খবর প্রকাশের পর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা স্থগিত
ঝিকরগাছার বিল্লালের বাপের নাম বদলাতে লক্ষ লক্ষ টাকার মিশন (পর্ব-৪)
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ, ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটির সভাপতির পদ সাময়িক স্থগিত হওয়া কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেনকে নিয়ে বিভিন্ন কলারোয়া নিউজসহ অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়াতে ধারাবাহিক ভাবে সংবাদ প্রকাশের পর এবার তার মায়ের নামে আসা মুক্তিযোদ্ধা সন্মানী ভাতা স্থগিত করেছে উপজেলা প্রশাসন।
ঝিকরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুবুল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এ সকল ঘটনার পর কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেন তার জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম এবং মায়ের পরিচয় পত্রে স্বামীর নাম ঠিক করতে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়ে মিশনে নেমেছেন। যারই ধারাবাহিকতায় নিজের নামের জাতীয় পরিচয় পত্রে পিতার নাম মোরশেদ আলীর স্থলে মশিয়ার রহমান করার জন্য পানিসারা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ফরহাদ হোসেন, সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হাসনা হেনা, ইউপি সদস্য মিলন হোসেন, উদোক্তা রাজিব হোসেন ও গ্রাম পুলিশ শাহ জামালের মাধ্যমে পরিষদের মৃত্যু সনদ রেজিস্ট্রার খাতায় বাপের নাম জালিয়াতি করেছেন এবং ওয়ারেশ কায়েম সার্টিফিকেট নিয়েছেন। এ সংক্রান্ত সকল নথিপত্র প্রতিবেদকের হাতে এসে পৌঁছিয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার পানিসারা ইউনিয়নের কুলিয়া গ্রামের তারা চাঁদ মন্ডলের ছেলে মোরশেদ আলী। তিনি ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু সনদ রেজিস্ট্রারের তথ্য অনুযায়ী ১৯৯৯ সালের ২০ জুলাই ৫৫ বছর বয়সে জন্ডীস রোগে মৃত্যুবরণ করেন। মোরশেদ এর মৃত্যুর ২৩ বছর পর ইউনিয়ন পরিষদের মৃত্যু রেজিস্ট্রারে মোরশেদ নামের পাশে সদ্য সংযুক্ত হল “মশিয়ার”। এপ্রসঙ্গে জানতে চাইলে পানিসারা ইউনিয়ন পরিষদের সচিব এই অপকর্মের দায়ভার গ্রাম পুলিশ শাহ জামালের ঘাড়ে চাপান। অন্যদিকে গ্রাম পুলিশ শাহ জামাল বলেন, বিল্লাল মৃত্যু সনদ রেজিস্ট্রারে নিজেই তার মৃত বাবার নামের পরিবর্তন করেছে। মৃত্যু সনদ রেজিস্ট্রারে নাম জালিয়াতি করে সেই বুনিয়াদে উদ্যোক্তা রাজিবের মাধ্যমে মৃত্যু নিবন্ধন সনদের আবেদন করে ৫/১২/২০২২ইং তারিখে মশিয়ার রহমানের নামে একটি মৃত্যু নিবন্ধন সনদ সংগ্রহ করে এবং সেই মৃত্যু সনদ অনুযায়ী মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ইউনিয়ন পরিষদের সচিবের সহায়তায় একদিনের মধ্যে পিতার নাম সংশোধন করে একটা জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরি করেছেন।
তথ্যানুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে কুলিয়া মৌজায় ১৮৪নং খতিয়ানে তারা চাদ এর ওয়ারিশ সূত্রে জমি মালিক হচ্ছেন তার ছেলে জিন্নত উল্যা, খোরশেদ আলী, মোরশেদ আলী, জাহেদ আলী ও রাজ্জাক আলী। এখানে মশিয়ার রহমান নামে তারা চাদ এর ছেলের কোনো অস্তিত্ব নেই এবং একই মৌজায় ৮৯নং খতিয়ানে আমেনা খাতুনের স্বামীর নাম মোরশেদ পাওয়া গেছে। বিল্লাল হোসেনের এস এস সি পাশের একাডেমিক সার্টিফিকেটেও তার পিতার নাম মোরশেদ আলী পাওয়া গেছে।
বিল্লালের দাদার নাম তারা চাদ মন্ডলের সাথে মশিয়র এর পিতার নাম মিলে যাওয়ার কারণে কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেন তার এবং তার মায়ের এন আই ডি কার্ডে জালিয়াতি করে মশিয়ার বানিয়ে নিয়ে ২০১৩ সাল হতে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎ করছে তার মাতা আমেনা খাতুন কে নমিনী করে। আর আমেনা খাতুনের নমিনী কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেন।
কাগজপত্রে অস্তিত্ববিহীন মশিয়ারের মৃত্যু সনদ ব্যবহার করে পানিসারা ইউনিয়ন পরিষদের মশিয়ারের নামে দুরকম ওয়ারিশ সনদে স্বাক্ষর করেছেন দুজন ইউপি সদস্য। সংরক্ষিত ইউপি সদস্য হাসনা হেনা ২/১০/২০২২ইং তারিখে স্বাক্ষরিত ওয়ারিশ সনদে ৭ জনকে ওয়ারেশ হিসেবে দেখিয়েছেন। আবার একই ব্যক্তির ওয়ারিশ সনদে ইউপি সদস্য মিলন হোসেন ১/১২/২০২২ইং তারিখে স্বাক্ষরিত ওয়ারিশ সনদে ১ম স্ত্রী মৃত ছালেহা বেগম এবং কন্যা মঞ্জুয়ারা বেগমের নাম বাদ দিয়ে ওয়ারিশ সনদ দিয়েছে।
মিলন মেম্বার কিভাবে বিল্লালের পিতার নাম মশিয়র এবং ওয়ারেশ ৭ জনের স্হলে ৫ জন দিলেন এই প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আমার বাড়ি পাশের গ্রামে এবং নতুন মেম্বার হওয়ায় তার পিতার নাম সঠিক ভাবে জানতাম না। বিল্লাল আমাকে ভুল বুঝিয়ে এই তথ্যে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছে।
পানিসারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন কিভাবে বিল্লালের পিতা মশিয়ার লেখা জন্ম নিবন্ধনে স্বাক্ষর করেছেন জানতে চাইলে তিনি জানান, প্রতিদিন শতশত জন্ম নিবন্ধনে সই করতে হয়। উদ্যোক্তা আবেদন করে আর সচিব সেই তথ্য যাচাই করে সার্টিফিকেট বের করে আমার সামনে ধরলেই আমি স্বাক্ষর করে দিই। বিল্লালের এই জন্ম সনদ বাতিলের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন দিয়েছেন বলে তিনি জানান।
উল্লেখিত কাগজপত্র সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধার ভাতা আত্মসাৎকারী, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের ঝিকরগাছা উপজেলা কমিটির সভাপতি পদ সাময়িক স্থগিত হওয়া ও টিউবওয়েল দেওয়ার নামে প্রায় ২৫০ জনের নিকট থেকে অর্থ আত্মসাৎকারী কথিত ডাঃ বিল্লাল হোসেন নিজের ও তার ভাইয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতার নাম মোরশেদ আলী, মাতা আমেনা খাতুনের স্বামীর নাম মোরশেদ আলীর পরিবর্তীতে মশিয়ার রহমান করার প্রচেষ্ঠা করছেন এমন সংবাদ পেয়ে ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয় সংবাদকর্মীরা জানতে পেরে পানিসারা ইউনিয়ন পরিষদের সংবাদ অনুসন্ধানে গেলে সেখানে বিল্লালের ছোট ভাই দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার, কুলিয়া বাজারে মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি পাঠাগারের ঘর ভাঙার নেতৃত্ব দানকারী জয়নাল আবেদিন আরও কয়েকজন সঙ্গী সহ সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হন এবং এ বিষয়ে রিপোর্ট করলে দেখে নেওয়ার হুমকি ধামকি প্রদান করেন। এই ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিকগন ঝিকরগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি রুজু করেছেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)