নড়াইলে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে খামারিরা দুশ্চিন্তায়
নড়াইলে কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে প্রতিবছর বাণিজ্যিকভাবে দেশীয় পদ্ধতিতে গবাদি পশু মোটাতাজা করেন জেলার খামারি ও কৃষক। এসব গবাদি পশু স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হয়।
গত বছর কুরবানির ঈদে জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্তত ১২ হাজার গরু ও ছাগল বিভিন্ন জেলায় রপ্তানি করেছে কৃষক। এ বছর কুরবানি ঈদে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৩৮ হাজার পশুর জোগান দেবেন স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা। গত বছর ভারত থেকে নড়াইলে কুরবানির হাটে পশু কম আমদানি করায় দেশি গরুর চাহিদা ছিল বেশি। খামারিরা লাভও করেছিলেন বেশি।
এ বছরও কুরবানিকে সামনে রেখে লাভের আশায় জেলায় কুরবানির চাহিদার তুলনায় ৩৮ হাজার দেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করেছেন খামারিরা। হঠাৎ দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন জেলার প্রায় ৫ হাজার খামারি ও কৃষক। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, পূর্ব থেকে নড়াইলের গরুর খামারিরা কুরবানি ঈদকে সামনে রেখে দেশীয় পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজা করে।
এ বছর জেলার ৪৭৯২ জন খামারি ৬৪৭৪৮ গরু, ছাগল ও ভেড়া মোটাতাজা করেছেন। যার মধ্যে ১৮৪৬৭টি দেশি গরু, ৪৬০৯৬টি ছাগল এবং ১৮৫টি ভেড়া রয়েছে। গত বছরের তুলনায় ২৯৮৯০টি পশু বেশি মোটাতাজা করা হয়েছে। এ বছর তিনটি উপজেলার মধ্যে লোহাগড়া উপজেলায় বেশি পশু মোটাতাজা করা হয়েছে।
নড়াইল জেলা প্রাণিসম্পদ সূত্রে জানা যায়, এ ঈদে জেলায় কুরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে সব মিলিয়ে (গরু, ছাগল ও ভেড়া) ২৭২৮২টি। জেলার খামারিরা যে পরিমাণ পশু মোটাতাজা করেছেন, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৩৭৪৬৬টি পশু বিভিন্ন জেলায় জোগান দিতে পারবেন।
স্থানীয় খামারিরা জানান, গত বছর ভারতীয় গরুর উপস্থিতি স্থানীয় বাজারে কম থাকায় দেশি গরু-ছাগলের চাহিদা ছিল বেশি। খামারি ও কৃষকরা লাভও করেছিলেন বেশি। অনেক খামারি গতবারের তুলনায় এ বছর আরও বেশি গরু ও ছাগল মোটাতাজা করেছেন। নতুন নতুন খামার গড়ে উঠছে।
খামারি ছাড়াও জেলার সাধারণ কৃষকরা বাড়তি আয়ের জন্য বাড়িতে গরু-ছাগল মোটাতাজা করছে। শেষ সময়ে ঈদ মৌসুমে দেশের কয়েকটি জেলায় বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেওয়ায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে জেলার খামারি ও কৃষক।
কালিয়া উপজেলার চাঁদপুর গ্রামের খামারি ইমরান শেখ জানান, গত বছর তার খামারে ৭টি গরু ছিল। ঈদের সময় বিক্রি করে ভালো লাভও হয়েছিল। এ বছর তিনি ১০টি গরু মোটাতাজা করেছেন। বন্যার কারণে কুরবানির চাহিদা কমে যাওয়ায় পশুর ন্যায্যমূল্য পাওয়া নিয়ে আশঙ্কায় রয়েছেন কৃষক ও খামারিরা।
খামারি ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জেলায় মোট যে পশু মোটাতাজা করা হয়, এর ৬০ ভাগ মোটাতাজা করছেন খামারিরা। বাকি ৪০ ভাগ করছেন জেলার সাধারণ কৃষকরা। গরু ব্যবসায়ী আমিনুর বলেন, প্রতিবছর ঈদের সময় নড়াইলের বিভিন্ন হাট থেকে গরু কিনে সিলেট ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতাম। এ বছর সিলেট থেকে কোনো ব্যবসায়ীই যোগাযোগ করেনি। সিলেটের কয়েকজন ব্যবসায়ীকে ফোন দিলে এ বছর গরু নেবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
নড়াইলের তিনটি উপজেলায় মোট ১১টি হাটে গরু বেচাকেনা হয়। ঈদকে সামনে রেখে আরও কয়েক জায়গায় অস্থায়ী গরুর হাট বসে। স্থানীয় গরুর মালিকরা এসব হাটে গরু বিক্রি করেন। ১১টি হাটের মধ্যে ৪টি বড় হাট হলো মাইজপাড়া, লোহাগড়া, শিয়েরবর ও পহরডাঙ্গা গরুর হাট। বর্তমানে এ পেশায় জড়িত রয়েছেন জেলার প্রায় ৪২ হাজার মানুষ। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মারুফ হাসান জানান, ১০-১২ বছর আগে নড়াইলের চাষিরা অল্প পরিসরে গরু মোটাতাজা করতেন।
বর্তমানে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি পশু মোটাতাজা করেন চাষিরা। চলতি ঈদ মৌসুমে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৩৮ হাজার গরু, ছাগল জোগান দেবেন নড়াইলের স্থানীয় কৃষক ও খামারিরা।
কলারোয়া নিউজে প্রকাশিত কোনও সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ। অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করলে কর্তৃপক্ষ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (Unauthorized use of news, image, information, etc published by kalaroa News is punishable by copyright law. Appropriate legal steps will be taken by the management against any person or body that infringes those laws.)