অত্যাচারের নির্মমতায় বিচলিত হয়ে উঠেন।
অবস্থার সত্যতা ও তীব্রতার প্রতিবাদের জন্য তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হন।

লতিফ সাহেব সৎ সাহস নিয়ে ঘোষনা দিয়েছিলেন যে, নীল চাষীদের রক্তে রঞ্জিত না হয়ে এক টুকরো নীল ইংল্যান্ড যাবে না। ১৮৯৩ সালে জনাব আব্দুল লতিফের মৃত্যুর পর রাইস ও রায়াত পত্রিকায় তার সৎ ও নৈতিক সাহকিতার পরিচয় সম্পর্কে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। জনাব লতিফের মহৎ চেষ্টায় নীল কুঠিয়ালদের অত্যাচারের কাহিনী জনগোচরে আনীত হয়। কুঠিয়ালদের কঠোর হস্তে দমনে তিনি ছিলেন অগ্রসৈনিক। এর থেকে লতিফ সাহেবের দেশত্ববোধ ও জাতীয়তাবোধের যে উজ্জল নজির পাওয়া যায় তা শুধু হিন্দু-মুসলিম সমাজে বিরল নয় বরং সর্বক্ষেত্রে তা অতুলনীয় ও অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ১৮৫৯ সালে জনাব লতিফের বিরুদ্ধে পুনরায় দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। এ সময়ও কলারোয়ার জনগোষ্টি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে নি।

অত্যাচারিত কৃষককুল সেসময় জনাব লতিফের সমর্থনে জোরালো ভাষা ও বলিষ্ট কণ্ঠে অন্যায় প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছিল।

এখানে উল্লেখ্য যে, শিক্ষা, শান্তি, প্রগতি ও সমাজ সেবার প্রতি বিশেষ অনুরাগী থাকায় এবং শিক্ষা বিস্তার কল্পে সরকার খুশী হয়ে পরবর্তীতে জনাব আব্দুল লতিফকে ‘খান বাহাদুর’ ও ‘স্যার’ উপাধিতে ভূষিত করেন।

খান বাহাদুর আব্দুল লতিফের প্রতি কলারোয়ার সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ জনগনের গভীর ভালোবাসা, কৃতজ্ঞতা, শ্রদ্ধা ও সমর্থনের কথা ছোটলাটের কর্নকুহরে পৌছাতে দেরী হল না। ছোটলাট কলারোয়ার সংগ্রামী জনতার এবং জনাব আব্দুল লতিফের আন্তরিকতার মূল্যায়নপূর্বক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তার বিরুদ্ধে সমস্ত প্রকারের অভিযোগ ও প্রতিবেদন প্রত্যাহার করেন এবং বজ্রকঠিন ও আপোষহীন নীতির প্রতি মুগ্ধ ও শ্রদ্ধাশীল হলেন।

পরে অবশ্য ১৮৫৪ সালের জুন মাসে স্বাভাবিক নিয়মে জনাব আব্দুল লতিফকে হুগলীর জাহানাবাদে বদলী করা হয়।

প্রকাশ থাকে যে, খ্যাতনামা নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পন নাটকটি প্রকাশিত ও মঞ্চস্থ হওয়ার পর নীল চাষীদের প্রতি ইংরেজ কুঠিয়ালদের নিদারুন অত্যাচার প্রমানিত হওয়ায় ও বিশেষ করে ১৮৬০ সালে নীলকর কমিশনের সুপারিশে এবং কৃত্রিম রং এর ব্যবহারের প্রচলন হলে এ দেশে থেকে নীলের চাষ ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যায়।

নওয়াব আব্দুল লতিফ (খান বাহাদুর) উনিশ শতকের বাংলার মুসলিম জাগরনের অগ্রদূত এবং সমাজসেবক ছিলেন। তিনি ১৮২৮ সালে ফরিদপুর জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ফকির মাহমুদ কলকাতায় একজন স্বনামধন্য আইনজীবী ছিলেন। আব্দুল লতিফ কলকাতা মাদ্রাসা থেকে আরবি, ফারসি ও ইংরেজি ভাষার সর্বোচ্চ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৮৪৮ সালে তিনি কলকাতা মাদ্রাসার ইংরেজি ও আরবির অধ্যাপক নিযুক্ত হন। ১৮৪৯ সালে তিনি ডেপুটী ম্যাজিস্ট্রেট এবং ১৮৭৭ সালে প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট পদে উন্নীত হয়েছিলেন।

১৮৫১ সালে সাতক্ষীরার কলারোয়া ডেপুটী ম্যাজিস্ট্রেট (মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট/প্রশাসক) থাকা কালীন দরিদ্র নীল চাষীদের দুঃখ দুর্দশা লাঘবে তিনি আপ্রান চেষ্টা করেন। ১৮৬০ সালে নীল কমিশন গঠনেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।
স্বধর্মীয় জনগোষ্টির প্রতি মমত্ববোধ ও প্রশাসনিক কাজে দক্ষতা এবং জনহিতকর কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৮৬২ সালে তাকে বঙ্গীয় আইন পরিষদে প্রথম মুসলিম সদস্য মনোনীত করা হয়।
পরের বছরে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন উদারপন্থি ও ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ। সমাজ সংষ্কার ও শিক্ষা বিস্তারে স্যার সৈয়দ আহমদের মতো নওয়াব আব্দুল লতিফের অবদান ছিল বলেই তাকে বাংলার ‘সৈয়দ আহমদ’ও বলা হয়।

আব্দুল লতিফের কর্মদক্ষতা এবং শিক্ষা ও সামাজিক ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ব্রিটিশ সরকার তাকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপাধি ও পদক প্রদান করেন।
আব্দুল লতিফ ১৮৭৭ সালে ‘খান বাহাদুর’ এবং ১৮৮০ সালে ‘নওয়াব’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৮৮৩ সালে ‘সিআইই’ উপাধি পান। ১৮৮৭ সালে উচ্চতর সম্মানের প্রতীক ‘নওয়াব বাহাদুর’ খেতাবে ভূষিত হন।

১৮৮৪ সালে তিনি চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৮৯৩ সালের ১০ জুলাই ৬৫ বছর বয়সে নওয়াব আব্দুল লতিফ কলকাতায় ইন্তেকাল করেন।

 

 

লেখক:
প্রফেসর মো. আবু নসর
সাবেক অধ্যক্ষ কলারোয়া সরকারি কলেজ
কলারোয়া, সাতক্ষীরা।
মোবা: ০১৭১৭-০৮৪৭৯৩

একই রকম সংবাদ সমূহ

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’

‘লাইলাতুল কদরে প্রত্যেক বরকতপূর্ণ বিষয় অবতীর্ণ হয়’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবু নসরবিস্তারিত পড়ুন

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’

পাপ মুক্তি ও রহমতের রজনী ‘পবিত্র শবে বরাত’ আলহাজ্ব প্রফেসর মো. আবুবিস্তারিত পড়ুন

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত

বাংলা ভাষার জন্য বাঙালিদের আত্মত্যাগ বিশ্বের দৃষ্টান্ত প্রফেসর মো. আবু নসর ৫২’রবিস্তারিত পড়ুন

  • পবিত্র মিরাজের শিক্ষা স্রষ্টার ইবাদত ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ
  • সাতক্ষীরার প্রথম মহকুমা প্রশাসক নওয়াব আব্দুল লতিফ
  • বহু ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর সাক্ষী আশুরা
  • জনসংখ্যার গতি-প্রকৃতি: চীনকে ছাড়িয়ে ভারত
  • ঈদুল আযহা : ঐতিহাসিক ত্যাগের মহান স্মরণিকা
  • শ্রমজীবীদের অধিকার আদায়ের দিন ‘মে দিবস’
  • বরকতময় পবিত্র শবে বরাত
  • ৭ মার্চ বাঙালি জাতির মূল চালিকা শক্তি
  • চেতনায় ’৭১: মুক্তিযুদ্ধে কলারোয়া
  • ৬ ডিসেম্বর কলারোয়া হানাদারমুক্ত দিবস প্রফেসর মো. আবু নসর
  • সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব বিশ্বনবী (সাঃ)
  • আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ত্যাগ, আত্মশুদ্ধি-ই হলো কোরবানি