তালার পাখিমারা বিলের বাঁধ কেটে চাষাবাদ করছে কৃষকরা!
সাতক্ষীরা তালা উপজেলার পাখিমারা বিলে অবাধ জোয়ার-ভাটার পলি ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) প্রকল্পের আওতায় থাকা ৩টি ইউনিয়নের কতিপয় কৃষকরা পেরিফেরিয়াল বাঁধ কেটে প্রায় দুই বছর ধরে চাষাবাদ করছে। বিগত ৭/৮ বছর ধরে অধিগ্রহণকৃত জমির হারি না পাওয়ায় তারা বাধ্য হয়ে জমিতে ফসল ফলাচ্ছে বলে জানিয়েছে ঐ কৃষকরা। এদিকে টিআরএম এর কার্যক্রম বাস্তবায়ন না হলে পুনরায় কপোতাক্ষ নদ ভরাট হয়ে এসব অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে বলে আশংকা করছে এলাকাবাসী।
তালার দোহার গ্রামের মৃত আঃ মালেক সরদারের ছেলে গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘টিআরএম প্রকল্পের মধ্যে আমাদের চার ভাইয়ের ৪০ বিঘা জমি রয়েছে। দুই বছর হারি পাওয়ার পরে নয় বছর হয়ে গেল আমরা এ জমি বাবদ কোন টাকা পায় না। এতে করে আমাদের অর্থনৈতিক সমস্যা দেখা দিলে বাধ্য হয়ে আবার ধান লাগাতে শুরু করেছি। কিন্তু আমাদের প্রায় ৭ বিঘা মতো জমির মাটি খনন করে বাঁধ দেয়ায় সে জমিতে আগামী ২/৩ বছর কোন ফসল উৎপাদন হবে না। এজন্য পুনরায় টিআরএম প্রকল্প চালু করতে হলে আমাদের বিগত বছরগুলোর হারির টাকা পরিশোধ করতে হবে।’
একই গ্রামের আরেক কৃষক আঃ বারি সরদার বলেন, ‘টিআরএম আবারো হোক সেটা আমরাও চাই। তবে আমাদের বিগত নয় বছরের হারির টাকা পরিশোধ করতে হবে। অর্থের অভাবে আমার ছেলের লেখাপড়া পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় জমির ক্ষতিপূরণ ছাড়া অন্য কোন উপায় নেই।’
তালা উপজেলা পানি কমিটির সভাপতি মীর জিল্লুর রহমান বলেন, বিগত ২০১১ সালে ‘কপোতাক্ষ নদের জলাবদ্ধতা দূরীকরণ (প্রথম পর্যায়) প্রকল্প চালু হওয়ায় বর্তমান সরকারের দেয়া জনগণের ওয়াদা পূরণ হয়েছিল। এই টিআরএম চালুর ফলে যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার ৫০-৬০ লক্ষ মানুষ জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু চলতি মৌসুমে টিআরএম কার্যক্রম বন্ধকরে দেওয়ার কারণে কপোতাক্ষের নাব্যতা সংকটের আশংকা দেখা দিয়েছে। এখনি পুনরায় টিআরএম চালু না করলে সরকারের গৃহীত জনকল্যাণমুখী প্রথম মেয়াদে প্রায় ২৬২ কোটি এবং ২য় মেয়াদে বরাদ্দ প্রায় ৫৩১ কোটি টাকা অপচয় হবে।
স্থানীয় জালালপুর ইউপি চেয়ারম্যান এম মফিদুল হক লিটু বলেন, পাখিমারা বিলের কৃষকদের টিআরএম এর ব্যাপারে কোন আপত্তি নেই। তবে কয়েক বছর ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। ক্ষতিপূরণ পেলে সকল সমস্যার সমাধান হবে।
তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশান্ত কুমার বিশ্বাস জানান, তিনি ওই এলাকার পরিস্থিতি সম্পর্কে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছেন এবং সরজমিনে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতির উপর রিপোর্ট জমা দিতে বলেছেন।
যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, নতুন করে ২০২১ হতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েছে। কৃষকদের অধিগৃহণকৃত জমির আড়াই কোটির মতো টাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রয়েছে। অনেকের জমির কাগজপত্র ঠিক না থাকায় তাদের হারি পেতে বিলম্ব হচ্ছে। কৃষকদের বিগত বছরগুলোর হারি দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, তাদের এ টাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই পুনরায় প্রকল্প চালু হবে। তবে টিআরএম প্রকল্পের আওতায় থাকা পেরিফেরিয়াল বাঁধ কাটার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না বলে দাবি করেন।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)